ভারতীয় সিনেমা ভালোর চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছে: দীপংকর দীপন
এক সময় ভারতীয় সিনেমা আমদানির পক্ষে ছিলেন দীপংকর দীপন। ‘জওয়ান’কে জায়গা করে দিতে নিজের সিনেমাকে পিছিয়ে দিয়েছিলেন। ওই সময় ‘জাওয়ান’ দেখে মিডিয়ার সামনে উচ্ছাস প্রকাশ করেন ‘অন্তর্জাল’-এর সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রতিমন্ত্রী। যা নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি! ফলাফলে ভারতীয় সিনেমাটি মাসের পর মাস চললে তিন সপ্তাহ পর মুক্তি পাওয়া ‘অন্তর্জাল’ দ্রুত ওয়াশআউট হয়, এমনকি বিদেশেও অবস্থা যাচ্ছেতাই। অবশ্য এটি প্রমোশনাল সিনেমা কিনা, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
সম্প্রতি ভারতীয় সিনেমা আমদানি ও ‘অন্তর্জাল’-এর ব্যর্থতা নিয়ে মুখ খুলেছেন দীপংকর দীপন। সেখানে একপর্যায়ে বলছেন, ভারতীয় সিনেমা ভালোর চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছে।
পড়ুন দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত লেখাটি। যাতে ভাবার মতো অনেককিছু রয়েছে –
‘আমদানি এখন আর বন্ধ করার উপায় নেই’
ভারতীয় সিনেমা কোন পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমদানির পক্ষে ছিলাম সেটা সবাই কমবেশি জানি। তাদের সিনেমা এলেই যে আমাদের সিনেমার পরিবেশ বদলে যাবে বিষয়টি তেমনও না। সিনেমার স্বার্থেই আমরা সবাই রাজি ছিলাম।
কিন্তু যখন আপনি আলো-বাতাসের জন্য জানালা খুলে দেবেন তখন তাতে নেটও দিতে হবে। না হলে মশা ঢুকবে। আমাদের অবস্থাও হয়েছে এখন তেমন। এই নেটটা হলো সিনেমার প্রোটেকশন। পৃথিবীর সব দেশই অন্যদের ব্যবসা করতে দেয় নিজেদের সিনেমাকে মাথায় রেখে। যে দেশ এই কাজটি করেছে তাদের ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। আর যারা করেনি তাদের ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হয়েছে।
আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী ১০টি ভারতীয় সিনেমা আমদানি করা যাবে। তার মানে প্রতিমাসে একটি করে সিনেমা আসতে পারবে এবং আনাও হচ্ছে প্যান ইন্ডিয়ান সিনেমাগুলো। যে সিনেমাগুলো বিগবাজেটের পাশাপাশি নানা চমকে ভরপুর থাকছে। আমাদের দর্শকরা সেগুলো দেখে মজাও পাচ্ছে।
এছাড়া সিনেমাগুলো কিন্তু এক-দুই সপ্তাহ চলছে না। মাসের পর মাস চলছে। এতে করে আমাদের নির্মাতা-প্রযোজকরা ঈদ ছাড়া সিনেমা মুক্তি দিতে সাহসই পাচ্ছে না। যেমন আমি ‘অন্তর্জাল’ মানুষকে দেখাতেই পারিনি ‘জওয়ান’ সিনেমার কারণে। এতে করে ঈদে বড় বাজেটের বা ভালো সিনেমা মুক্তির হিড়িক পড়বে এবং সবাই সবাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
তাতে ঈদেও সিনেমা মুক্তি থেকে সবাই সরে আসবে এবং ভারতীয় সিনেমার বাজার এখানে বড় হবে। আবার ঈদে যে সিনেমাগুলো মুক্তি পাবে সেখানেও সবাই চেষ্টা করবে ভারতীয় ক্যামেরা, টেকনিশিয়ানদের দিয়ে কাজ করার। এমনকি এডিটও সেখানেই করবে অনেকে। যেমন ‘দরদ; পুরোই ভারতে হচ্ছে। এমন চললে দেশের নির্মাতা-টেকনিশিয়ানরাও বেকার হয়ে পড়বে।
এতে করে সামনের বছরটা হয়তো ভালো কাটবে, কিন্তু ২০২৫ সালে দেশের ইন্ডাস্ট্রি প্রায় শেষ হয়ে যাবে। অনেক সিঙ্গেল সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ সেখানে তো হিন্দি সিনেমাও চলছে না। এটা ঘটলো এমন একটা সময় যখন করোনা পরবর্তী সময়ে ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’, প্রিয়তমা’র মতো সিনেমাগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে।
ফলে ভারতীয় সিনেমা ভালোর চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছেন। তবে এমন অবস্থা চলতে থাকলে ওটিটি মার্কেট ভালো করবে। সবাই হল না, ওটিটির জন্য সিনেমা নির্মাণ করবে। তাতে কিন্তু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বলে কিছু থাকবে না। এই আমদানি এখন আর বন্ধ করার উপায়ও নেই। হলমালিক দর্শক কেউই বন্ধ হতে দেবে না। কিন্তু পরে আমাদের কী হবে সেটাও ভাবতে হবে।
এই জায়গায় আমার মনে হয়, আমরা যদি প্রদর্শনীর সমবণ্টন করতে পারি তাহলে হয়তো ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন সম্ভব হবে। মানে হলো, যতগুলো শো ভারতীয় সিনেমার হবে ঠিক ততগুলো শো দেশের সিনেমার হতে হবে। হয়তো একটি সিনেমার এত শো সম্ভব না, তবে একাধিক সিনেমাকে শোগুলো ভাগ করে দিতে হবে।
আমাদের নানা ঘরানার সিনেমারই দর্শক আছে। তারা সব সিনেমাই দেখতে চায়। এছাড়া সরকার যদি আমাদের সিনেমার ট্যাক্স কমিয়ে ভারতীয় সিনেমার ট্যাক্স বাড়িয়ে দেয় তাহলে দেশের সিনেমার টিকেটের দামও কমে যাবে। এতে করে হলমালিক-সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সবই বেঁচে যাবে। সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোও বন্ধ হবে না। আবার সিনেমা দেখানোর জায়গা থাকলে সবাই নতুন করে ভাবতে শুরু করবে। প্রতিযোগিতামূলক সুন্দর বাজার তৈরি হবে।