
বেশির ভাগ শুটিং শেষ হয়েও অনিশ্চিত ‘মাসুদ রানা’
বাংলাদেশের জেমস বন্ড হিসেবে পরিচিত হলেও কাজী আনোয়ার হোসেনের স্পাই চরিত্র ‘মাসুদ রানা’ বড়পর্দায় ততটা সাফল্য পেল না। যদিও ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া সোহেল রানার ‘মাসুদ রানা’ সেই সময়ের ঢালিউড থেকে এগিয়ে ছিল। কিন্তু সব মিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রির ব্যর্থতাকেই তুলে ধরে আইকনিক এ চরিত্র। জাজ মাল্টিমিডিয়ার হাতে এ সিরিজ থেকে সিনেমা তৈরির স্বত্ত্ব থাকলেও ‘এমআর নাইন: ডু অর ডাই’-এর ভরাডুবির পর কোনো চমক দেখাতে পারেনি তারা।
‘ডু অর ডাই’-এর সমান্তরালে ২০২০ সালে ‘মাসুদ রানা’ নামের আরেকটি ছবির ঘোষণা দেয় জাজ মাল্টিমিডিয়া। যেখানে সৈকত নাসিরের পরিচালনায় নাম ভূমিকায় আছেন রাসেল রানা, যিনি আবার এ সিনেমাকে কেন্দ্র করে আয়োজিত ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতা থেকে উঠে আসেন। তার বিপরীতে সোহানা চরিত্রে অভিনয় করেছেন পূজা চেরি।

প্রথম আলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, বছরের পর বছর যায়, ‘মাসুদ রানা’ ছবির শুটিং আর শেষ হয় না। গত বছরের এপ্রিলে ছবিটির সর্বশেষ শুটিং হয়। এরপর আর শুটিংয়ের কোনো খবর দিতে পারেনি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পরিচালক সৈকত নাসির জানালেন, ‘মাসুদ রানা’ অনিশ্চিত। এর বাকি অংশের শুটিং শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না।
সৈকত নাসির বললেন, ‘আমাদের সব মিলিয়ে মাত্র ৬ দিনের শুটিং বাকি আছে। এর মধ্যে একটি গান আর কয়েকটি দৃশ্য। কিন্তু গত বছর থেকে কয়েকবার শুটিংয়ের পরিকল্পনা করা হয়। এরপর শুটিংয়ের আগমুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়। আমি যত দূর জানতে পেরেছি, ফাইন্যান্সিয়াল ইস্যুর কারণে ছবিটির শুটিং শেষ করা যাচ্ছে না। অর্থাভাবে আমরা কাজ আর করতে পারছি না।’
এ নির্মাতা আরো বললেন, ‘সত্যি বলতে, আমি ছবিটা নিয়ে বিরক্ত হয়ে আছি। এত দিন কোনো ছবি নিয়ে পড়ে থাকার তো মানে হয় না। এত লম্বা সময় ধরে শুটিং চলায় ছবির অনেক দৃশ্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখাও সম্ভব নয়। আমি বিরক্ত হয়ে পড়েছি। নিজেও নতুন কাজে মনোযোগী হয়েছি। আগামী বছরের ঈদুল আজহার ছবির শুটিংয়ের পরিকল্পনা শুরু করেছি। আমি আর “মাসুদ রানা” নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না। তবে এটা ঠিক, কাজটা আমার ভীষণ প্রিয় ছিল, মন দিয়ে শুটিংও করেছি। কাজটা মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারলে ভালো লাগত। পরিশ্রম সার্থক হতো।’
মাসুদ রানা সিরিজের গল্প নিয়ে বছর দুই আগে ‘চিতা’ নামের একটি সিনেমার ঘোষণা দিয়েছিল জাজ মাল্টিমিডিয়া। ওই সিনেমার নাম ভূমিকায় রাখা হয়েছে অনন্ত জলিলকে, বিপরীতে আছেন বর্ষা। তবে সম্প্রতি সিনেমাটির পরিচালক কলকাতার রাজীব বিশ্বাস জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থনার পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। সিনেমাটি সম্ভবত হচ্ছে না।
বেশ ঘটা করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিচালক আসিফ আকবর নির্মাণ করেন ‘এমআর নাইন: ডু অর ডাই’। নাম ভূমিকায় এবিএম সুমন প্রশংসিত হলেও বেশি কয়েকটি দেশে চিত্রিত সিনেমাটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বিদ্ধ হয়েছে। তবে একই নির্মাতা সিক্যুয়াল ‘স্কাই ড্যানসারের’ ঘোষণা দিয়েছেন গত বছর। দেখা যাক সেই সিনেমার ভাগ্যে কী আছে!
উল্লেখ্য যে এক সময় ঢাকাই সিনেমার নেতৃত্ব দিয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। বলা যায়, পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে কুক্ষিগত করে নিয়েছিল। পরে হয়ে যায় কলকাতার সিনেমার প্রমোটর। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে রমরমা সেই অবস্থার পতন ঘটে। এখন প্রতিষ্ঠানটি হরর ধাঁচের ‘জ্বীন’ সিরিজ দিয়ে কোনোভাবে নাম টিকিয়ে রেখেছে। তবে ‘জ্বীন ৩’ এর ঐতিহাসিক ব্যর্থতার পর নতুন কোনো প্রজেক্টের নাম শোনা যায়নি।