বোনের করা জিডিতে স্বামী-সন্তানসহ প্রকাশ্যে পপি, অস্বীকার করলেন বাড়ি দখলের অভিযোগ
চার বছর ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভিডিও বা স্বামী-সন্তানের উড়োখবর ছাড়া তাকে পাওয়া যায়নি তাকে। সম্প্রতি এই অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে বাবার (আমির হোসেন) জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। সেই প্রসঙ্গে সামনে এলো স্বামী সন্তান।
পপির বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন নায়িকার বোন ফিরোজা পারভীন। গত সোমবার খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন তিনি। জিডি নং-২১০।
অভিযোগে বলা হচ্ছে, পারিবারিক জমি এককভাবে নিজের দখলে নিতে চান নায়িকা। বাধা পেলে তিনি ভাই-বোনদের হুমকি দিচ্ছেন, এমনকি তাদের মেরে ফেলার ভয়ও দেখিয়েছেন।
পারিবারিক বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে খুলনার শিববাড়ি এলাকায় পপির বাবার ১১ কাঠা জমি। অভিযোগ অনুযায়ী, এর মধ্যে ৫ কাঠা জমি আগে থেকেই নিজের নামে লেখিয়ে নিয়েছেন পপি। এখন বাকি ৬ কাঠার মালিকানা পেতে মা, ভাই ও বোনদের চাপ দিচ্ছেন।
আরও জানা যায়, পপির মা যে বাড়িতে থাকেন, সেটির বিদ্যুতের লাইনও নিজের নামে করিয়ে নিয়েছেন এই চিত্রনায়িকা।
পপির মা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘করোনার পর থেকে আমাদের সঙ্গে পপির যোগাযোগ নেই। করোনা শেষ হলে খুলনা থেকে ঢাকা যায়। তার পর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। মাঝে ওর বাবার অসুস্থতার সময় কিছু খরচ দিয়েছিল।’
মেয়ের সঙ্গে কেন দূরত্ব জানতে চাইলে পপির মা বলেন, ‘আমি দূরত্ব রাখিনি কিন্তু পপি তৈরি করেছে। আমার জমি পপি দখল নিতে মরিয়া। আমার ৬ সন্তান। তার মধ্য প্রথম সন্তান পপি। সব সম্পত্তি সমান ভাগ পাবে ছয়জন। কিন্তু আমার সম্পত্তি সব কিছু পপি একাই দখলে নিতে চাচ্ছে।
সর্বশেষ আমার বাসার বিদ্যুৎলাইন কেটে অন্ধকারের মধ্যে রেখেছে। ওর কেয়ারটেকার থাকে সেই ঘরে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দিয়েছে।’
পপি প্রেম করে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন জানিয়ে মরিয়ম বেগম বলেন, ‘পপি খারাপ তা বলছি না। কিন্তু স্বামীর প্ররোচনায় এসব করছে। ওর খুলনায় চারটি জায়গা, একটি বাড়ি। তারপর ভাই-বোনের সম্পদ একাই ভোগের চেষ্টা করছে। সব সম্পত্তি থেকে ভাই-বোনদের বঞ্চিত করার চেষ্টা দীর্ঘদিনের। স্বামীকে নিয়ে আমাদের ভিটামাটিছাড়া করতে চাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পপির সঙ্গে আদনানের সম্পর্ক চলাকালীন থেকেই আমাদের পিছু পড়ে আছে। পপির স্বামীর আগের ঘরে তিন সন্তান ও স্ত্রী আছে। সেখানেও দিব্যি সংসার চলছে। পপিরটাও চলছে। পপির সন্তানকে স্বীকৃতি দেয় না। কোথাও বিয়ে ও সন্তানের কথা স্বীকার করে না। স্কুলে ভর্তি করতে তো বাবার পরিচয় লাগবে। বাচ্চা তো অবৈধ না। আমি স্বীকৃতি চাই মেয়ে ও নাতির। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর বলেছিলাম সাংবাদিকদের জানাতে, কিন্তু আমি বলতে গিয়ে উল্টো দোষী হয়েছি। এ কারণে মনঃক্ষুণ্ন তার স্বামী। বিয়ে করেছে, তা-ও জানানো হয়নি।’
কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না পপি, সে কথা জানিয়ে নায়িকার মা বলেন, ‘পপি কিছুই মানছে না, আইনের ঊর্ধ্বে। দুজনের এত টাকা যে, কোনো অন্যায় করতেও দ্বিধা করছে না। বিদ্যুৎ আমার স্বামীর নামে, কিন্তু পপি জোর করে লাইন নিয়ে গেছে। আমরা কিছু করতে পারব না বলে এ রকম অত্যাচার করতেছে।’
আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ওরে ফটোসুন্দরী বানিয়েছি। নায়িকা হয়েছে। সে সময় পরিবারের কেউ সহযোগিতা করেনি, কিন্তু আমি সাথে ছিলাম। আজ টাকা হয়েছে, বড় নায়িকা হয়ে আমাদের ভুলে গেছে। বিদ্যুৎ দরকার হলে ওর বাবা থাকতেই নিত। এখন আমাদের সঙ্গে অন্যায় করছে। বিদ্যুৎ অফিসও আমাদের সহযোগিতা করেনি।’
সর্বশেষ কী চান, জানতে চাইলে প্রশ্ন রেখে পপির মা বলেন, ‘এখন পপি যদি বসে সমাধান না করে তাহলে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব। আমার তো আর উপায় থাকবে না। আমার মেয়েটা আগে ভালোই ছিল। কিন্তু বিয়ের পর ৫-৬ বছর ধরে স্বামীর প্ররোচনায় আমাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তার বাবার জমি দখলের চেষ্টা করছে। আমাদের প্রতিনিয়ত হয়রানির মধ্যে রেখেছে। এই বয়সে আমরা কোথায় যাব।’
জিডির সূত্র ধরে জানা যায়, পৈতৃক জমি দখলে নেওয়ার জন্য স্বামী আদনান উদ্দিন কামাল, কল্লোল মজুমদার, শিপনসহ সোমবার বেলা ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে সোনাডাঙ্গা থানাধীন শিববাড়ি ভাড়াটিয়া বাড়ির সামনে হাজির হন। বাধা দিলে একপর্যায়ে ফিরোজা পারভীনসহ সবাইকে হুমকি দেন পপি ও তার স্বামী।
পপির বিরুদ্ধে জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জিডিতে পপির বিরুদ্ধে পৈতৃক সম্পত্তি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে পপি বলেন, ‘৬ কাঠা জমি চাচা ও বাবার কাছ থেকে আমার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে কিনেছি। কিন্তু এদের অত্যাচারের জন্য এখনো পর্যন্ত এই জমি ভোগ করতে পারিনি।’
পপির বিরুদ্ধে পেশি শক্তি প্রয়োগ করে জমি দখলের অভিযোগ এনেছে পরিবার। তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নায়িকা বললেন, ‘আমি কেন জমি দখল করব? আমি একবারও বলেছি ওই জমি নেব, আমার লাগবে।’
পুরো পরিবার পপির উপার্জনে সারাজীবন চলেছে সে কথা জানিয়ে পপি বলেন, ‘এদের শরীরের চামড়া, জামা কাপড় সব আমার পরিশ্রমের টাকায় কেনা৷ আমার পরিবারের কেউ কখনো উপার্জন করে খায়নি৷ ৯৫ সালে আমার বাবা কিন্তু এদেরকে (পরিবার) উপার্জন করে চালায়নি। আমার টাকায় চলেছে।’
জানা গেছে, পপির স্বামীর নাম আদনান উদ্দিন কামাল। তিনি জান্নাত গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। রয়েছে জাহাজের ব্যবসা। তিনি লালবাগ কাজী রিয়াজ উদ্দিন রোডের বাসিন্দা। খবর রূপালী বাংলাদেশ