মং থেঙ্গারির-সেন্সরশিপ না পাওয়ার গল্প
অংয়ের গল্প পড়েছিলাম প্রথম আলোতে। সেই যুবক অং , সাগরে গিয়ে আর ফিরে আসে নি যার বাবা, পাহাড়ি জীবনে প্রচণ্ড সংগ্রাম করে বড় হয়। অতঃপর অং হয়ে উঠে বাংলাদেশের প্রথম চাকমা ভাষায় নির্মিত চলচিত্রের নির্মাতা। দূর পাহাড়ের সেই ছেলে কি করে ফিল্ম মেকার হয়ে উঠল সে গল্প প্রথম আলোতেই আছে। আমি অতি ভাগ্যবতী সেই অংয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হল ফেবুতে। পুরা নাম অং রাখাইন ।
বাংলাদেশের প্রথম চাকমা ভাষায় নির্মিত ছবি ! ভাবা যায়, কতটা সাহসী আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকলে এই যুদ্ধে হওয়া যায়।
ছবির নাম , ইংলিশ ভাষায় ‘My bicycle” । কমল চাকমা পাহাড়ি রাস্তায় নিয়ে আসে সাইকেল, পাহাড়ি সে গ্রামে বড্ড অচেনা এই বস্তু। কমল যে ফ্যাক্টরি তে জব করে, বন্ধ হয়ে গেছে সেটা। তাই সাইকেল নিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে মানুষ আর মালপত্র আনা নেওয়ার কাজে। কিন্তু যা হয় আর কি, শত্রুতা সৃষ্টি হয় গ্রামের কিছু লোকের সঙ্গে। অতঃপর বেদনাবিধুর এক কাহিনী । “যান্ত্রিক” বস্তু যে কখনও “অযান্ত্রিক” হয়ে মানুষের আবেগের জায়গা কেড়ে নিতে পারে এই ছবি সেই গল্পই বলে।
ঋত্বিকের “অযান্ত্রিক” এ ছিল গাড়ি প্রেম, মানুষকে দিয়ে কাঁদান যায়, কিন্তু একটা গাড়িও চোখে জল আনতে পারে জানা ছিল না, মং থেঙ্গারি তে সেই সাইকেল প্রেম যেন অন্য সব প্রেমের চাইতে বড় হয়ে উঠে।
এই অসামান্য মুভি সেন্সর পাবে কি না আদৌ সিউর না! জুলাই মাসে এই মুভি পাবলিকলি দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু কিছু আবাল এবং ফাউলসর্বস্ব নীতিমালার কারনে আটকে আছে এই ছবি।
প্রথমত, ইংলিশ বাংলা ভাষা ছাড়া নাকি আমাফের সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দেয় না। ইহজগতে এইরকম আজিব বাত আসলেও শুনি নাই। এইগুলা বঙ্গদেশেই সম্ভব। যেখানে পাশের দেশ ভারতে হিন্দি, ইংলিশ, তামিল, মালায়াম, বাংলা ভাষায় ছবি প্রত্যেক বছরেই গণ্ডায় গণ্ডায় ছাড় পাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, এই মুভি বেশ কিছু জায়গায় দেখান হয়েছিল। তাতে আর্মিরা ১৪ পাতার এক চিঠি লেখে, পাহাড়ি জীবনে আর্মি শাসন দেখান হয়েছে বলে । আর্মিরা পাহাড়ি জীবনকে কিভাবে বিপর্যস্ত করে তা সিনেমায় তুলে ধরলে কি হপে ? সবাই সব কিছু জেনে যাবে না ? কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের হবে না! বিগ প্রব্লেম, সো ছবি আটকাও।
তৃতীয়ত, এই ছবি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম। আমাদের দেশে পরিচালককে ডিরেক্টর এসোসিয়েশন এবং প্রযোজককে প্রডিউসার এসোসিয়েশনের সদস্য হতেই হবে, ছবি ছাড়পত্র পেতে ! আর এই সদস্য হতে লাখ খানেক টাকা লাগে। এমনি এমনি হওয়া যায় না! ব্যাপারটা হচ্ছে এই, রাম শ্যাম যদু মদুর লাখ টাকা থাকলে তারা এসোসিয়েশনের সদস্য হতে পারে এবং সেন্সর পেতে পারে তাদের ফাউল ছবিগুলাও।
কত রঙ এই বঙ্গে তাই না ?
বাংলাদেশের সেন্সর বোর্ড নীতিমালা পরিবর্তন করা উচিত কিংবা সেন্সর বাদ দিয়ে রেটিং করা উচিত । সেই ধ্যাড়ধ্যাড়ে ৭৮ এর নীতিমালা নিয়ে এখনও লোকে বসে আছে এই ২০১৫ সালে। কই ১৯৭৮ , কই ২০১৫!
আমি দুঃখ করে অং কে বললাম “ কবে এই ছবি লোকে দেখতে পাবে ? এই ছবি দেখা দরকার, পাহাড়ি জীবন নিয়ে সলিড কোন ছবি হয় নি এই দেশে। চাকমা ভাষাতে নির্মাণ তো হয়ই নি। দেশের জন্য এই ছবি একটা এসেট। না দেখলে দেশের মানুষই বঞ্চিত হবে”।
অং হাসে শুধু!
অনিশ্চিত এই ছবির গল্প। আমরা মং থেঙ্গারি আদৌ দেখতে পাব কি না জানি না ! ইউটিউবে ট্রেলার দেখে খালি মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে “ কি অসাধারণ ফটোগ্রাফি। কি অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক! যেন আমাকেও পাহাড়ি সেই স্বপ্নাভুমিতে নিয়ে যায়”।
দেশের সেন্সর নীতিমালা না বদলালে, দেশের ছবি কখনই বিশ্ববাজার মাত করতে পারবে না! ভাল ভাল ছবি পরিচালক বানাতেও পারবে না, দর্শকও বাংলা সিনেমাকে টাটা বাই বাই করবে।
My bicycle মুভিটা একজন দর্শক হিসেবে আমি দেখতে চাই পাবলিকলি। এই মুভি দেখে , আরেকবার সুন্দর মুভির প্রেমে পড়তে চাই। সেন্সর নীতিমালা আমার এই ইমশনের দাম কি দিবে না ?
you tube link : https://www.youtube.com/watch?v=qSatMebetTw
প্রথম আলোর ফিচারঃ http://www.prothom-alo.com/…/%E0%A6%85%E0%A6%82%E0%A7%9F%E0…
ফেসবুক পেইজঃ https://www.facebook.com/mybicycle.aungrakhine?fref=ts