
‘ভাত দে’ সিনেমার শাবানা
‘ভাত দে‘-র শাবানা একদিকে আর বাকি অভিনেত্রীদের চরিত্রগুলো একদিকে এভাবেও যদি বলা হয় তারপরেও এ ছবির শাবানা সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র হয়ে ওঠে। দুর্ভিক্ষের গল্পে আমজাদ হোসেন নির্মিত এ ছবিতে শাবানা ইতিহাস রচনার অভিনয় করেছিল।
ভাতের কষ্টের জন্য শাবানার মা আনোয়ারা ছোটবেলায় সংসার ছেড়ে অন্যের সাথে চলে যায়। শাবানার বাবা আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পরে তার শিষ্য গায়েন আলমগীর আসে এবং তার সাথেই শাবানার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আলমগীর কাজের জন্য সাগরে গেলে তাকে সেখানে দস্যু দিয়ে আক্রমণ করানো হয় রাজিবের ষড়যন্ত্রে। এরপর শুরু হয় শাবানার ভাতের কষ্ট। ক্ষুধার জ্বালায় অন্যের ঘর থেকে ভাত চুরি, দোকান থেকে কলা চুরি করতে থাকে।

একটা সিকোয়েন্সে হোটেলে এক লোক ভাত খাচ্ছিল আর শাবানা গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। শাবানার এক্সপ্রেশন যেন তখন বিশ্বের সব ক্ষুধার্ত মানুষের চেহারাকে প্রতিফলিত করে। বলে-‘খিদা লাগছে, চাইরটা ভাত খামু।’ তারপর তাঁকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। চুরি করে ভাত খেতে গিয়ে ধরা পড়লে শাবানার মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। চুল কাটার সময় শাবানার এক্সপ্রেশন যেন সব অসহায় মানুষের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। তারপর ডুকরে কাঁদতে থাকে। কাটা চুল নিয়ে পাগলের মতো গান গাইতে থাকে শাবানা-‘তিলে তিলে মইরা যামু তবু তোরে ডাকব না।’
তারপর আবার ভাতের সন্ধানে রাজিবের চালের চাতালে। একহাঁড়ি ভাত নিয়ে পাগলের মতো খেতে থাকে লোকমার পর লোকমা কিন্তু অত্যাচারী রাজিব ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তারপর আবার ভাতের হাঁড়ি নিতে চাইলে শাবানা শক্ত করে ধরে। দুজন টানতে থাকে একজন অত্যাচারী আরেকজন অত্যাচারিত। ক্ষুধার্ত শরীরে শক্তি কুলায় না শাবানার। তারপর বলতে থাকে-‘ভাত দে হারামজাদা’। রফিক আজাদের বিখ্যাত কবিতার শৈল্পিক উপস্থাপন হয়ে যায় এ দৃশ্যে। শাবানার ঐ সংলাপের অভিনয় শুধু শাবানাকে দিয়েই সম্ভব।
তারপর আলমগীর পৌঁছে যায় সেখানে আর শাবানা স্বামীকে দেখে দৌড়ে যেতে থাকে। ক্ষুধার্ত শাবানা যেন আশ্রয় খোঁজার স্বপ্নে দৌড়াচ্ছে। আলিঙ্গনের পর শাবানার করুণ অবস্থা দেখে আলমগীর মারতে থাকে রাজিবকে। তারপর দুটি বুলেট দুজনের ভাগ্যে জোটে। চালের স্তূপ দেখে দুজনে এগিয়ে আসতে থাকে। এ দৃশ্য সহ্য করা যায় না। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাদের ভাতের কষ্ট শেষ হয়।

‘ভাত দে’-র এই শাবানা পৃথিবীর যাবতীয় ক্ষুধার্ত মানুষের জ্বলজ্যান্ত ছবি। প্রবাসীরা বলে অনেক সময় ভাতের জন্যই তারা প্রবাসী হয়েছে। যত কিছুই খান না কেন ভাতের মতো ক্ষুধা নিবারণ আর কিছুতে হয় না। শাবানার অভিনয় সেই ভাতের ক্ষুধাকে শিল্পসম্মত অভিনয়ে ঐতিহাসিক উদাহরণে পরিণত করেছে। ভাত দে-র শাবানা একটাই এদেশের যাবতীয় চলচ্চিত্রে।
আজকাল যখন শাবানার থেকেও কাউকে বড় করা হয় তখন তাদেরকে একটা কথাই বলতে মন চায়-‘যান, শাবানার ভাত দে-র অভিনয় করে আসতে বলেন।’ সম্ভব কি!!