বাংলা সিনেমার ভবিষ্যত এবং ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট
নেটফ্লিক্স এখন সারা বিশ্বের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে জনপ্র্রিয় মাধ্যম। বাংলাদেশে এরকম ভিডিও স্ট্রিমিং বেশ কয়েকটি সাইটের প্রচলন হয়েছে— বায়োস্কোপ লাইভ, ওয়াচ মোর, সিনেস্পট। আছে ভারতীয় হইচই, আড্ডা টাইমস, জি ফাইভ। আরও আছে আইফ্লিক্স।
এরা ওয়েব সাইট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নানান বিনোদন কন্টেন্ট ফ্রি এবং নির্দিষ্ট ফির মাধ্যমে দেখিয়ে থাকে। এ ফি দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক ভিত্তিতে দিতে হয়— ৫ টাকা থেকে শুরু করে প্রায় দুই হাজার টাকা এ ফি।
বাংলাদেশের নতুন, পুরাতন সকল নির্মাতা তাদের নাটক, স্বল্প-পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা এসকল মাধ্যমে মুক্তি দিচ্ছেন। পাচ্ছেন ভালো সাড়া।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি যেখানে ৪০ মিনিটের একটা নাটকের বাজেট ঈদ ছাড়া কোনভাবে ২-৩ লাখের গন্ডি পেরোয় না, সেখানে সর্বনিম্ন বাজেটই থাকে ৩-৪ লাখ।
ওয়েব সিরিজের বাজেট নাকি ১ কোটি ৩০ লাখ পর্যন্ত উঠেছে। তাও আবার এটি দেশি কোম্পানির প্রযোজনায়, ভারতীয় না।
আরো খবর হচ্ছে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে নিয়ে ওয়েব সিনেমা হচ্ছে। পরিচালকের দাবি বাজেট সাড়ে ৬ কোটি।
এত টাকা উঠে কীভাবে? উত্তর একটাই— সাবস্ক্রিপশন ফি।
এ মুহুর্তে বায়োস্কোপের গ্রাহক সব থেকে বেশি আমাদের দেশে। তাদের কন্টেন্টগুলো প্রতি মাসে ২৫-৩০ লাখ মানুষ দেখে থাকে। তাদের বেশ কয়েকধরনের সাবস্ক্রিপশন ফির মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে ৪৯ টাকায় ৫ জিবি ভিডিও কন্টেন্ট। সে হিসেবে প্রতি মাসে তাদের মাসিক আয় সাড়ে ১২ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকা।
বায়োস্কোপ ছাড়া বাকি সব কোম্পানির জন্য গ্রাহককে মাসিক ১০০ টাকার অধিক টাকা গুণতে হয়। এমনকি স্বল্প পরিসরে কাজ করা নেটফ্লিক্সের বাংলাদেশের গ্রাহক ২ লাখ বলে জানা যায়। তাদের প্যাকেজ মাসিক ৮ ডলার থেকে শুরু করে ১২ ডলার। অর্থাৎ সাড়ে ৬শ থেকে ১৭শ টাকা।
এত টাকা মানুষ কেন সাবস্ক্রিপশন ফি দিচ্ছে? কিন্তু সিনেমা হলে মানুষ নেই কেন?
কারণ— একটাই, মানসম্মত পণ্য। হ্যাঁ, দিনশেষে বিনোদন যেমনই হোক না কেন সেটা একটা পণ্য, বাণিজ্যিক কিংবা অলাভজনক।
আর দুনিয়া এখন এগিয়েছে। আজ ঘরে বসেই টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার, ট্যাবে সারাবিশ্বের সকল বিনোদন হাতের মুঠোয়। সেখানে একজন কেন সিনেমা হল নামক গুদামে যাবে আপনার ছবি দেখতে? কিংবা সব ছবি তার দেখার উপযুক্ত!
আমাদের দেশের প্রযোজক-পরিচালকদের অধিকাংশই মনে করেন সিনেমা বানানো শেষে মুক্তি দিয়ে তাদের দায়িত্ব খতম। এখন দর্শকের নিজ দায়িত্বে দেখা এবং হল মালিকের চালানোর ‘ঠ্যাকা’; একে হিট, সুপারহিট, ব্লকবাস্টার তকমা লাগানোর! কিংবা স্পন্সররা ডেকে ডেকে টাকা দিবে, টিভি চ্যানেল রাইটস কিনবে।
আমার ব্যক্তিগত মত, পরিচালকদের উচিত ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটগুলোর দিকে মনযোগ দেওয়া। কারণ এ সাইটগুলোর দর্শক শুধু বাংলাদেশি না সারা বিশ্বের। আপনার কন্টেন্ট যখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চাহিদা তৈরি হবে তখন কোম্পানিগুলো হয়ত একটা ৪০ মিনিটের নাটকের জন্যই ৩০-৪০ লাখ টাকা অফার করবে। সিনেমার জন্য ১ থেকে দেড় কোটি। এর বাইরে তো আরও আয় থাকবে। তাতে করে প্রযোজক নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করবেন এবং পরিচালক প্যারামুক্ত ভাবে তার ভাবনা পর্দায় তুলতে পারবেন।
এত টাকা দিবে, কারণ— ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট ব্যাপারটা এখনও আমাদের দেশে নতুন। সব মিলিয়ে গ্রাহক ৪০ লাখের মত। এর ভিতর একেকটি জনপ্রিয় কন্টেন্ট ৩ লাখ থেকে ২৪ লাখ বার দেখা হয়েছে বলে কোম্পানিগুলোর সূত্রে জানা যায়। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা ১০-১৫ গুণ বাড়বে, সঠিক পরিকল্পনা মত এগোলে।
এখানে সবচেয়ে বড় সুবিধা, হল মালিকদের টাকা মেরে দেওয়া, দেরিতে দেওয়া, কম দেওয়া— এমন কোন সুযোগ নেই। কারণ, এখানে এককালীন মোটা অংকের টাকা দিয়ে কন্টেন্ট কিনে নেওয়া হয়।
আর সিনেমা হল গুদাম ঘর, টিভিতে অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন, ইউটিউবে আয় অনেক কম—এসব নিয়ে ভাবনার সময় থাকবে না। সময়ই বলে দিবে তাদের কী করতে হবে।