বাদশা দ্য ডন – বিনোদন, বিনোদন, বিনোদন
শিরোনামের দিকে তাকিয়ে কি কিছু মনে পড়ে গেল? পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছে সংলাপটি তাই না? হ্যাঁ ঠিক ই ধরেছেন। ডার্টি পিকচার সিনেমাতে সংলাপটি হিন্দিতে বলেছিলেন বিদ্যা বালান। বাদশা দ্য ডন সিনেমাটি দেখার সময় কথাটি আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পেরেছি। আসলেই একটি সিনেমাতে তিনিটি দিক থাকে – বিনোদন বিনোদন এবং বিনোদন। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত বাদশা দ্য ডন সেই বিনোদনের অপর নাম। নির্মান, অভিনয়, কাস্টিং থেকে শুরু করে পুরোপুরি প্রফেশলিজম দিয়ে ভরে থাকা একটি মুভির নাম জাজ মাল্টিমিডিয়ার যৌথ প্রযোজনার মুভি বাদশা দ্য ডন। কাহিনী, সংলাপ, কমেডি, গান, অ্যাকশন থেকে শুরু করে চমৎকার মডিফিকেশনের কমপ্লিট প্যাকেজ এর একটি সিনেমা।
●★►কাহিনী সংক্ষেপঃ
বাল্যকালের সুতীব্র ইচ্ছার দিকে সব মানুষেরই ঝোঁক থাকে। মনের সুপ্ত ইচ্ছাকে সফল পরিনতি দেওয়ার ইচ্ছা সব মানুষের আজন্ম লালিত স্বপ্ন হয়ে থাকে। যেকোন মূল্যে স্বপ্নের শিখড়ে আরোহণ করে নিজেকে জয়ী হিসাবে দেখতে চায় প্রতিটি মানুষ। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার হবার কথা আমরা কিশোর কিশোরীদের কাছ থেকে শুনে থাকি, কিন্তু কারো স্বপ্ন যদি হয়ে থাকে ডন হবার কেমন হয় সেটা। এক ছোট বালকের ডন হবার স্বপ্ন এবং তার সেই স্বপ্নের সিঁড়িতে এক পা দু পা করে এগিয়ে যাবার কাহিনী উঠে এসেছে বাদশা দ্য ডন মুভিতে। যে বড় হয়ে হতে চায় অমিতাভ বচ্চনের ডন মুভির মত ডন। সকল কাজের আগে যাকে গুরু হিসাবে ভাবে যে। বাদশা দ্য ডনে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কোলকাতার সুপারস্টার জিৎ।
সিনেমার কাহিনী নিয়ে তো বেশ কথা হল, এখন সিনেমার শিরা উপশিরা এবং হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠে অভিযান চালানো যাক। দেখি সেখানে কোন বাঁধা পাওয়া যায় কি না? আচ্ছা আগেই বাঁধা কেন দেখছি একটু বাঁধাহীন পথের সন্ধান করে আসি না চলুন।
▬▬▬▬▬ ●★►বাঁধাহীন ভালোবাসার রসদ◄★● ▬▬▬▬▬▬
বাদশা দ্য ডন মুভিতে এমন কিছু রসদ আপনি পাবেন যার জন্য সিনেমটিকে আপনি না চাইলেও বাঁধাহীন ভাবে ভালোবাসবেন। কি রয়েছে এমন যার কারনে মানুষ মুভিটি দেখবেই? আগেই বলেছিলাম কিন্তু বিনোদনের কথা, তারপর ও ভাললাগার পোষ্ট মর্টেম টা করেই ফেলি চলুন-
★ জিৎ এর অভিনয় নিয়ে কোন কথা না বলাই ভালো, তিনি বেশ শক্তিশালী একজন অভিনেতা। মুভিতে তার ডায়গল থ্রো এবং এক্সপ্রেশন অসাধারণ। নাচে একটু দূর্বল থাকলেও এবার সেই দূর্বলতা তিনি বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠেছেন।
★ মুভির গান ও লোকেশন এক কথায় দূর্দান্ত। অর্ধেক সিনেমার শুটিং করা হয়েছে বিদেশে। গানগুলোর ছিল প্রপার প্লেসমেন্ট। কি করে একটি মুভিতে ঈদের গান সুন্দর করে প্লেস করতে হয় তা বাদশা সিনেমাতে বোঝা গিয়েছে। রোমান্সের সময় রোমান্টিক গান দিয়ে পরিবেশটাকে বেশ করে ফুটিয়ে তুলেছে।
★ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নিয়ে আময়াদের বেশি সমস্যা হয় কিন্তু বাদশাতে ব্যাকগ্রাউন্ডের বেশিরভাগ মিউজিক ছিল গানের ইন্ট্রো দিয়ে করা। একটা গান শুরুর আগ পর্যন্ত ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসাবে সে গানের ইন্ট্রো ব্যবহার করেছে। সব মুভিতে এমন করা হলে মিউজিক নকল করার প্রয়োজন পড়ে বলে মনে করি না।
★ বানিজ্যিক সিনেমার নায়িকা হিসাবে নুসরাত ফারিয়া অসাধারণ। গ্ল্যামারাস গার্লস হিসাবে যা দরকার তার সবই আছে তার মাঝে। সাথে রয়েছে নাচের পারদর্শিতা। ফারিয়ার সাথে প্রায় সমান ভাবে স্ক্রিন শেয়ার করেছে দক্ষিণের অভিনেত্রী শ্রদ্ধা দাশ। শান্ত এবং পরিপাটি অভিনয় দিয়ে নজর কেড়েছেন সবার। সাথে ন্যচারাল বিউটি তো আছেই।
★ কমেডিতে বিশ্বনাথ আর জিৎ দারুণভাবে একে অপর করে সাপোর্ট করেছে। বিশ্বনাথের “আমি গ্রামে যাবো, আধ ঘন্টা পর লোকাল ট্রেন” ডায়লগ বলার এক্সপ্রেশন দেখেই আপনি হাসবেন।
★ এছাড়া ক্যামিও হিসাবে সুষমা সরকার, পূজা এবং অন্য চরিত্রে ফেরদৌস ও রজতাভ দত্ত নিজেদের নামের সুবিচার করেছেন ধারাবাহিক ভাবেই। এছাড়া বাংলাদেশের চলিতরীতি অনুসরণ করে সংলাপ সিনেমার বিনোদনে একপ্রকার নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
★পরিচালনা এবং এডিটিং এর কথা বলতে গেলে বলা লাগে পরিপূর্ণ রিমেক করতে যা যা লাগে তার সব ধরনের চেষ্টা করেছেন বাবা যাদব। অ্যাকশন দৃশ্য থেকে শুরু করে কাহিনীর বিন্যাস সব দিকেই ছিল প্রফেশলিজমের ছাপ। এডিটিং এর কথা আলাদা করে বলা লাগে কারণ যিনি এডিটিং করেছেন তিনি চোখে ধাঁধাঁ লাগিয়ে দেবার মত এডিটিং করেছে। আপনি খেয়াল না করলে বুঝতেই পারবেন না কি করে এডিট করে তেলুগু মুভির দৃশ্য কেটে এনে জোড়া লাগিয়েছে। হ্যাটস অফ টু দ্যাট ম্যান।
▬▬▬▬▬ ●★►বাঁধাহীন ভালোবাসাতে ব্যঘাত◄★● ▬▬▬▬▬▬
★ সিনেমাতে আসল ভিলেনের সাথে ফোন যোগাযোগের দৃশ্য এবং প্রথম এন্ট্রি পুরো তেলুগু মুভি থেকে কেটে এনে এডিট করে দিয়েছে। যাস্ট ভাষাটা ডাবিং করা। এতো বিগ বাজেটের মুভিতে কেন এটা করল আমি ঠিক বুঝলাম না। যদিও অফিসিয়াল রিমেক তারপর ও দরকার ছিল না।
★ এয়ারপোর্টে বিনা বাঁধায় অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়া যায় এটা কেমন জানি লেগেছে। পুরো বাস্তবতা বিরোধী এক দৃশ্য।
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
উপরের বিষয়গুলো যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে বাদশা দ্য ডন পরিপূর্ণ পয়সা উসুল মুভি। রিমেক করা হলে এমন কমপ্যাক্ট মাসালা মুভি থেকেই করা উচিত। যা দর্শক হাসাবে, থ্রিলিং এ রাখবে সাথে বিনোদন দিবে। আমাদের অধিকাংশ দর্শক চায় নির্মল বিনোদন। সেদিক থেকে বাদশা পুরোপুরি সফল। মুভিটি দেখতে চলে যান, কথা দিলাম ১৭০ মিনিট আপনি পুরো বিনোদনে থাকবেন কারণ – “সব বাদশা একবার কিন্তু ডন বাদশা বারবার।“