Select Page

মোস্তাফিজুর নূর ইমরান: সাহসী একজন

মোস্তাফিজুর নূর ইমরান: সাহসী একজন

একযুগ আগে এনটিভির ‘সুপার হিরো সুপার হিরোইন’ রিয়্যালিটি শো’র মাধ্যমে মিডিয়াতে যাত্রা শুরু করা তরুণটি এই সময়ে ভার্সেটাইল অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অনেক বছরের ত্যাগ ও কাঠখড় পুড়িয়েই এসেছেন আলোচনার পাদপ্রদীপে। তিনি আমাদের সবার প্রিয় মোস্তাফিজুর নূর ইমরান। ১৬ জুন হাজির হচ্ছেন ‘সাহস’ সিনেমা নিয়ে।

‘মহানগর’ সিরিজের তুমুল জনপ্রিয় মলয় হিসেবেই তিনি সমাদৃত। সম্প্রতি তিনি ‘জাগো বাহে’ নামক অ্যান্থোলজিক্যাল সিরিজের তৃতীয় কিস্তি ‘বাংকার বয়’-এ যুদ্ধের সময় একটি বাংকারে আটকে পড়া পাকিস্তানি অফিসার হিসেবে নিজের অভিনয় দক্ষতা নতুনভাবে প্রমাণ করেন। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার তিনি মফস্বল শহরের তরুণ রায়হান হিসেবে হাজির হচ্ছেন সাজ্জাদ খানের পরিচালনায় ‘সাহস’ সিনেমায়।

মোস্তাফিজুর নূর ইমরান প্রথমে কিছুটা আলোচনায় আসেন ‘আলফা’ সিনেমা দিয়ে। ‘ইতি তোমারই ঢাকা’য় এসে সেই আলোচনা অন্যরকম এক স্বীকৃতি হিসেবে ধরা দিয়েছে। ‘মানি হানি’ ওয়েব সিরিজে এসে পায়ের তলায় যে মাটি ধরা দিয়েছে ‘একাত্তর’ ওয়েব সিরিজে এসে সেটি আরো পরিপক্ক হয়। ‘আকাশ ভরা তারা’ তার পরিচয় আরও ছড়িয়েছে। তবে আক্ষরিক অর্থে তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আশফাক নিপুনের সিরিজ ‘মহানগর’ দিয়ে। মোশাররফ করিমের মতো কিংবদন্তি অভিনেতার পাশে হারিয়ে যাননি এসআই মলয়; এটাই তো অভিনেতা হিসেবে তার বড় সার্থকতা।

খুব ছোট্ট একটি চরিত্র দিয়ে অভিনয় জীবনের শুরু হয়েছিলো মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের। ‘পাওনাদার’ নামের সেই নাটকে প্রোডাকশন বয় হিসেবে ট্রিট করা হয়। চলচ্চিত্রে তার প্রথম কাজ ‘গেরিলা’। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কাল নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে তাঁর উপস্থিতি মাত্র ৬ সেকেন্ড। এরপরে ‘সীমান্তের চড়ুইভাতি’ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে সুযোগ পেলেও সেই সিনেমা এখনো মুক্তি পায়নি। আশরাফ শিশিরের ‘আমরা একটি সিনেমা বানাব’ও মুক্তির আলো দেখেনি। তবে থেমে থাকেননি ইমরান। এরই মাঝে বিশটির অধিক স্বল্পদৈর্ঘ্য এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের ওয়েব সিরিজে অভিষেক হয়েছিল ২০১৪ সালে ‘আ বিলিয়ন টু ওয়ান’ এর মাধ্যমে। সেই থেকে চলচ্চিত্র ও ওয়েবেই তার কাজের ব্যস্ততা এবং ধ্যান ধারনা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘আমি আসলে গৎবাধা কাজ করতে চাইনি কখনোই। মূলত এমন সব চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছি, যেগুলো মানুষের ভালো লাগবে, অন্যরকম মনে হবে কিন্তু তারা সহজেই সেই চরিত্রগুলোকে মনে রাখত পারবে। এই জন্যই বেছে কাজ করি, কিছুটা সময় নিয়েই প্রতিটা কাজ করত চেয়েছি।’

বাস্তবে ঘটেছেও তাই, হয়তো কিছুটা সময় লেগেছে কিন্তু ‘একাত্তর’ সিরিজের আর্মি অফিসার ‘সিরাজ’ হোক বা ‘ইতি তোমারই ঢাকা’র এক্সট্রা, ‘মহানগর’-এর ‘এসআই মলয়’ অথবা ‘আলফা’র সেই ‘কালি হিজরা’ বা মিনি সিরিজ ‘সুগার ফ্রি’র লিটন অধিকারী পিন্টু। মোস্তাফিজুর নূর ইমরান প্রতিবার জানান দিয়েছেন যেকোনো চরিত্রে তিনি খুব সহজেই মিশে যেতে পারেন।

‘সাহস’ নামের একটি ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্র। সেন্সর ছাড়পত্র নিয়ে নানা জটিলতা পেরিয়ে এই সিনেমা এখন মুক্তির জন্য প্রস্তুত। এখানে এক মধ্যবিত্ত তরুণ হিসেবে দেখা যাবে তাকে। সাথে আছেন দেশের আরেক আলোচিত এবং শক্তিশালী অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষা। চরকির অফিশিয়াল পেইজে রিলিজ দেয়া টিজার এবং পোস্টার রিলিজের সময় ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘নীলা আর রায়হানের নতুন সংসার চুরমার করে দিচ্ছে এই কোন ঝড়?’। তাই যতটুকু বোঝা যায় আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া নানা অপ্রীতিকর এবং স্পর্শকাতর নানা ইস্যু নিয়েই ‘সাহস’ সিনেমার গল্প। মফস্বল শহরের এক দম্পতি নীরা আর রায়হানের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনাই সিনেমার মূল প্রেক্ষাপট হলেও এর বিস্তৃতি যে সমাজের আরো অনেক বিষয় নিয়েই তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অর্ষার সাথে ইমরানের নজরকাড়া কেমেস্ট্রি হোক বা টিজারের শেষে উদ্ভ্রান্ত এক অসহায়ের আর্তি সব মিলিয়ে ইমরান যে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা কাজটি উপহার দিতে যাচ্ছেন তা বলা যায় নিঃসন্দেহে। উল্লেখ্য এর আগে ছোট্ট ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় প্রদর্শন করলেও এবারই তিনি প্রথমবার মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন বড়পর্দায়; যদিও ছবিটি আসছে ওটিটিতে।

‘সাহস’ টিম প্রথম থেকেই একটা অঘোষিত যুদ্ধ জয় করে আজ এই পর্যায়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। কিছু আপত্তিকর দৃশ্য ও সংলাপের কারণে গত জুনে প্রদর্শনের অযোগ্য ঘোষণা করেছিল সেন্সর বোর্ড। সেসব দৃশ্য ও সংলাপ সংশোধন করে পুনরায় আপিল করার নির্দেশনাও দেয়। কিছু সংশোধন করে পাঠালে সেন্সর ছাড়পত্র লাভ করে। সেই সময় নির্মাতা সাজ্জাদ খান, অভিনেতা মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষা প্রত্যেকেই এই সেন্সর জটিলতা নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। সেন্সর বোর্ডের সিনেমাটির মূল কনটেন্ট বা সমসাময়িক বাস্তবতাকে অশ্লীল বা সেন্সর পাবার অযোগ্য বলে মন্তব্য করা নিয়েও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তারা।

এক সাক্ষাৎকারে মোস্তাফিজুর নূর ইমরান অকপটে বলেছেন- ‘আমাদের সিনেমা অশ্লীল নয়। বাস্তবধর্মী সিনেমা। সিনেমা নয়, বরং সেন্সর বোর্ডই বাতিল হোক- সেটাই আমার প্রত্যাশা। আমরা কোন খারাপ সিনেনা বানাইনি। আমাদের সিনেমাতে খারাপ কিছু নেই। বাস্তবতা ও সত্যটাই বলেছি এই সিনেমাতে। সেন্সর বোর্ড মিথ্যাচার করে আমাদের সাহসকে দাবায়ে রাখার চেষ্টা করছে।’

আমাদের দেশের অভিনেতারা এ সব সময়ে যেখানে সচারাচর মৌনতার আশ্র‍য় নেন সেখানে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন ইমরান। কাজের জায়গা ও ব্যক্তিজীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে সত্য বলার সৎ সাহস এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে মোস্তাফিজুর নূর ইমরান এগিয়ে যাবেন; এই তো আশা।


About The Author

আফজালুর ফেরদৌস রুমন

শখের বশে চলচ্চিত্র ও নাটক নিয়ে লিখি

Leave a reply