বাপ্পী আর ‘সুপার রুনা’
সুরকার ও গায়ক বাপ্পী লাহিড়ীর সঙ্গে উপমহাদেশের আরেক কিংবদন্তি গায়িকা রুনা লায়লার সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্ব ও সম্মানের। ১৯৭৯ সালে প্রকাশ কাপুর পরিচালিত বলিউডের ‘জান-এ-বাহার’ সিনেমাতে বাপ্পীর সুর-সংগীতে ‘মার গায়ো রে রসগোল্লা খিলাই কে মার গায়ো রে’ গানে ভারতের আরেক কিংবদন্তি গায়ক মোহাম্মদ রফি ও আনন্দ কুমারের সঙ্গে কণ্ঠ দেন রুনা।
এরপর ১৯৮২ সালে বাপ্পি লাহিড়ীর সুরে রুনা লায়লা রিলিজ দেন তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা এবং জনপ্রিয় অ্যালবাম ‘সুপার রুনা’। পপ ঘরানার এই অ্যালবামটির রেকর্ডিং হয়েছিলো লন্ডনের বিখ্যাত অ্যাবি রোড স্টুডিওতে। ‘সুপা রুনা’ অ্যালবামটি রিলিজের প্রথম দিনেই ১ লাখ কপি বিক্রি হয় যা সেই সময়ে দাড়িয়ে একটি অনন্য রেকর্ড। এই যুগান্তকারী ঘটনার জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইএমআই মিউজিক উপহার হিসেবে গোল্ডেন ডিস্ক অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করেছিলো রুনা লায়লাকে।
‘সুপার রুনা’ অ্যালবামে কাজ করা প্রসঙ্গে রুনা লায়লা বলেন, ‘১৯৮২ সালে এই পপ অ্যালবামটির রেকর্ডিং হয় লন্ডনের অ্যাবি রোড স্টুডিওতে। একসময়ের বিখ্যাত ব্যান্ড বিটলসের সদস্যরা সেখানেই তাঁদের গান রেকর্ড করতেন। বাপ্পিজির সঙ্গে সেই স্টুডিওতে রেকর্ডিংয়ের স্মৃতি চিরকাল মনে পড়বে। “সুপার রুনা” অ্যালবামটি প্রকাশের দিনেই এর ১ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল। এ জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইএমআই মিউজিক আমাকে উপহার হিসেবে গোল্ডেন ডিস্ক অ্যাওয়ার্ড দিয়েছিল।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বাপ্পী লাহিড়ী
১৯৮৪ সালে বাপ্পী লাহিড়ীর সুর-সংগীতে আরেকটি হিন্দি সিনেমায় গান গেয়েছিলেন রুনা লায়লা। দাসারি নারায়ণ রাও পরিচালিত ‘ইয়াদগার’ সিনেমাতে বাপ্পি লাহিড়ীর সুরে ‘অ্যায় দিলওয়ালে আও’ গানে কন্ঠ দিয়েছিলেন রুনা লায়লা। সেলুলয়েডে এই গানে অভিনয় করেন বলিউডের সেই সময়ের জনপ্রিয় দুই তারকা কমল হাসান ও পুনম ধীলন। এই গানটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় সেইসময়।
এরপরে বিভিন্ন প্রোগ্রাম তো বটেই এমনকি পারিবারিক নানা অনুষ্ঠানেও বাপ্পী লাহিড়ীর সাথে দেখা হয়েছে রুনা লায়লার। আর তার চিরতরে চলে যাওয়া তাই অনেকের মতো আমাদের দেশের এই শিল্পীর জন্যও বেশ কষ্ট ও হতাশার। জানান, তাদের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল সাড়ে তিন বছর আগে।
২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর নিরিবিলিভাবে জন্মদিন উদ্যাপন করতে চেয়েছিলেন রুনা লায়লা। তাই জন্মদিনের আগেই কলকাতায় যান আলমগীর ও রুনা লায়লা। কলকাতার যে হোটেলে রুনা লায়লা উঠেছিলেন, সেই হোটেলেই স্ত্রীসহ ওঠেন বাপ্পী। একই হোটেলে রুনা লায়লার থাকার খবর জানতে পেরে ফোনে কথা বলেন বাপ্পী লাহিড়ী। তারপর দুজন দেখা করেন। ফুল আর কেক নিয়ে রুনার কক্ষে হাজির হন তারা। সেই স্মৃতি মনে করে রুনা লায়লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেবার জন্মদিন কাটাতে আলমগীর সাহেবকে নিয়ে কলকাতায় গিয়েছিলাম। আমরা উঠেছিলাম গ্র্যান্ড ওবেরয় হোটেলে। তখন একই হোটেলে সস্ত্রীক ছিলেন বাপ্পীজি। আমি আছি জেনে তিনি প্রথমে ফোনে শুভেচ্ছা জানান। তারপর ফুল ও কেক নিয়ে আমাদের রুমে আসেন স্ত্রীসহ। চারজন মিলে কেক কেটেছি। জন্মদিনে তাঁকে এভাবে পেয়ে যাব, ভাবিনি। ঘটনাটা ছিল আমার জন্য চমক। কেক কাটার পর আমরা আড্ডা দিয়েছি। “সুপান রুনা”র রেকর্ডিং নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছিলাম। সেটাই ছিল আমাদের শেষ দেখা।’
এভাবে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাপ্পি লাহিড়ীর প্রয়াণে তাকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি কিছু ছবিও ভক্তদের সাথে শেয়ার করেছেন এই গুণী শিল্পী।