বিদ্রোহী: বস্তাপচা শাকিবীয় সিনেমা এবং আমার ভুল ধারণা
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: যারা কলিজাতে শাকিব খানকে লালন করে শুধুমাত্র তাদের জন্য এই সিনেমা।
‘বিদ্রাহী’ সিনেমাটি দেখতে বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই রবি তেজা’র নাম মাথায় চলে আসলো। যেহেতু একাধিকবার দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাটি দেখা, তাই গল্পের চমক আর আকর্ষণ করেনি। কাজেই সময় কাটলো উপস্থিত দর্শকের রি-অ্যাকশন অবলোকনে।
সিনেমাটি দেখতে বসে সবার আগে আবিস্কার করলাম সিনেমার আসল দর্শকদের। তারা আমাদের মতো এত ফ্রি থাকে না। তারা বাইরের সিনেমাও সেভাবে দেখে না। ফলে সিনেমায় যখন যে টুইস্ট এসেছে সেটাই তারা উপভোগ করেছে। তারা তালি দিয়েছে, তারা হেসেছে। শাকিবের সিনেমার চিরচেনা মুখগুলো নানাভাবে পর্দায় এসেছে। আর দর্শকও তাদের চিৎকারে বরণ করেছে।
কী আছে সিনেমাতে? দূর্দান্ত কমেডি-অ্যাকশন-থ্রিলারের শাকিবীয় তথা দুর্বল উপস্থাপন। মনে না রাখার মতো কতগুলো গান। বিপাশার ঝুলিতে আরো একটা বস্তাপচা আইটেম গান যুক্ত হওয়া। বুবলিকে দিয়ে জোর করে অভিনয় করানো। শাকিবের হিরোইজম। সর্বশেষ নতুন এক নায়িকার উপস্থিতি। যাকে ফিল্ম পলিটিক্সের মাধ্যমে প্রচারণায় সামনে আসতে দেয়া হয়নি বলেই মনে করি। বুবলি আর সেই মেয়েটি পর্দার পারফরমেন্স এবং উপস্থিতিতে সমানে সমান ছিল। বাংলাদেশি সিনেমার দাপুটে অভিনেতাদের কেউ কেউ চলনসই অভিনয় করেছেন। তবে আহামরি কিছু বলা যায় না।
সিনেমাটি বাণিজ্যিকভাবে পিছিয়ে থাকার একটা বড় কারণ শেষ মূহূর্তের দৃশ্যে আদালতে শাকিবের বক্তব্য। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটা উচ্চারিত হওয়ায় শাকিবের দর্শকরা হতাশ। কারণ বেশিরভাগ শাকিব ভক্ত মানসিকভাবে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির ভাবধারা লালন করে। তাই তারা হতাশ হয়েছে বিনোদনের মধ্যে এই নামটি উচ্চারণ করে নৈতিকতার কথা বলায়। ফলে শাকিব ভক্তদের যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক, সেই নেটওয়ার্ক সিনেমাটির বিপক্ষে অঘোষিতভাবে অবস্থান নিয়েছে। নতুবা সিনেমাটি আমাদের কাছে ভালো না লাগলেও মার্কেটে আগুন লাগানোর মতো আয় এবং কাটতি দেখাতে পারতো। শাকিব ভক্তদের সেই ক্ষমতাটা আছে।
এই যে উপরে এতগুলো নেগেটিভ কথা বললাম, তাতে কিন্তু সিনেমাটির কিছুই যায় আসে না। কারণ এই সিনেমাটির আসল দর্শক সিনেমাটিকে গ্রহণ করেছে। তারা উপভোগ করেছে। এই যে টার্গেট দর্শককে সন্তুষ্ট করা, এটাই বিএফডিসির প্রকৃত নির্মাতাদের ম্যাজিক। যাদের আমরা এলিটভাব ধরা লোকেরা বস্তাপচা ডিরেক্টর বলে থাকি। আর এই ম্যাজিকে শাহীন সুমন উৎরে গেছেন। নির্মাতা জানেন, কাদের জন্য সিনেমাটি বানিয়েছেন এবং তাদের মন ভরাতে কী চাই। আর এই একটা পয়েন্টে এখনকার তেলমাখা পোস্ট/কমেন্ট না পেলে মাইন্ড খাওয়া নির্মাতার পিছিয়ে আছে।
(এ লেখায় রিভিউদাতার স্বাধীন মতামত প্রতিফলিত হয়েছে। এখানে আলোচনার স্বাধীনতার বাইরে বিএমডিবি’র আনুষ্ঠানিক কোনো অবস্থান নেই)