বড় অর্জন! বিশ্ববিখ্যাত দুই এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নুহাশ
বিশ্ববিখ্যাত প্রোডাকশন ও ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী ‘অ্যানোনিমাস কন্টেন্ট’ ও ক্লায়েন্ট এজেন্সি ‘সিএএ’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন নুহাশ হুমায়ূন। এ প্রতিষ্ঠান দুটি সিনেমা প্রযোজনার পাশাপাশি অ্যাপল টিভি+, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রভৃতি প্লাটফর্মের জন্য কন্টেন্ট বানায়। এখন থেকে নুহাশ কোম্পানী দুটির অধীনে নির্মাতা হিসেবে কাজ করবেন। এমন খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডেডলাইন।
নুহাশকে এই কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে তার সদ্য নির্মিত শর্ট ফিল্ম ‘মশারি’র এসএক্সএসডব্লিউ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে মিডনাইট শর্টস বিভাগে গ্র্যান্ড জুরি প্রাইজ অর্জন ও প্রি-প্রোডাকশনে থাকা ফিল্ম প্রজেক্ট ‘মুভিং বাংলাদেশ’ নিয়ে নানান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ও প্রজেক্ট মার্কেটে অংশগ্রহণ।
এ বিষয়ে ফেসবুকে ‘কেন নুহাশের ডেডলাইন পত্রিকাতে ছাপা হওয়া খবরটি গুরুত্বপূর্ণ? একটু বুঝিয়ে বলি?’ শিরোনামে পোস্ট দিয়েছেন হলিউডের একাধিক বিখ্যাত স্টুডিওতে কাজ করা ওয়াহিদ ইবনে রেজা। পুরো বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করবে বিধায় লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
“পৃথিবীতে ৭০০০ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আছে, যারা রেজিস্টার্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এর মধ্যে মাত্র ৬৩টি ফেস্টিভ্যাল, মানে মাত্র ০.৯% হচ্ছে অস্কার কোয়ালিফায়িং। অস্কার কোয়ালিফায়িং ফেস্টিভ্যাল মানে কি? মানে, এই ফেস্টিভ্যালে যদি কোন ফিল্ম কম্পিটিশনে যেতে, শুধু অংশগ্রহন কিন্তু নয়, শুধুমাত্র যদি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায়, তবে সেই ফিল্মটি অটোমেটিক্যালি অস্কার এর দৌড়ে চলে আসবে। তার মানে ধরে নেয়া হবে যে এই বছর সারা পৃথিবীতে যতগুলো শর্ট ফিল্ম হয়েছে, তাদের মধ্যে এই ফিল্মগুলো শ্রেষ্ঠ। এরপর এখন থেকে আস্তে আস্তে শর্টলিস্ট হতে হতে অস্কারের নমিনেশন আসে।
এখন এরকম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ হয় কি করে একটা ফিল্ম? সাধারণত এরকম বড় ফেস্টিভ্যালে গড়ে ৩০০০ করে শর্টফিল্ম জমা পরে। সেখান থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগোরি মিলিয়ে হয়তো ১০টা ফিল্ম কে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেয়া হয়। তারমানে মাত্র ০.৩৩% ফিল্ম এই সম্মান পায়। এখন একই সাথে অস্কার কোয়ালিফাইং ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়ে, সিলেক্ট হয়ে পুরস্কার জেতার চান্স তাহলে গাণিতিক ভাবে দাঁড়ায় ০.৯% x .৩৩% = .০০২৯৭%। এইজন্য এই অস্বাভাবিক বাজি যারা জিতে নেয়, তাদের কে বলা হয় বেস্ট অফ দ্য বেস্ট। আমাদের ফিল্ম স্কুলে বলতো, যদি এক ধাক্কায় অনেক উপরে উঠতে চাও, তাহলে এই রাস্তায় হাটো! তারপর বিড়বিড় করে বলতো, অবশ্য এই রাস্তায় গন্তব্যে পৌঁছানো খুবই কঠিন! আমাদের ইউনিভার্সিটিতেই ৫ ব্যাচ মিলিয়ে ১০০ জন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মাত্র ১ জনকে দেখেছিলাম এই রাস্তায় সাকসেসফুল হতে। আমরা অন্য ৯৯ জন এর ধরে কাছে যেতে পারিনি।
যাইহোক, এই অসম্ভব অর্জন, বাংলাদেশে বসে শর্ট ফিল্ম বানিয়ে, যে মানুষটি করেছেন, তার নাম হচ্ছে নুহাশ হুমায়ূন। তার সিনেমা “মশারি” আটলান্টা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে জুরি পুরস্কার জিতে বর্তমানে অস্কারের দৌড়ে আছে। এর পাশাপাশি তাকে এনোনিমাস কন্টেন্ট প্রোডাকশন কোম্পানি এবং CAA এজেন্সি সাইন করেছে। এর মানে কি? প্রথমে এজেন্সি এর কথায় আসি। পশ্চিমা দেশে আপনি যদি ক্রিয়েটিভ লাইনে উচ্চ পর্যায়ে কাজ পেতে চান তাহলে আপনার একজন এজেন্ট বা ম্যানেজার লাগবে। তাদের কাজই হচ্ছে আপনার জন্য কাজ খুঁজে আনা। কারন আপনার ফি এর ১০-১৫% তারা পাবে। আপনি যত কাজ পাবেন তাদের লাভ তত। হলিউডে কোন বড় কাজ এজেন্ট বা ম্যানেজার ছাড়া হয় না। কেউ কথাই বলবেনা আপনার সাথে। তো এই এজেন্সি গুলোর মধ্যে CAA হচ্ছে সবচেয়ে বড় এজেন্সি গুলোর মধ্যে একটা। এরা এতই বড় যে সরাসরি আপনি এদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন না। মানে তারা তখনি আপনার কাছে আসবে যখন তাদের কোন বর্তমান ক্লায়েন্ট আপনাকে তাদের কাছে রেফার করে। নুহাশ হুমায়ুন কে যিনি রিপ্রেজেন্ট করছেন, তিনি সরাসরি কাকে রিপ্রেজেন্ট করে জানেন? অরিজিন্যাল স্পাইডার-ম্যান ট্রিলজি, ডক্টর স্ট্রেঞ্জ মাল্টিভার্স এর নির্দেশক স্যাম রাইমি কে! তারমানে এই মুহূর্তে স্যাম রাইমির যেই রিসোর্স, আমাদের নুহাশের একই রিসোর্স। ব্যাপারটা কি কল্পনা করতে পারছেন? ব্যাপারটা কেউ ভেরিফাই করতে চাইলে আইএমডিবি প্রো একাউন্টে দেখে নিতে পারেন।
এবং এই অভাবনীয় রিসোর্সের সদয় ব্যবহার যে এখনই শুরু হয়ে গেছে তার প্রমাণটাকি জানেন? এনোনিমাস কন্টেন্ট, যারা কিনা মিঃ রোবট, ট্রু ডিটেকটিভ এর মত সিরিয়ালের পেছনের প্রোডাকশন কোম্পানি, তারা নুহাশ কে সাইন করেছে। এর মানে কি? তারা নুহাশের নেক্সট প্রজেক্ট প্রডিউস করতে চাচ্ছে। কেন করতে চাচ্ছে তারা? কারন তারা দেখেছে, নুহাশ বাংলাদেশে বসে, একটি হাই কনসেপ্ট জন্রের সিনেমা বানিয়েছে যা বাণিজ্যিক ভাবে সফল হবার ক্ষমতা রাখে, পাশাপাশি আর্টিস্টিক ভ্যালু ক্যারি করে। হলিউড জুড়ে এখন চলছে ডাইভার্স কন্টেন্ট এর জয় জয়কার। আজকে কোরিয়ান ফিল্মমেকাররা, মেক্সিকান ফিল্মমেকাররা যা করছে, তা আগামীতে নুহাশ করতে পারবে সেটা ধারণা করেই, এত বড় প্রতিষ্ঠান তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এবং এই জন্যই, হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় এন্টারটেইনমেন্ট এর পত্রিকা, ডেডলাইন নুহাশ কে নিয়ে নিউজ করেছে। এখানে উল্লেখ করা ভাল, নুহাশের সাথে অন্যান্য বিজয়ীদের নিয়ে কিন্তু এখনো এমন রিপোর্ট আসেনি বা তারা এমন সুযোগ এখনো পায়নি। আমাদের নুহাশ পেয়েছে। এটা যে কি বিশাল একটা ব্যাপার, আমি ভাষায় বোঝাতে পারছিনা। প্রত্যেক ফিল্মফেস্টিভ্যাল বা স্ক্রিনরাইটিং কম্পিটিশনের ওয়েবসাইটে বড় করে দেয়, যখন কেউ এরকম চুক্তিতে সাইন করে। কারন এর মানে হচ্ছে এখন এই মানুষটার কাছে আমরা নিয়মিত ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড কাজ পাব! অস্কারের দৌড়ে থাকা একটা চমৎকার ঘটনা কিন্তু এর এফেক্ট সাময়িক। এজেন্সি আর প্রোডাকশন হাউসের সাথে চুক্তি হওয়া মানে ভবিষ্যৎটা সুন্দর করে গুছিয়ে ফেলা। খুব কম মানুষই এই পর্যায়ে সেই সুযোগটা পায়।
আমার ক্ষমতা থাকলে আমি প্রত্যেক নিউজপেপারের প্রথম পাতায় এই খবরটা ছাপাতাম। আমার ক্ষমতা কম দেখে আমার ফেইসবুকে লিখে রাখলাম। আজ থেকে ১-২ বছর পর যখন নুহাশ মার্ভেলের কোন প্রজেক্টে ডিরেকশন দিবে, তখন যেন বলতে পারি, আমি তো আগেই বলসি! ? আমি কমেন্টে ডেডলাইনের রিপোর্টের পাশাপাশি অন্যান্য কিছু লিংক দিলাম। আগ্রহীরা নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন। আর সবশেষে Nuhash, থ্যাংকস ফর ইন্সপায়ারিং মি ম্যান। আমি অধিক আগ্রহে তোমার পরবর্তী জাদু দেখার জন্য বসে থাকলাম। অনেক অনেক অনেক শুভকামনা।”