মানসম্মত ছবির অসাধারণ নায়ক রিয়াজ
ঢালিউডের বাণিজ্যিক ছবির জগতে একজন রিয়াজ মানসম্মত ছবির অসাধারণ নায়ক হয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে। তার নামটি যখন আসে তখন রুচিশীল একটা ব্যাপারের কথাও আসে। রিয়াজ মানেই রুচিশীল ছবির বড় একটা আবহ এমন একটা ব্যাপার।

নায়ক ও অভিনেতার সমান্তরাল মান বজায় রেখে রিয়াজ ঢালিউডে একটা সফল উদাহরণ তৈরি করেছে। তার পরের/সমসাময়িক তারকাদের মধ্যেও টিপিক্যাল হিরোইজমের চর্চা করতে দেখা গেছে। চরিত্রায়ণকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেকে ভার্সেটাইল প্রমাণ করার জায়গায় মনোযোগী হতে দেখা যায়নি। তাই তাদের ছবির সংখ্যা বেড়েছে বেশি কিন্তু মান সে অর্থে বাড়েনি। ঠিক এ জায়গাতে রিয়াজ অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছে।
রিয়াজ বাণিজ্যিক ছবির সেরা নায়কদের একজন। তার অভিনয়ে ন্যাচারালিটি-ই প্রধান বৈশিষ্ট্য। তার ব্যস্ত সময়ে অন্য নায়করা তার ছবিতে থাকলেও নিজেকে নিজের গুণে আলাদা করে ফেলত। বাণিজ্যিক ছবিতে সব ধরনের এক্সপেরিমেন্টে রিয়াজ স্বচ্ছন্দ। তাকে শুধুমাত্র রোমান্টিক ঘরানার নায়ক বলে যারা পরিচিত করায় তারা বড় আকারে ভুল করে। রিয়াজ রোমান্টিক নায়ক অবশ্যই তবে সেটা শুধুই একটা ক্লাসিফিকেশন তৈরি করে তার জন্য। বাকি আরো অনেক বিভাগ আছে তাকে বিশ্লেষণের জন্য।
‘নারীর মন, বিয়ের ফুল, মনের মাঝে তুমি, মাটির ফুল, ভালোবাসি তোমাকে, কাজের মেয়ে, বস্তির মেয়ে, আকাশছোঁয়া ভালোবাসা, হৃদয়ের কথা, হৃদয়ের আয়না, মন মানে না, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, বুক ভরা ভালোবাসা, স্বপ্নের পুরুষ, স্বপ্নের বাসর, মিলন হবে কত দিনে, তোমার জন্য পাগল, এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে, নয়নের নয়ন, পৃথিবী তোমার আমার, এই মন চায় যে, রং নাম্বার, কারিশমা, মনে রেখো আমায়, মনে পড়ে তোমাকে, আমি তোমারি, হৃদয়ের বন্ধন, হৃদয়ে লেখা নাম, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ, নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি, এ জীবন তোমার আমার, প্রেমের তাজমহল, এরই নাম দোস্তী, বকুল ফুলের মালা, শিরি ফরহাদ, আশা আমার আশা, ভালোবাসা কারে কয়, মন, গুণ্ডার প্রেম, ও প্রিয়া তুমি কোথায়, স্বপ্নের ভালোবাসা, রং নাম্বার, জামাই শ্বশুর, সাথী তুমি কার, চিরদিন আমি তোমার, ভালোবাসা ভালোবাসা, ছোট্ট একটু ভালোবাসা, বাধা, না বোলো না, বিয়ের লগন, তুমি কত সুন্দর, জীবনের চেয়ে দামি, কে আমি, বধূ তুমি কার, বাজাও বিয়ের বাজনা, চাঁদের মতো বউ, লোভে পাপ পাপে মৃত্যু, সুইটহার্ট’ এগুলো রিয়াজের রোমান্টিক ও রোমান্টিক ড্রামা-র ছবি।

তার বাণিজ্যিক ছবির মধ্যে ফ্যামিলি ড্রামা ছিল বৈচিত্র্যময়। সেগুলোতে পারিবারিক মূল্যবোধ, মা-বাবার সাথে ছেলের সম্পর্ক, দায়িত্ববোধ ইত্যাদি থাকত। যেমন- বাংলার নায়ক, বাঁচার লড়াই, অজান্তে, মিথ্যার মৃত্যু, পৃথিবী আমারে চায় না, খবরদার, মায়ের সম্মান, কঠিন বাস্তব, সুন্দরী বধূ, জমিদার, ভালোবাসার শত্রু ইত্যাদি। অ্যাকশন ছবিতে রিয়াজের পারফেকশন নিয়ে এক শ্রেণির সমালোচকের গালগল্প চালু আছে।
রিয়াজের অ্যাকশন ছবি আছে এবং সেগুলোতে তার ডেডিকেশন দুর্দান্ত। যেমন – সাবধান, দলপতি, ভয়ঙ্কর বিষু, ক্ষ্যাপা বাসু, মাটির ফুল, লাল দরিয়া, মায়ের সম্মান, অন্তরে ঝড়। লেডি অ্যাকশন ছবিতে নিজের চরিত্রের গুরুত্ব রেখে অভিনয় করেছিল রিয়াজ। যেমন- বিদ্রোহ চারিদিকে, ধাওয়া। ক্যামিও চরিত্রে ‘দুই নয়নের আলো’ ছবিতে ‘তুমি খুব সাধারণ একটি মেয়ে’ গানে রিয়াজ চমকে দিয়েছিল। ছবির টাইটেল ট্র্যাক ছিল সেটা। কমেডি ছবিতে ‘তোমাকেই খুঁজছি, টক ঝাল মিষ্টি’ এগুলো ছিল ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা। ফোক-ফ্যান্টাসি ছবিতে ‘নসিমন, মালেকা সুন্দরী’ ভালো কাজ।
রিয়াজ সাহিত্যভিত্তিক ছবির জন্য রত্নবিশেষ। তার চরিত্রের সাথে মিশে যাওয়ার শক্তি তাকে বিশেষ কিছু করে তুলেছে এসব ছবির ক্ষেত্রে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শাস্তি’ গল্প নিয়ে নির্মিত চাষী নজরুল ইসলাম-এর ছবিতে ছিদাম চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছিল। জহির রায়হানের কালজয়ী উপন্যাস ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের মন্তু চরিত্রে রিয়াজের বিকল্প কেউ ছিল না। রিয়াজের গ্রামীণ চরিত্র ধারণের দক্ষতা ঈর্ষণীয়। রাবেয়া খাতুনের উপন্যাস থেকে চাষী নজরুল ইসলাম-এর ‘মেঘের পরে মেঘ’ ছবিতেও দ্বৈত চরিত্রে রিয়াজ অসাধারণ ছিল। একজনের সাথে আরেকজনকে আলাদা করা যায়। হুমায়ূন আহমেদ-এর ‘দুই দুয়ারী’ ছবিতে রিয়াজ সম্পূর্ণ ভিন্নরকম আমেজে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। তার রহস্য মানবের উপস্থিতি আমাদেরকে বাস্তব ও রহস্যের দোলাচলে আবদ্ধ করে। একইভাবে ‘শ্যামল ছায়া’-র মওলানা চরিত্রকে একদম ভিন্ন লাগে। হুমায়ূন আহমেদ-এর ‘দারুচিনি দ্বীপ’ উপন্যাস থেকে তৌকীর আহমেদ নির্মিত একই নামের ছবিতে তারুণ্যদীপ্ত রিয়াজ শুভ্র চরিত্রে অসাধারণ। একই লেখকের ‘কৃষ্ণপক্ষ’ উপন্যাস থেকে মেহের আফরোজ শাওন নির্মিত একই নামের ছবিতে রিয়াজ মানসম্মত কাজ দেখিয়েছে।

অফট্র্যাকের রিয়াজ বাণিজ্যিকের থেকে একদম আলাদা এবং নিজেকে ভাঙতে জানা একজন শিল্পী। তার ‘চন্দ্রগ্রহণ, খেলাঘর, মধুমতী, কি জাদু করিলা, বিদ্রোহী পদ্মা, মোল্লাবাড়ির বউ, কুসুম কুসুম প্রেম, একজন সঙ্গে ছিল’ মনে রাখার মতো কাজ। এসব ছবিতে রিয়াজ নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী।
গানের দিক থেকেও একজন রিয়াজ সমসাময়িক অনেকের থেকে এগিয়ে। তার ছবির গানের জনপ্রিয়তা, বাণী ও সুরের কারুকার্য এবং সেসব গানে তার অভিনয়ও সমৃদ্ধ।
আপনি চাইলেই আপনার মুভি গ্রাফ বাড়াতে পারেন, অনেক ছবি করতে পারেন অনেক সময়ের হিসাবে কিন্তু মানসম্মত ছবি যেটি নির্মাণ ও অভিনয় দুইদিক থেকেই এগিয়ে তেমন একটা মুভি গ্রাফ আপনার থাকতে হবে তাহলে আজ থেকে ত্রিশ বছর বা এক প্রজন্ম পরে সেই প্রজন্মের কাছে আপনি দারুণ কিছু হয়ে উঠবেন। সংখ্যা তখন আর কাজ করবে না, কাজ করবে শুধুই মান। আর রিয়াজই ঢালিউডে এখানেই অনন্য চলচ্চিত্র তারকা যাকে সংখ্যায় নয় মানের দিক থেকে সমৃদ্ধ হতে দেখা গেছে। তার দর্শকও তাই আলাদা এবং আজকের ইন্ডাস্ট্রির বাস্তবতায় মানসম্মত ছবির হাহাকারে সেজন্য মানসম্মত ছবির দর্শকও একজন রিয়াজকে মিস করে।






