ভালো ছেলে ও মস্তানের উপভোগ্য আখ্যান
ফিল্ম রিভিউ: আধখানা ভালো ছেলে আধা মস্তান; পরিচালনা: আবরার আতহার; প্ল্যাটফর্ম: চরকি
মাত্র সত্তর মিনিটে একজন মানুষের জীবনের হয়তো কিয়দাংশও বলা যায় না। মানুষটা যদি শিল্পী হয় তাহলে তার গান, সৃষ্টি নিয়ে কথা বলতে গেলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় চলে যাওয়ার কথা।
শায়ান চৌধুরী অর্ণবের মতো একজন ক্ল্যাসিক্যাল, ডুয়েল পার্সোনালিটি সম্পন্ন শিল্পীকে নিয়ে মিউজিক্যাল এক অর্থে তাই ভালো রকম চ্যালেঞ্জ। সবকিছুর আগে সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য নির্মাতা আবরার আতহারকে ধন্যবাদ।
মিউজিক্যাল ফিল্ম হলেও এটিতে যেহেতু দুই বাংলার স্পন্দনের গান গাওয়া অর্ণবকে নিয়ে ভেতর-বাইরের নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তাই এটিকে ডকুমেন্টারি ফর্মেটেও ফিচার ফিল্ম বলা যায়। তবে পুরোটা সময় এটাকে খুব তথ্যে ঘাটা কোন প্রামাণ্যচিত্রর মতো লাগেনি, এর একমাত্র কারণ ফিল্ম ডিজাইন। একটা জলসার সেটআপ রেখে অর্ণব তার গল্প, তার দর্শন আর ব্যক্তিত্ব নিয়ে বলে গেছেন অকপটে, লুকোছাপা না রেখে। অন্যদিকে একটার পর একটা গান বেজেছে অর্ণবের দলকে নিয়ে যেখানে ছিলেন স্ত্রী সুনিধিও।
মূলত পাঁচটি বিষয় উঠে এসেছে ফিল্মে। অবশ্যই দশটার ওপর অর্ণবের গাওয়া গান একটা স্পেশাল ব্যাপার ছিল, জলসার সেট ডিজাইনটাও ছিল দারুণ।
দ্বিতীয় বিষয় ছিল, অর্ণবের ব্যক্তি জীবন। বাবা-মার আলাদা হওয়া সেই শৈশবে আর হোস্টেল জীবনের গল্প নিজের মুখে বলেছেন অর্ণব।
এরপর উঠে এসেছে ঢাকা আর শান্তিনিকেতনের আলাদা বৈশিষ্ট্য অর্ণবকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে, তার বড় হওয়াটাকে নাড়িয়ে চাড়িয়ে একজন দ্বৈত সত্তার মানুষে রূপ দিয়েছে সেসব কথা।
রবীন্দ্রনাথ থেকে আব্বাসউদ্দীন সব গানই গেয়েছেন অর্ণব, তবে বেশির ভাগ ছিল মৌলিক গান যার আবার অধিকাংশের লিরিক লেখা তার সাবেক সঙ্গিনী সাহানা বাজপেয়ির। ফলে ঘুরেফিরে অর্ণবের ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী, বন্ধু, সঙ্গীদের অবদান বারবার উঠে এসেছে ন্যারেশানে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেই বিষয়টি এই ফিল্মকে অর্থবহ করেছে, পূর্ণাঙ্গ করেছে তা হলো সংগীতের শক্তি নিয়ে কথা আর আমাদের জাতিসত্তা ও ক্রান্তিলগ্নে সংগীত কীভাবে প্রেরণা দিয়েছে সেসব কথা। তারেক মাসুদের ‘মুক্তির গান’, যাদবপুর আন্দোলন থেকে শাহবাগ আন্দোলনে গানের রেশ ফিল্মে বলা হয়েছে বেশ গুছিয়ে, সংশ্লিষ্ট ফুটেজ দিয়ে।
যেটি না বললেই নয়, দোষ-গুনে অর্ণব একজন শিল্পী, তার চেয়েও স্পেসিফিক সে একজন মানুষ। তার জীবনে উত্থান-পতন আর নিজেকে হারিয়ে খোঁজা আর আইডেনটিটি ক্রাইসিস নিয়ে তার ভাবনাগুলো শুনতে ভালো লেগেছে। অর্ণব গোছানো নয় বলে কিছু ক্ষেত্রে ন্যারেশানে একটা মিশ্র অনুভূতি ছিল আর পুরো ফিল্মে অর্ণবের নিজস্ব সংগ্রামের গল্প খুব গভীরে যাওয়া হয়নি। বাদবাকি হিসাবে ভিন্ন একটা মিডিয়ামে ভালো সময় কেটেছে ‘আধখানা মস্তান’র গল্প শুনে।
যারা গান ভালোবাসেন তাদের সব বাদ দিলে গান শুনেই পয়সা উশুল হবে, আমি নিশ্চিত!