মাহি ও ভবিষ্যত নিয়ে জাজের ‘কিছু কথা’
জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে নায়িকা মাহির দ্বন্দ্ব এখন ঢালিউডের অন্যতম আলোচনা বিষয়। তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে অনেক সংবাদ প্রকাশ হলেও জাজ কিংবা মাহি কেউই খোলাখুলি কিছু বলেননি। জাজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। তা বিএমডিবি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল—
১. মাহি জাজের বাহিরে কোন সিনেমা করতে পারবে না, জাজের সাথে মাহির এ রকম কোন চুক্তি কখনো হয়নি। গত আড়াই বছরে মাহি জাজের বাহিরে ৪টি সিনেমা করেছে। ‘ভালবাসা রং’ এর পরপরই মাহি আবুল খায়ের বুলবুল পরিচালিত একটি সিনেমার কাজ শুরু করে যার নায়ক ছিল আরজু। সিনেমাটি মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যায়। এর পর মাহি ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত ‘কী দারুণ দেখতে’, সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘বিগ ব্রাদার’ ও ‘ওয়ার্নিং’ সিনেমাতে অভিনয় করে। এই তিনটি সিনেমা জাজের না। এর বাহিরে মাহি অভিনীত সব সিনেমাই ছিল জাজের। মূল কথা হল মাহিকে জাজ কখনো বন্দি করে রাখেনি। সে সবসময়ই স্বাধীন ছিল এবং আছে।
২. তবে নতুন যে কোন বাহিরের সিনেমার প্রস্তাব আসলে, মাহি জাজকে অনুরোধ করত গল্প শুনে দিতে এবং ডিরেক্টর ঠিক আছে কি না তা দেখতে। আর জাজ মাহির ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে তা করত। কারণ একজন নায়ক বা নায়িকার একটা সিনেমা ফ্লপ করলে তার ক্যারিয়ারে ভাল প্রভাব পড়ে। তাই তার কোন সিনেমা যাতে ফ্লপ না করে সেই দিকে মাহি ও জাজ খুব সতর্ক থাকত।
৩. মাহি নিজেও বাহিরের প্রডাকশন এ কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত না, কারণ অন্য প্রডাকশন জাজের মত এতো বিশাল আয়োজন দিয়ে সিনেমা করে না। মাহিকে জিজ্ঞাসা করেন, উনি নিজেই স্বীকার করবে।
৪. কিন্তু জাজ কখনো মাহিকে ছাড়া কোন সিনেমা করেনি। আর জাজ মূলত নায়িকাকেন্দ্রিক সিনেমা করে। জাজের ১১টা সিনেমার ৯টি ছিল নায়িকাকেন্দ্রিক। একজন নায়িকাকে প্রতিষ্ঠিত হতে তাকে নায়িকাকেন্দ্রিক সিনেমা করতে হবে, অথবা তাকে ঘিরে গল্প থাকতে হবে। জাজ মাহিকে সব নায়ক ও নায়িকার উপরে নেওয়ার জন্য তাই করেছে। এখন মাহির উপরে বাংলাদেশে একজন শিল্পী আছে, উনি শাকিব খান। যদি আজ জাজ ও মাহির মাঝে এই দূরত্ব না হতো, ইনশাল্লাহ মাহি এই বছর শাকিব খানকেও ছাড়িয়ে যেতে পারত। শাকিব খানের একমাত্র হুমকি ছিল মাহি।
৫. মাহির ভিতরেও শিল্পীর ক্ষুধা ছিল, আর সেই ক্ষুধা থেকেই মাহি জাজের সব সিনেমাই করতে চাইত, ওর বাহিরের সিনেমার প্রতি কোন আগ্রহ ছিল না।
৬. জাজ ও মাহির মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। তাই জাজ মাহিকে বাদ দেয়। এর মাঝে নতুন নায়িকার আগমন বা অন্য কিছু না।
৭. জাজ বাংলাদেশের সিনেমা এগিয়ে নিতে এবং বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। জাজ যা করে তা সুদূর পরিকল্পনা নিয়ে করে।
৮. বাংলাদেশের সিনেমাকে এগিয়ে নিতে জাজকে বছরে কম পক্ষে ১২টি সিনেমা তৈরি করতে হবে। কিন্তু একজন নায়ক বা নায়িকা বছরে ৫টির বেশি সিনেমা করতে পারে না। তাই বছরে ১২টি সিনেমা বানানোর জন্য জাজের কমপক্ষে ৩ জন নায়ক ও ৩ জন নায়িকা প্রয়োজন। তাই জাজ আরও ২টি নতুন মুখ উপহার দিয়েছে।
৯. বাংলাদেশের সিনেমাকে এগিয়ে নিতে হলে সব দিক থেকে এগিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে নিচের কাজগুলো উল্লেখযোগ্য-
ক) নতুন শিল্পী ও কলাকুশলী তৈরি করা
খ) আর্টিস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
গ) বাজেট বাড়ানোর জন্য যৌথ প্রযোজনা
ঘ) মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তসহ বড় একটা জনগোষ্ঠীকে পুনরায় হলমুখী করা
ঙ) বাংলদেশের সিনেমা সারা বিশ্বে একসাথে মুক্তি দেওয়া
ক) নতুন শিল্পী ও কলাকুশলী তৈরি করা।
নতুন নায়ক ও নায়িকা প্রতিষ্ঠিত করা। গত আড়াই বছরে মাহি, বাপ্পি, শুভ, সায়মন, শিপন, শুধু এরাই কম বেশি বাংলা চলচিত্রে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কিন্তু এর বাহিরেও অনেক ভাল, প্রতিভাবান ও সুন্দর বা সুন্দরী অভিনেত্রী এসেছে, কিন্তু যথাযথ সুযোগের অভাবে নিজের স্থান করে নিতে পারে নাই। তাই জাজ তাদের সেই যথাযথ সুযোগ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। এবং যৌথ প্রযোজনার মাধ্যমে তাদের সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করার চেষ্টা করছে।
খ) আর্টিস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম : শুধু সুযোগ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করলেই হবে না। তাদের যথাযথভাবে পরিচালনা করতে হবে, যা এখন বলিউড বা টালিউডে হচ্ছে। আর্টিস্টের ম্যানেজার কোম্পানির দায়িত্ব পালন করছে বড় বড় প্রডাকশন হাউস। ঠিক সেইভাবে জাজ এখন শিপন, নুসরাত ফারিয়া ও জলির ম্যানেজার এর দায়িত্ব পালন করছে। এতে শিল্পী এবং প্রডাকশন হাউস দুই পক্ষই লাভবান হচ্ছে।
গ) বাজেট বাড়ানোর জন্য যৌথ প্রযোজনা : বাংলাদেশে একটা সিনেমা সুপার হিট হলে ১.৫ কোটি টাকা ব্যবসা করতে পারে। আর সুপার ডুপার হিট হলে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসা করতে পারে। তাই এখানে ৩ কোটি টাকার সিনেমা বানানো সম্ভব নয়। আর বাজেট বড় না হলে বড় সিনেমা বানানো সম্ভব নয়। তাই ভাল সিনেমা এর জন্য যৌথ প্রযোজনার সিনেমা করা উচিত। অগ্নি এর বাজেট ৭ কোটি টাকা। শুধু বাংলাদেশ মার্কেট হলে কখনোই এই বাজেট এর সিনেমা বানানো সম্ভব হতো না।
ঘ) মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তসহ বড় একটা জনগোষ্ঠীকে পুনরায় হলমুখী করা : কিছু বছর আগে আমরা মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে সিনেমা হলবিমুখ করে ফেলেছি। তাদের হল এ ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের ভাল সিনেমা বানাতে হবে এবং হলের পরিবেশ উন্নত করতে হবে।
ঙ) বাংলদেশের সিনেমা সারাবিশ্বে একসাথে মুক্তি দেওয়া : বাংলা সিনেমার বাজার বড় করতে হবে। সারাবিশ্বে আমাদের সিনেমা একসাথে মুক্তি দিতে হবে। এটা বিচ্ছিন্নভাবে সম্ভব নয়। একজন প্রযোজকের পক্ষে সম্ভব নয় যে বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করবে। তাই জাজ, জুন ০১, ২০১৫ থেকে INTERNATION DISTRIBUTION WING খুলতে যাচ্ছে। এখান থেকে বাংলাদেশী সিনেমা কিছু কমিশনের বিনিময়ে সারাবিশ্বে একসাথে রিলিজ করতে পারবে।
জাজ ভবিষ্যতের ভাবনা করে। পরিকল্পনা করে। কিভাবে জাজ নিজেকে আগিয়ে নিয়ে যাবে, কি ভাবে বাংলা চলচিত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তাই দয়া করে আমাদেরকে আমাদের মত কাজ করতে দেন। মাহিকে মাহির মত থাকতে দিন। মাহি অনেক ভাল, গুণী ও পরিশ্রমী অভিনেত্রী। এবং উনার নিজের কাজের প্রতি অনেক নিষ্ঠা। আশা করি মাহি বাংলা চলচিত্রে আরো অনেক দিন শক্ত অবস্থান নিয়ে থাকবে। আর মাহি সফল হলে আমরাও খুশি, কারণ মাহি জাজেরই মেয়ে এবং সারাজীবন জাজের মেয়েই থাকবে। জাজ সারাজীবন মাহির পাশে থাকবে, তার সুখে-দুঃখে।
আমাদেরও রইল মাহির প্রতি দোয়া ও শুভ কামনা।