বাহারি ফটোশুটের পাশাপাশি কান থেকে নতুন ছবির ঘোষণা ভাবনার
বিশ্ব চলচ্চিত্রকে দেখতে নিজ উদ্যোগে কান চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির হয়েছেন আশনা হাবিব ভাবনা। সেখানে তার করা বাহারি ফটোশুটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোচনায় রয়েছে। এবার ফ্রান্সের সমুদ্রশহরটিতে বাংলাদেশি এক নির্মাতার ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন, নাম ‘জেনুবিয়া’। পরিচালক জাফর ফিরোজ আর এই ছবির নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে আছেন কিয়াও লি, যিনি একজন ব্রিটিশ চায়নিজ প্রযোজক। একই সঙ্গে তিনি ইউনেসকো ফিল্ম সিটির সঙ্গেও যুক্ত আছেন।
জাফর ফিরোজ ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করে ১২ বছর আগে মালয়েশিয়া যান। সেখানকার লিমকক উইং ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি থেকে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পিএইচডি করছেন। এর আগে চায়নিজ ‘রিবর্ণ’ নামের একটি চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে থাকলেও এটি হতে যাচ্ছে জাফরের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, যেটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকছেন ভাবনা। বাংলা, ইংরেজি ও চায়নিজ ভাষায় ছবিটি তৈরি হবে বলে জানালেন পরিচালক। তিন দেশে ছবিটি মুক্তির পরিকল্পনাও রয়েছে। দেশে থাকতে তিনি ‘দূরবীণ’ নামে ডিজিটাল ফর্মেটে শিশুতোষ একটি ছবি নির্মাণ করেন। যা অনেকটাই আমির খানের বলিউড সিনেমা ‘তারে জমিন পার’-এর অনুকরণ।
‘জেনুবিয়া’ ছবি প্রসঙ্গে জাফর ফিরোজ প্রথম আলোকে বললেন, ‘এ বছরের নভেম্বরে মালয়েশিয়াতে আমরা একটি চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করছি। তারই মার্কেটিংয়ের জন্য কান উৎসবে যাই। “জেনুবিয়া” ছবি নিয়েও পরিকল্পনা চলছিল। কান উৎসবে যাওয়ার পর শুনলাম, বাংলাদেশ থেকে ভাবনা এসেছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর দেখা করে কথা বললাম। গল্প শোনালাম। গল্প শুনে তিনি রাজি হলেন। আমরাও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম, একসঙ্গে কাজটি করছি।’
এদিকে সংবাদমাধ্যমটিকে ভাবনা বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, এই উৎসবে আমি একাই আসছি। আসার সময় খুব ভয় পাচ্ছিলাম, একা একা সব করতে পারব কি না। কিন্তু আমার পরিবার, আমার বন্ধু ও আমার খুব কাছের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন। বিশেষ করে আমার মা–বাবা, বোন অদিতি ও কোনাল আপু (সংগীতশিল্পী কোনাল)—এ চারজন মানুষ আমাকে শক্তি, সাহস ও সবচেয়ে বেশি প্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁরা বারবার বলেছেন, ভয়কে আমি জয় করতে পারব। তাই আমি এখানে এসে একা সবকিছু করলাম। ছবিতেও সাইন করলাম। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে এটাই তো সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
কথায় কথায় ভাবনা বললেন, ‘একজন অভিনয়শিল্পীর চাওয়া প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন চরিত্রে দেখার। আমি এমন একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলাম, যা সত্যিই গর্ব করার মতো। শর্তের কারণে অনেক কিছু বিস্তারিত বলতে পারছি না। কিন্তু আমাকে যে গল্পটা শোনানো হয়েছে, খুবই চমৎকার। যেদিন আমি সবার সঙ্গে গল্পটা ভাগাভাগি করতে পারব, সেদিন সবাই বুঝবে অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমি কতটা সৌভাগ্যবান। পরিচালক জানিয়েছেন, ছবিটা শুধু বাংলাদেশে নয়, চীন ও মালয়েশিয়াতেও মুক্তি পাবে। অনেকগুলো ভাষায় ডাবিংও হবে। প্রথমবার এসে তাই এমন একটা সিনেমায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে যাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আল্লাহ আমাকে অনেক ভালোবাসেন, তাই উপহারটা আমাকে দিয়েছেন। তা ছাড়া এটা কোনোভাবে সম্ভব হতো না। আমার সঙ্গে কান উৎসবে আসার পর যা কিছু ঘটছে, সবই মিরাক্যালি ঘটছে। নিঃসন্দেহে আমি বিশ্বাস করি যে এটা মালিকের আশীর্বাদ, তাই এমনটি ঘটছে। সব মিলিয়ে তাই আমার মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’
জাফর ফিরোজ আগামী তিন মাসের মধ্যে ‘জেনুবিয়া’র কাজ শুরু করবেন। আর পুরো শুটিং হবে মালয়েশিয়াতে। অন্যান্য অভিনয়শিল্পীও এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে।