Select Page

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রঙিন ছবি ‘মেঘের অনেক রং’

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রঙিন ছবি ‘মেঘের অনেক রং’

যুদ্ধে পাক বাহিনীর দ্বারা লাঞ্ছিতা এক নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার আগে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাকে এক ডাক্তার দম্পতির কাছে রেখে যাওয়ার গল্প নিয়ে ‘মেঘের অনেক রং’ চলচ্চিত্র।

যুদ্ধচলাকালীন ডাক্তার ওমর  প্রায়ই তার অতীতকে মনে করে কুণ্ঠিত হয়। এ সময়ে তার পাশে এসে দাঁড়ায় পাহাড়ি মেয়ে মাথিন। যুদ্ধের বছর দুয়েক পরে এক পুনর্বাসন কেন্দ্রে এক লাঞ্ছিতা নারী রুমা তার বেঁচে থাকার কোন মানে খুঁজে পায় না। কিন্তু তার সন্তানের কথা ভেবে কিছু করতে পারে না। একদিন এক ডাক্তার দম্পতিকে দেখে তাদের পিছু নেয় সে এবং এক সুযোগে তার সন্তান আদনানকে তাদের বাড়িতে রেখে এসে আত্মহত্যা করে। পুনর্বাসন কেন্দ্রে মৃত্যুর খবর শুনে ডাক্তার তাকে দেখতে এসে আদনানের আসল পরিচয় খুঁজে পায়।

হারুনর রশিদ পরিচালিত ‘মেঘের অনেক রং’ বাংলাদেশের প্রথম রঙ্গীন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। পরিচালক ছোট্ট পরিসরে তার দক্ষতার পরিচয় দেখিয়েছেন। যুদ্ধের ছবি মানে শুধু যুদ্ধ নয়। যুদ্ধের প্রভাবের ব্যাপকতাকে দেখিয়েছেন।

চলচ্চিত্রের অভিনেতাশিল্পীরা সবাই নতুন এবং এটি ছিল তাদের প্রথম কাজ। অভিনয়ে শিশুচরিত্রে আদনান হল এই গল্পের প্রাণ। তাকে কেন্দ্র করেই কাহিনী আবর্তিত হয়েছে এবং  তার অভিনয় ছিল যথেষ্ঠ ম্যাচিউরড। অন্যান্য চরিত্রে ওমর এলাহী ও মাথিন পেশাদার কোন অভিনয়শিল্পী নয়। তাই তাদের অভিনয়ে আনাড়িপনা ছিল। লাঞ্ছিতা চরিত্রে রুমার অভিনয় নজরকাড়া না হলেও মানসম্মত ছিল। তবে অভিনয়ের আনাড়িপনা উৎরে গেছে পরিচালনা, চিত্রগ্রহণ আর আবহ সঙ্গীত দিয়ে।

চিত্রগ্রাহক হারুন-আল-রশিদ চলচ্চিত্রের প্রথম দৃশ্যে পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা পথে গাড়ি চালিয়ে যাওয়া এবং দ্বিজেন্দ্র গীতি ‘এমন দেশটি কোথায় খুঁজে পাবে নাকো তুমি’র আবহে পালতোলা নৌকা, বাবুই পাখির বাসা, জেলেদের মাছ ধরা, কৃষকদের ধান কাটা, মহিলাদের ধান মাড়াইসহ আবহমান বাংলার সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলেছেন অনবদ্যভাবে।

চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ফেরদৌসী রহমান। তথাকতিত কোন গান নয়। তবে আবহ সঙ্গীত দিয়ে তিনি চলচ্চিত্রের গতিকে সচল রেখেছেন।

১৯৭৭ সালে প্রদত্ত বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারেও ছিল এই চলচ্চিত্রের জয়জয়কার। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করেন প্রযোজক আনোয়ার আশরাফ, পরিচালনার জন্য হারুনর রশিদ, শিশুশিল্পী বিভাগে আদনান, সঙ্গীত পরিচালনা বিভাগে ফেরদৌসী রহমান এবং চিত্রগ্রহণে চিত্রগ্রাহক হারুন-আল-রশিদ। সবারই এটি ছিল প্রথম জাতীয় পুরস্কার।


Leave a reply