Select Page

বিজয়ীদের হাতে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯’

বিজয়ীদের হাতে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯’

২০১৯ সালের জন্য সিনেমার সবচেয়ে সম্মানজনক পদক ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ দেওয়া হবে আজ। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির প্রয়াসগুলো যেন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। আমাদের যে মহান অর্জন; লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি আমাদের সেই বিজয়ের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আমাদের চেতনা, আমাদের যে আদর্শ সেগুলো চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত হওয়া একান্ত দরকার।’

চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের এইটুকু অনুরোধ করব যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর বিকৃত করা হয়েছে। কাজেই সেই ইতিহাসটা যেন সবাই জানে, আর আমরা তো বীরের জাতি, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই আমাদের সেই বিজয়ের ইতিহাসটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন মনে রাখে, সে ধরনের চলচ্চিত্র আরও নির্মাণ হওয়া দরকার।’

‘কারণ আমি জানি, আমি একজন রাজনীতিবিদ যত বক্তৃতা দিয়ে কথা বলি না কেন, একটি নাটক বা একটি সিনেমা বা একটা গানের মধ্য দিয়ে বা কবিতার মধ্য দিয়ে অনেক কথা বলা যায়। এগুলো নিয়ে মানুষের অন্তরে প্রবেশ করা যায়, মনের গহিনে প্রবেশ করা যায়। কাজেই সে জন্য একটা আবেদন কিন্তু রয়েছে।’

সিনেমা শিল্প সংশ্লিষ্টরা করোনাকালে জনসচেতনতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে তাই তাদের প্রতিও ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এ শিল্প নষ্ট হয়ে যাক, তা আমরা কখনও চাই না। আমি জানি, টেলিভিশনের যুগ আসার পরে সিনেমা শিল্পটা একটু থমকে গেছে। এখন কিন্তু আবার সিনেমার যুগটা ফিরে এসেছে। আপনারা জানেন যে, শুধু আামদের দেশে না, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও মানুষ কিন্তু এখন সিনেমা দেখে। হয়ত হলে যায় না, ঘরে বসে দেখে। কিন্তু হলেও আমাদের দর্শক টানতে হবে। মানুষ যেন সিনেমা হলে আসে তার ব্যবস্থা করতে হবে। সিনেমাগুলো সেভাবেই তৈরি করতে হবে যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে দেখতে পায়।’

‘এ ছাড়া আমাদের ছোট শিশুদের জন্য সিনেমা তৈরি করা একান্তভাবে প্রয়োজন’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর মধ্যে দিয়ে একটা শিশু তার জীবনটাকে দেখতে পারবে, জীবনটাকে তৈরি করতে পারবে, বড় হতে পারবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা, তার মধ্যে দিয়ে একটা শিক্ষণীয় বিষয়গুলো প্রতিফলিত করা, এটাও কিন্তু আমাদের করতে হবে।’ কাজেই অনেক দায়িত্ব আপনাদের। সেই দায়িত্বটাও পালন করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

পাশাপাশি চলচ্চিত্র শিল্পকে আধুনিক করার জন্য যা যা দরকার সেটা সরকারের পক্ষ থেকে আমরা করছি এবং করে যাব বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো আছি সবসময় আপনাদের পাশে। কারণ আমার বাবার হাতে গড়া এফডিসি। সিনেমা তৈরি করার যে উৎসাহটা তিনিই দিয়েছিলেন। কাজেই সেদিকে মাথায় রেখে আমি সবসময় কাজ করি। আর আমাদের যারা শিল্পী তাদের সবসময় আলাদা একটা সম্মান আমাদের সমাজে আছে। তারপরও আমি আলোচনা করে দেখব। আপনাদের যারা আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন, তাদের সম্মাননাটা যেন সবসময় তারা পান, সে ব্যবস্থা করার জন্য যা করণীয় আমরা তা করব।’

যারা পুরস্কারপ্রাপ্ত তারা তো সবসময় সম্মান পান সেটিও আপনারা পাবেন বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী সবার সুস্থতা ও শুভ কামনা জানিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয়ে জীবনযাপনের আহ্বান জানান।

চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে শিল্পটাকে আরও সহযোগিতা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণ শুধু শিল্পী কলাকৌশলী না, আমাদের দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সিনেমা শিল্প অনেক অবদান রাখতে পারে। সেইভাবেই আপনাদের আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানুষকে আরও উদ্বুদ্ধ করা, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন আমাদের ইতিহাস জানতে পারে, বিজয়ের ইতিহাস জানতে পারে এবং মানুষ যেন ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আপনারা করবেন।’

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবটা যদি কম থাকে তাহলে আগামীতে দেখা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তরুণ সমাজ খুব এগিয়ে এসেছে, সেটি আমাদের জন্য সত্যি খুব আনন্দের বিষয়। শিল্পজগত সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে। আমরা তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি। কাজেই আজ আছি, কাল নেই। কিন্তু আমাদের তরুণ সমাজ যে সিনেমা শিল্পের দিকে তাদের আগ্রহ বেড়েছে, তারা যে এগিয়ে আসছে, এটি আমাদের জন্য একটি ভালো লক্ষণ।’

এবার আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন কোহিনূর আক্তার সুচন্দা ও মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা।

এ সময় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ও আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্তদের জন্য বিশেষ স্বীকৃতির দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা, প্রযোজক ও চিত্রনায়ক সোহেল রানা।

তিনি বলেন, ‘আজীবন সম্মাননা পেয়ে আমার মিশ্র অনুভূতি হয়েছে। এক ধরনের আনন্দ-অশ্রুও হয়েছে। আবার মনে হয়েছে এরপর আমাকে আর পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হবে না।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘প্রতিবছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তদের ভিআইপি ঘোষণার দাবি জানাই। একই সঙ্গে অন্যান্য ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তদের সিআইপি ঘোষণা করা দরকার। দুই বছরের জন্য হলেও। চলচ্চিত্রের সব ধরনের শিল্পী, পরিচালক ও কুশলীদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি। আপনি যদি নির্দেশ প্রদান করেন, আমি মনে করি বিএফডিসির মহাব্যবস্থাপকের মাধ্যমে এটি করা হলে সাধারণ কোনও শিল্পী, কর্মচারী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত না খেয়ে থাকবেন না।’

মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩ বছর পর মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা প্রযোজনা করেছিলেন ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্র। যে ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সোহেল রানা উল্লেখ করেন, এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু তাকে আদেশ দিয়েছেন, চলচ্চিত্রের জন্য এভাবেই কাজ করে যেতে। তার জন্যই নিজের এই প্রাপ্তি বলে মনে করেন সোহেল রানা। তাই বঙ্গবন্ধুকে তিনি উৎসর্গ করেন জীবনের সেরা পুরস্কার আজীবন সম্মাননা।

অন্যদিকে সুচন্দার পুরস্কারটি গ্রহণ করেন তার মেয়ে লিসা মালিক।

এবার ২৫টি ক্যাটাগরিতে ৩১টি পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

চলচ্চিত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে সিনেমা হল নির্মাণে সরকার এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, এ তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে বন্ধ সিনেমা হলগুলো চালু করা যাবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। অনুষ্ঠানের শুরুতে তথ্যসচিব খাজা মিয়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন।


Leave a reply