যাও পাখি বলো তারে : একটি সুন্দর প্রচেষ্টা
মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের সাম্প্রতিক ছবির মধ্যে এগিয়ে থাকবে ‘যাও পাখি বলো তারে‘
ইন্ডাস্ট্রি এখন বড্ড শহুরে হয়ে গেছে। শহরকেন্দ্রিক গল্পের দিকে বেশিরভাগ নজর গ্রামে খুব একটা যেতে চায় না। এর মাঝে গ্রামীণ গল্পের ছবি দু’একটা হয়ে থাকে। ‘যাও পাখি বলো তারে’ গ্রামীণ গল্পে প্রেমের ছবি। সীমাবদ্ধতা তো কিছু থাকবেই কিন্তু একটা ভালো ছবি বানানোর যে চেষ্টা সেটি প্রশংসনীয়।
পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের সেরা ছবি ‘দুই নয়নের আলো‘। ওটা ৩৫ মিলিমিটারের ছিল আর ডিজিটালে তার ছবির মান সেভাবে ছিল না এবং ‘যাও পাখি বলো তারে’ ডিজিটাল ছবিগুলোর মধ্যে নির্মাণে এগিয়ে।
প্রেমের গল্পের ছবিতে ছেলেমেয়ের মধ্যে কেউ একজন চঞ্চল থাকে কেউ বা শান্ত। যে চঞ্চল তাকে সামলাতে হয় আর তাতেই প্রেমটা জমে। নায়িকা চঞ্চল আর নায়ক শান্ত।
প্রেমের ছবিতে নায়ক-নায়িকার রসায়ন ভালো হওয়া জরুরি। মাহি ও আদর আজাদের রসায়ন প্রথম ছবি হিসেবে যথেষ্ট ভালো ছিল। নায়ক দর্জি বলে সে পরিচয় যখন বান্ধবী বলে মাহির সংলাপটা ছিল অর্থবহ, ‘তাকে দর্জি বলবি না, সে একজন শিল্পী।’ দর্জিকে একজন শিল্পী কয়জনই বা মনে করে! ভালোবাসার মধ্যে সম্মানের বিষয়টা যে গুরুত্বপূর্ণ তাদের রসায়নে এটা ছিল।
ছবিতে মাহির এন্ট্রিটা বেস্ট। বাইকে করে আসার সময় পায়রার উড়ে যাওয়া দেখতে ভাল লেগেছে। প্রেমের গল্পের ছবিতে বরাবরই ভালো। এর আগেও তার এ ধরনের ছবি হয়েছে। তার লুকের মধ্যে রোমান্টিক বিষয়টা ভালো মানায়। কিছুটা মুটিয়ে গেলেও লুক ভালো ছিল। আদর আজাদ বর্তমান সময়ে বেশ প্রমিজিং, তার মধ্যে ভালো ছবি করার তাগিদ আছে। অভিনয় এখনই ন্যাচারাল শুধু এ গুণটাকে ধরে রাখতে পারলেই ভবিষ্যত ভালো তার। এ ছবিতে তার অভিনয় অনেকটাই ভালো। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে সম্ভাবনাও আছে। নায়ক-নায়িকার পরেই পারফরম্যান্সে এগিয়ে থাকবে রাশেদ মামুন অপু। বর্তমানে তাকে পজেটিভ-নেগেটিভ দুই ধরনের চরিত্রেই দেখা যাচ্ছে চলচ্চিত্রে। এ ছবিতে আদর আজাদের বন্ধুর চরিত্রে বেস্ট। তার অভিনয়ে প্রাণ আছে। শিপন মিত্রের ক্যারিয়ারের বয়স অনুযায়ী অভিনয়ের দুর্বলতা এখনো ভালোভাবেই লক্ষণীয়, স্লো ডায়লগ ডেলিভারি তার প্রধান সমস্যা। ন্যাচারালিটি নেই তার অভিনয়ে তাছাড়া উচ্চারণেও কিছু সমস্যা আছে। সুব্রতর অভিনয় অন্যান্য ছবির মতোই আলাদা কিছু না।
সংলাপের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ছিল মাহির একটা সংলাপ,’আমি ভালোবাসার কাঙাল। চায়ের দোকানে গেলে যখন চাচা বলে তোমারে এককাপ চা বানায়া দেই মজা কইরা খাও তখন মনে হয় এর থেকে শান্তির আর কিছু নাই।’ দ্বিতীয় আকর্ষণীয় সংলাপ আদর আজাদের ভালোবাসায় সামাজিক দূরত্ব নিয়ে ‘বাস্তবতা আমি বুঝি আসমান জমিনের ফারাকটাও বুঝি, আর এ ফারাকটাকে আমি শ্রদ্ধাও করি।’ তৃতীয় ভালো সংলাপ নদীতীরে রাশেদ মামুন অপুর ‘মানুষের জীবনটা অনেকটা নদীর মতোই এ কূল ভাঙে তো ও কূল গড়ে।’
গানের মধ্যে টাইটেল সংটা বেস্ট এরপরে ‘এত আলো’ ভালো ছিল বাকিগুলো তেমন উল্লেখযোগ্য না।
পিকচারাইজেশন গ্রামের হওয়াতে ন্যাচারালি ভালো হয়েছে। গ্রামের মেঠোপথে বাইক চালানোর শটগুলো বেশ মনোহর।
ছবির ফিনিশিংটা আনএক্সপেক্টেড ছিল তবে দর্শকভেদে এক্সপেক্টেড মনে হতেও পারে।
সীমাবদ্ধতার মধ্যে ছবির ঘরোয়া যে শটগুলো ছিল সেগুলোতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ঠিকভাবে ছিল না। বরাবরের মতো যে ধরনের বিজিএম দেখা যায় তেমনই ছিল ছবিতে তাই বৈচিত্র্য ছিল না। ফাইটিং আরো বেটার হতে পারত তবে আদর আজাদ চেষ্টা করেছে ভালো করার। ফাইটিংয়ের সময় অ্যাগ্রেসিভ বিষয়টা আরো আনতে হবে সিচুয়েশন ডিমান্ডে। জনগণকে দিয়ে অভিনয় করানো কঠিন তবে এ ছবিতে ভালোই ছিল।
ভালোমন্দ মিলিয়েই ‘যাও পাখি বলো তারে’ সুন্দর একটি ছবি নির্মাণের প্রচেষ্টা ছিল। এ বছরের ভালো ছবির তালিকায় এ ছবিটি থাকবে।
রেটিং: ৭/১০