বুক পকেটের গল্প, এভাবেও ফিরে আসা যায়’সহ ২০২৪ সালের পছন্দের দশ নাটক
সংখ্যার তুলনায় মান নিয়ে বরাবরের মতো প্রশ্ন থাকলেও টেলিভিশনের আলোচিত অনুষ্ঠানের মধ্যে ২০২৪ সালে শীর্ষে ছিল নাটক। জনপ্রিয় ও পরিচিত তারকার পাশাপাশি নতুনরাও বেশি আলো ছড়াচ্ছেন। এছাড়া ইউটিউব নির্ভর নাটক নিয়ে ছিল আলোচনা। সেখান থেকে আমার পছন্দের দশ নাটক—
দশ. ইতিবৃত্ত: নেশার জগত কীভাবে একজন তরুণকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়, তা নিয়ে এ নাটকের গল্প। নেশাগ্রস্ত তরুণের চরিত্রে ইয়াশ রোহানের অভিনয় এ নাটকের অন্যতম সেরা সম্পদ, মায়ের চরিত্রে সাবেরী আলমও খুব ভালো করেছেন। নায়িকা ছিলেন ভারতের দর্শনা বণিক, যদিও তার সংলাপ খুব কানে লেগেছে। নাসির খানের চিত্রনাট্যে পরিচালক হচ্ছেন রাফাত মজুমদার রিংকু।
নয়. হাজত: ভিকি জাহেদের পুনর্জন্ম সিরিজের প্রিক্যুয়েল। মূলত রাফসানের জন্ম ও তার পিতার জীবন নিয়ে এই নাটকের গল্প। তৌসিফ মাহবুব, রওনক হাসান, রাশেদ অপুরা বেশ ভালো করেছেন, শেষের চমকটার জন্য বোধহয় কারোরই প্রত্যাশিত ছিল না।
আট. শেষ কিছুদিন: ইয়াশ রোহান-তটিনী জুটির নাটক। সম্পর্কের বিচ্ছেদের বহুদিন পর প্রাক্তনের কঠিন অসুস্থতার সময় একসাথে থাকার গল্প নিয়ে এ নাটক। দুজনকে জুটি হিসেবে যেমন মানায় ভালো, তেমনি অভিনয়েও ভালো। অপূর্ণ রুবেলের চিত্রনাট্যে ইমরাউল রাফাত ছিলেন নির্মাতা।
সাত. অভিশাপ: তানিম রহমান অংশুর পরিচালিত হরর নাটক। টেলিভিশনে স্বল্প বাজেটের মধ্যেও হরর গল্পে আগ্রহ ধরে রাখাটাই সবচেয়ে বড় বিষয়, গল্পটাও খুব ভালো ছিল। তৌসিফ-ইয়াশ দুজনেই পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন, সমসাময়িক দুজন এক নাটকে অভিনয় করছেন ব্যাপারটাও সুন্দর, নায়িকা ছিলেন আইশা খান।
ছয়. বিদায় বসন্তে মধাহ্ন রোদে: গল্পহীন নির্মাতাদের যুগে মিশুক মিঠু নামের একজন নবীন নির্মাতার আবির্ভাব ঘটেছে টেলিভিশন নাটকে। যদিও চিত্রনাট্য আরো সাজানো যেত, তবে শেষ পর্যন্ত তৃপ্তি এনে দেয়। তৌসিফ মাহবুব ও ইন্তেখাব দিনার দারুণ, তবে শহিদুল আলম সাচ্চুর অংশটুকু বেশ অগোছালো লেগেছে।
পাঁচ. শেষমেশ: কাজল আরেফিন অমি পছন্দের নির্মাতা নন, এ নাটকটাও যে দুর্দান্ত কিছু তা নয়,গল্পটাও পরিচিত। তবে দেখতে ভালোই লেগেছে। যদিও অমি সাহের নিজস্ব কিছু সিগনেচারের থাকার কারনে স্থুলতা বাড়লেও উপভোগ্য ছিল। বিশেষ করে মনিরা মিঠুর অভিনয় বেশ ভালো লেগেছে। এছাড়া পলাশ, পারসা, পাভেলসহ বাকিরাও মন্দ নন।
চার. ফুল হাতা শার্ট: বাবার শাসনে বড় হওয়া একটি ছেলে কীভাবে প্রেমের কারণে নিজেকে চেনা শুরু করে,পাশাপাশি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তা নিয়েই মিজানুর রহমান আরিয়ানের এ নাটক। ইয়াশ রোহান অসাধারণ, সঙ্গে নায়িকা সাদিয়া আয়মান। গানগুলো বেশ সুন্দর।
তিন. তিথিডোর: ত্রিশের কোটা পেরোনো একজন হতাশাগ্রস্ত নারীর দুর্বিষহ জীবনের নানান অধ্যায় নিয়ে ভিকি জাহেদের এ নাটক। জাহান সুলতানার চিত্রনাট্যে তিথি চরিত্রে এ দেশের অনেক নারীই নিজেকে খুঁজে পাবেন। মেহজাবীনের দুর্দান্ত অভিনয় এ নাটককে আরো সমৃদ্ধ করেছে। মাত্র একটি নাটক দিয়েই বছরের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হবার যোগ্যতা রেখেছেন এ অভিনেত্রী।
দুই. এভাবেও ফিরে আসা যায়: আশিকুর রহমান খুব কম নাটক পরিচালনা করেন, তবে যেটা নির্মাণ করেন খুব যত্ন নিয়ে করেন। কাজী হাসিবুল আলমের গল্পে এক রাতে পার্কে বিভিন্ন পেশার পাঁচজন মানুষের একত্রিত করে তাদের জীবনের চাওয়া-পাওয়ার হিসেব মিলিয়েছেন। গায়ক আহমেদ হাসান সানির উপস্থিতি এ নাটককে আরো সুন্দর করেছে। এছাড়া তারিক আনাম নিজের জায়গায় যথাযথ। সোহেল নামের একজন অভিনেতা আছেন, তিনিও ভালো করেছেন। পলাশ-পারসা নিজেদের চরিত্রে ভালো, তবে তাদের একত্রিত অংশগুলো অপ্রয়োজনীয় লেগেছে।
এক. বুক পকেটের গল্প: বহুদিন পর বাংলা নাটক এইরকম জনপ্রিয় নাটক পেয়েছে। তিন জুটির তিন গল্পকে শেষ বিন্দুতে একত্রিত করার যে প্রয়াস জাহিদ প্রীতম দেখিয়েছেন তা প্রশংসাযোগ্য, সংলাপও ছিল আকর্ষণীয়। মীর রাব্বি খুব জনপ্রিয় হয়েছেন ঠিক, তবে ব্যক্তিগতভাবে ভালো লেগেছে তানভীর-আইশা খানের অংশটুকু। প্রিয়ন্তী উর্বি, শাশ্বত বেশ ভালো।