মন ও নারীত্বে ‘বিশ্বসুন্দরী’
সময়টা পুরো বিশ্বের জন্যই খারাপ। করোনাভাইরাসের কারণে এখনো বিশ্বে একটা অস্বাভাবিক অবস্থা চলছে। জীবন তারপরেও থেমে নেই, থেমে নেই বিনোদনও। দেশের চলচ্চিত্রে এ অবস্থার মধ্যেও ছবি মুক্তি পাচ্ছে দর্শক দেখতে যাচ্ছে এটা ভালো খবর এ মুহূর্তে চলচ্চিত্রের জন্য। বছর শেষে নতুন ছবি ‘বিশ্বসুন্দরী’ মুক্তি পেয়েছে আজ। পরিচালনায় চয়নিকা চৌধুরী।
‘বিশ্বসুন্দরী’ নামের মধ্যে এবং ছবির গল্পের মধ্যে সুনির্দিষ্ট তফাত রেখে ছবি নির্মিত হয়েছে। প্রথমত এই তফাতটার জন্যই ছবির পরিচালক ও গল্পকার ধন্যবাদ পাবে। আর সমালোচনা পাবে ছবির মেকানিজমের সমস্যার জন্য। কথা এগিয়ে নিতে নিতে সব খোলাসা হয়ে যাবে।
‘বিশ্বসুন্দরী’ নামটা শোনামাত্রই অনেকের মাথায় আসতে পারে হয়তো কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতা বা ফ্যাশনেবল কোনো আয়োজনকে ঘিরে ছবির গল্প। কিন্তু আদতে ছবির গল্প আলাদা। মানুষের বাহ্যিক ও মনের সৌন্দর্যের মধ্যে যে তফাতটা আছে তা খুঁজতে পারে এবং মূল সৌন্দর্যটাকে পেতে পারে অল্প কিছু মানুষ। ছবির গল্পে এ খোঁজটা করেছে সিয়াম এবং সে কোনটিকে বেছে নিয়েছে, কেন বেছে নিয়েছে, কিভাবে নিয়েছে এসব ছিল গল্পের প্রাথমিক ধাপ। তার বেছে নেয়ার সে ধাপের অংশ ছিল পরীমণি। ‘ইনার থট’ বলে মানুষের মনের যে অংশটা আছে সিয়াম সেটাকেই এক্সপেরিমেন্ট করে তার অভিজ্ঞতার আলোকে। ছবির দ্বিতীয় ধাপটি প্রথম ধাপ থেকে দ্বান্দ্বিক অবস্থা তৈরি করে এবং ক্লাইমেক্সে গিয়ে একটা ড্রামাটিক আবহে গিয়ে মেশে। ততক্ষণ পর্যন্ত ছবির গল্প নারীত্বের একটা গভীর অংশে গিয়ে পৌঁছায়। গল্পের ধাপগুলো কি কি সেটা ছবি দেখেই বরং জেনে নেয়া ভালো।
ছবির থিমের জায়গাটি স্ট্রং কিন্তু মেকানিজম নিয়ে যে কথাটা বলা হয়েছে সেখানে ত্রুটি ভালোই। ছবির প্রেজেন্টেশন সিনেমাটিক করার জন্য যে ধরনের মেকানিজম লাগে, ফিল্মি আবহ আনতে যেসব উপাদান জরুরি সেগুলো দুর্বল ছিল। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যাকে ছবির পরতে পরতে ব্যবহার করা জরুরি সেটা মোটাদাগে মিসিং, প্লটহোল রাখা হয়েছে, ফাইটিং একদম আনকোরা, মাল্টিস্টারার কাস্টিং-এ ছবি ভারি করা হলেও ফজলুর রহমান বাবুকে কাজে লাগানো যায়নি। পাহাড়ি লোকেশন ক্ষেত্রবিশেষে অসাধারণ ছিল এটা বলতে হয়।
সিয়াম আহমেদ রোমান্টিক নায়ক হিসেবে পারফেক্ট। তার মধ্যে এটা খুব ভালোমতোই খাপ খায়। সিয়ামের প্লাসপয়েন্ট হচ্ছে যে কয়েকটি ছবি করেছে ভেরিয়েশন রেখেছে এবং সিচুয়েশন ডিমান্ডে অভিনয়টা করতে জানে। ‘বিশ্বসুন্দরী’-তে সে ফোকাস খুব স্ট্রংলি এবং ওভারঅল ক্যারেক্টারের ফ্লো ঠিক রেখে অভিনয় করেছে। পরীমণির চরিত্রটি সিয়ামের থেকে কিছুটা পিছিয়ে কিন্তু তার অভিনয় ভালো ছিল স্পেশালি কিউটনেস লক্ষ করার মতো। তার সৌন্দর্যের জন্য হয়তো অভিনয়টা ঢাকা পড়ে কিন্তু সে ভালো অভিনেত্রী এবং এ ছবিতেও তাই ছিল। মাল্টিস্টারার কাস্টিং-এ চম্পার চরিত্রটি একটা পর্যায়ে গিয়ে বিশেষত্বপূর্ণ, আলমগীর অতিথি চরিত্রে ঠিকঠাক, মনিরা মিঠু তার চরিত্রে স্বাভাবিক, আনন্দ খালেদ অ্যাজ ইউজুয়্যাল। ফজলুর রহমান বাবু-র জন্য তার চরিত্রটি ঠিক মনে হয়নি, দর্শক আফসোস করতে পারে কারণ তাঁর অভিনয়ের ক্ষমতা অনুযায়ী চরিত্রটি হয়নি। খলনায়কের চরিত্রটি ক্ষেত্রবিশেষে সবার ভালো নাও লাগতে পারে।
ছবিতে সংলাপের ব্যবহার কিছু ক্ষেত্রে দারুণ এবং জীবনমুখী। উল্লেখ করা যাক –
১. মানুষকে তো ছায়া দিয়ে ধরা যায় না মায়া দিয়ে ধরতে হয়
২.
– তোমার কাছে প্রেম মানে কি
– বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার সময় একটুখানি ফিরে তাকানো
৩. একেকটা ভুল একেকটা পথ খুলে দেয়, যারা সবকিছু সহজভাবে ভুলে যায় তারা জীবনে সব থেকে বেশি সুখী হয়
৪. ভালোবাসা ভুল না, ভুল মানুষকে ভালোবাসা ভুল
ছবির গানের মধ্যে ‘তুই কি আমার হবি রে’ অলরেডি হিট। স্যাড ভার্সনের গানটিও ভালো ছিল। ‘সুন্দর মানুষ’ সিনেমাটিক না।
প্রচলিত সমাজে সৌন্দর্যের কনসেপ্টকে নাড়িয়ে দিয়ে ‘বিশ্বসুন্দরী’ একটা ডিপ কনসেপ্টে গিয়ে মেশা ছবি। যদি মেকানিজমটা ওভারঅল স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করত তবে এটা হত কমার্শিয়ালি বছরের সেরা ছবি। পরিচালক এ জায়গাটি মিস করেছেন। তবে দেখার মতো ছবি অবশ্যই।
মেসেজ :
সৌন্দর্য বিচার করুন মন দিয়ে
রেটিং – ৬.৫/১০