Select Page

‘সাফা কবিরকে দেশের বাইরে পাঠাইয়া দিতে মন চায় আমাদের’, প্রতিবাদে ফারুকী

‘সাফা কবিরকে দেশের বাইরে পাঠাইয়া দিতে মন চায় আমাদের’, প্রতিবাদে ফারুকী

সোশ্যাল মিডিয়া ট্রল থেকে সৃষ্ট গুজবের পরিণতিতে অভিনেত্রী সাফা কবিরকে দেশছাড়ার হুমকিও পেতে হলো। সম্প্রতি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে না চেনার কথা বলে তোপের মুখে পড়েন তিনি। এর আগেই নামের সঙ্গে ‘কবির’ থাকায় বিব্রত হতে হয় তাকে। এমন পরিস্থিতি তার পক্ষ নিয়ে কথা বলেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

১৫ জুন ফারুকী এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমরা মোটামুটি উত্তপ্ত তাওয়ার ওপর বসে আছি। অনেকেই যেতে আসতে তাওয়ার নিচের আগুনে তুষ ছুড়ে দিচ্ছে, কেউবা দিচ্ছে ঘি। সামনের ডিসেম্বর আসতে আসতে এই তাওয়ার অবস্থা কী হয়- এই নিয়া বড় আতংকে আছি। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই এইরকম একটা উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন।’

একপর্যায়ে বলেন, ‘এখানে যে দল ক্ষমতায় থাকে তারা ক্ষমতার বাইরের দলকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়! এবং এটা পালাক্রমে চলতেই থাকে, মাত্রার তারতম্য থাকে শুধু। এই নিশ্চিহ্ন করার বাসনা ব্যক্তিজীবনেরও এতো গভীরে চলে যায় যে, শাহরিয়ার কবিরকে না চেনার অপরাধে সাফা কবিরকে দেশের বাইরে পাঠাইয়া দিতে মন চায় আমাদের। যেন কিম জং উনকে না চেনার অপরাধে বসা এক কোর্ট মার্শাল। আমাকেও এরকম বহু মব ট্রায়ালে পাকিস্তানে পাঠাইয়া দেয়া হইছে। কোনো কোনো ট্রায়ালে ভারতে পাঠাইয়া দেয়া হইছে।’

গত ৮ জুন আত্মহত্যা করেন শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমু। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, তার নাম সাফা কবির। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে যে আত্মহত্যা করেছেন জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী। এ ঘটনায় পরদিন তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে বলতে হয়, উনি ভালো আছেন।

সাফা কবির লাইভে এসে তার পরিবারের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমার বাবার নাম হুমায়ূন কবির সবুজ। আমি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে না। ডিউ টু রেসপেক্ট আমি শাহরিয়ার কবিরকে চিনি না।’

এমন মন্তব্যে ক্ষেপে যান শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ। ১১ জুন তিনি লেখেন, ‘লেখক শাহরিয়ার কবিরকে চেনেন না মডেল সাফা কবির। এই কথা আবার অনলাইনে এসে বলেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলনে শহীদ, বীরাঙ্গনারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে সাফাদের মতন শিল্পীদের জন্য এদেশ স্বাধীন করেন নাই। ওনাদের মতন এতো জ্ঞানী শিল্পীদের অন্য দেশে চলে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হোক।’

এই পোস্ট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার নানা পর্যায়ে তোলপাড় হলেও সাফার পাশে দাঁড়াননি তার সহকর্মীরা। তবে কয়েকদিনের মাথায় মুখে খোলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

এছাড়া চলচ্চিত্র বিষয়ক শিক্ষক ও লেখক আনিস পারভেজকে বিরক্তি প্রকাশে দেখা যায়। ১৪ জুন তিনি লেখেন, ‌‘শাহরিয়ার কবিরকে চেনা কি নাগরিকত্বের পূর্বশর্ত? এই সমস্ত বালখিল্য আলাপ তারাই করে যারা দেশটাকে নিজেদের তালুক ভাবে। এদের জন্যই আজ মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে আনতে চাই না, দুঃখের সাথে অনুধাবন করি এই শকুনেরা মুক্তিযুদ্ধের পবিত্রতাকে কিভাবে কালিমালিপ্ত করেছে, করেছে আখের গোছানোর জন্য নিজেদের সম্পত্তি। ২০০৯ এর পর থেকে এদের দুর্বৃত্তায়নের সব সীমানা পার হয়ে গেছে। সংস্কৃতির কিছু পুরোহিত এসব দুষ্কর্ম্মে সবার চেয়ে এগিয়ে।’

মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রল ও ওয়াজে হয়রানির শিকার সাফা কবির

মূলত সোশ্যাল মিডিয়া ট্রল থেকে শাহরিয়ার কবিরের সঙ্গে সাফা কবিরের সম্পর্ক নিয়ে বিপত্তির শুরু। ফ্যাক্টচেক ওয়েবসাইট ডিসমিস ল্যাব জানায়—

২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এবিসি রেডিওর একটি লাইভ অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী সাফা কবিরকে এক ভক্ত বার্তা পাঠান, ‘আপু আপনি কি পরকালে বিশ্বাস করেন? করলে আপনার লাইফ স্টাইল …।’

উত্তরে সাফা কবির বলেছিলেন যে পরকালে তার বিশ্বাস নেই, কারণ তিনি যা দেখেন না তা বিশ্বাসও করেন না। এরপর অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা অন্য প্রসঙ্গে চলে যান, কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি রয়ে যায় এবং বড় হতে থাকে।

সেই ইউটিউব ভিডিওর কমেন্ট সেকশনে এবং সামাজিক মাধ্যমে এই মন্তব্যের জন্য আক্রমণের শিকার হতে থাকেন সাফা কবির। দুদিনের মাথায় তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট করেন সাফা কবির।

সেই বিতর্কের মধ্যেই একটি মিম ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায়: একটি পোস্টারে পাঁচজন ব্যক্তির ছবি এবং যথাক্রমে প্রতিটি ছবির ওপর লেখা— ‘বাবা শাহরিয়ার কবির, মা খুশি কবির, ছেলে জন কবির, বড় মেয়ে সাবা কবির, ছোট সাফা কবির’।

এরপর সাফা কবির এবিসি রেডিওর সেই অনুষ্ঠানে আবার হাজির হন, সেই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চান এবং জানান যে তিনি শাহরিয়ার কবির বা খুশি কবিরের মেয়ে নন। 

ভাইরাল হওয়া মিমে চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে যার নাম ‘সাবা কবির’ লেখা ছিল সেখানে ছবি ব্যবহার করা হয় অভিনেত্রী সোহানা সাবার। এই অভিনেত্রী ২০১৯ এর ১৬ এপ্রিল নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে মিথ্যা মিমটি পোস্ট করে তার বক্তব্য জানান।

ওই একই সময়ে মাওলানা শহীদুল ইসলাম সিদ্দিকী নামের একজন ইসলামী বক্তার ওয়াজের ভিডিও ভাইরাল হয় সেখানে তিনি ভাইরাল মিমটিকে ‘সত্য তথ্যের ওপর নির্মিত’ ধরে নিয়ে বক্তব্য দেন। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি মঞ্চে বসে হাতে কিছু একটা দেখে দেখে ‘বাবা শাহরিয়ার কবির, মা খুশি কবির, ছেলে জন কবির, বড় মেয়ে সাবা কবির এবং ছোট মেয়ে সাফা কবির’ ইত্যাদি বলছেন। তিনি পহেলা বৈশাখে এবিসি রেডিওতে সাফা কবিরের বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন। মাওলানা শহীদুলের এই ওয়াজ মিমযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করে।

ডিসমিস ল্যাবের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে শাহরিয়ার কবিরের মৃত সন্তানের নাম কীভাবে ‘সাফা কবির’ হয়ে গেল তার আসলে অন্য কোনো ব্যাখ্যা নেই এটা ছাড়া যে, অনলাইনে দুটি পক্ষের তথ্যযুদ্ধে ছড়ানো একটি ‘অপতথ্য’ সমাজে এত প্রভাব তৈরি করেছে যে, সেটিই ‘তথ্য’ আকারে অনেকের মাঝে, এবং বিশেষভাবে ‘সাংবাদিকদের মধ্যে’ স্থান করে নিতে পেরেছে! এবং এক পর্যায়ে সেটি সংবাদমাধ্যমের পাতা হয়ে সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ‘তথ্য’ আকারে।


মন্তব্য করুন