মাস্তান ও পুলিশ সিনেমার যত ভুল
“মাস্তান ও পুলিশ” একটি অফিসিয়াল রিমেক গল্পের মধ্যম মানের সামাজিক এ্যাকশন মুভি। ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন কাজী মারুফ। কিছুদিন পূর্বে আয়নাবাজি চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে কাজী মারুফ দশটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। রকিবুল আলম রকিব পরিচালিত এই সিনেমার ছোট-বড় মাত্র ১৪টি (!) ভুল আমাদের চোখে পড়েছে।
১. সিনেমার টাইটেলে বড়দা মিঠু’র নাম ভুল করে বরদা মিঠু ও কাজী হায়াৎ সাহেবের নাম কাজি হায়াৎ লেখা হয়েছে বিষয়টি বিব্রতকর, কারণ কাজী হায়াৎ সাহেব এই সিনেমার কাহিনীকার, কাজী হায়াৎ ফিল্মস এর পরিবেশক এবং পরিচালক রকিব সাহেব কাজী হায়াতের শিষ্য।
২. নায়িকা বিন্দিয়া বিশাল এক সুপার মলে গিয়েছিলেন, যেখানে গাড়ি পার্কিং করার যথেষ্ট জায়গা ছিল, তারপরেও কেন তিনি সেখানে গাড়ি না রেখে একটি সরু রাস্তায় রেখে জ্যাম সৃষ্টি করেছেন সেটা তার ব্যাপার। কথা হলো দৃশ্যটা যেভাবে দেখানো হয়েছে তাতে দেখা গেছে নায়িকার গাড়ির আশেপাশে অনেক জায়গা আছে যেখান দিয়ে অন্যান্য গাড়ি-ঘোড়া অনায়াসে যাতায়াত করতে পারত। তাহলে জ্যামের বাহানা দেখানোর কারণ কি ???
৩. মারুফের থানায় ডিসি সাহেব যখন মেয়েকে দেখতে ঢুকেন, তখন ঘড়িতে সময় ঠিক ৪টা ৩০। মারুফ ডিসিকে দেখে দাঁড়িয়ে স্যালুট করতেই ঘড়িতে ৫টা বেজে গেল ঘড়ির কাটাও ডিসিকে সম্মান করতে জানেন
৪. মারুফের ধাওয়া খেয়ে বোমা নিয়ে পালানোর সময় টোকাইয়ের হাতে যখন বোমা ফাটল তখন সাথে সাথে টোকাই বেচারা গায়েব হয়ে গেল!!! এটা এই সিনেমার সবচেয়ে রহস্যময় দৃশ্য
৫. আবার সেই কমন ভুল, বোমার আঘাতে জর্জরিত টোকাইয়ের সারা শরীর ব্যান্ডেজ করার পরও ব্যান্ডেজের উপর কি করে রক্ত দেখা গেল ? আর কতকাল এই ভুল করবেন…
৬. বোমার আঘাতে মৃতপ্রায় এবং সারা শরীরে ব্যান্ডেজ বাঁধানো টোকাইয়ের হাতে ১০০ টাকার একটি নোট ব্যান্ডেজ করার পরও কিভাবে রয়ে গেল তা জাতি জানতে চায়।
৭. যে টোকাই কি নিয়ে ডিসি সাহেব গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ডেকেছেন সেই টোকাই যে আরো আগেই মারা গেছে সেটা ডিসি সাহেব জানতেনই না। হায়রে আমাদের প্রশাসন
৮. যত বড় অপরাধী হোক, তার মৃত্যুর পর যদি কোন ওয়ারিশ থাকে, লাশ ময়নাতদন্তের পর তা সেই ওয়ারিশের কাছে হস্তান্তর করা আইনের কাজ। অথচ বোমার আঘাতে মৃত টোকাইয়ের লাশের দাফন-কাফন হয়ে যাওয়ার পরও তার একমাত্র ওয়ারিশ বৃদ্ধ নানীকেও তার একমাত্র নাতির মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। কেমনে কি ???
৯. “বলো না কোথায় তুমি গানে” নায়ক মারুফ যখন নায়িকাকে জিজ্ঞেস করলেন “এ বুকে আছো কোন পাশে” তখন নায়িকা মারুফের বুকের ডানপাশে মাথা রাখলেন। মারুফের হৃদপিণ্ড যে বুকের ডানপাশে আমার সেটা আগে জানা ছিল না
১০. আদালতে একজন উকিল যখনই কোন স্বাক্ষি বা প্রমাণের কোন রিপোর্ট বা জিনিস বিচারকের কাছে পেশ করতে চান প্রথমে সেটা তাকে একজন মুহুরির কাছে দিতে হয়। পরে মুহুরি সাহেব সেটা বিচারকের হাতে তুলে দেন। অথচ এই সিনেমায় নায়িকা কাম উকিল সাহেবা প্রমাণস্বরূপ দুটি কার্ড ও পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট মুহুরির হাতে দিলেও মুহুরি সাহেব সেগুলো বিচারককে না দিয়ে নিজের কাছেই রেখে দিলেন। কেনু
১১. বেশ কয়েক জায়গায় ছুরিকাঘাত ও স্ত্রীর গর্ভপাতের কারণে মারুফের সারা শার্ট-প্যান্টে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর যখন মারুফ থানায় আসল, দেখা গেল শার্টে রক্তের দাগ অনেকখানি কমে গেছে। রক্ত শুকিয়েছে ভাল কথা, দাগ গেল কি করে !!! সার্ফ এক্সেল
১২. মেয়ের লাশ দেখানোর জন্য মারুফ ডিসি সাহেবের হাত ধরে থানা থেকে বের করে বাইরে নিয়ে আসলেন। অথচ দুজনই সিড়ি বেয়ে নেমে ড্রয়িং রুমে নায়িকার লাশ দেখতে আসলেন। ডিসি সাহেব কি বাড়িটাকেই থানা বানিয়ে ফেলেছেন নাকি, থানাটাকে বাড়ি
১৩. হাজতে খুনের দায়ে আদালত খুনী ঠাকুরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। অথচ শেষ ফাইটিং দৃশ্যে দেখা গেল ঠাকুর বহাল তবীয়তে গুণ্ডাদের আস্তানায় বসে আছেন। পরিচালক কি ভুলে গিয়েছিলেন ঠাকুরের মামলার কার্যক্রম তখনো চলছিল, এবং তখন তার জামিন বা প্যারোলে মুক্তি লাভ ছিল অসম্ভব… (আয়নাবাজি করলেই দোষ )
১৪. মারুফকে মারার জন্য মিজু আহমেদ জাতীয় পতাকার বাঁশ ভেঙ্গে আঘাত করে এবং সেই পতাকার চোকা অংশ পেটে ঢুকিয়ে দিয়েই মারুফ মিজু আহমেদকে মেরে ফেলে। সেই পতাকা নিয়ে সংসদ ভবনের দিকে ছুটে যাওয়ার দৃশ্যে স্পষ্ট দেখা গেছে পতাকার বাঁশের নিম্নাংশ ভাঙ্গা নয় বরং ধারালো কিছু দিয়ে চোকা করা হয়েছে