Select Page

চিপোনোমা : ‘আমি নেতা হবো’র চেয়ে ভালো

চিপোনোমা : ‘আমি নেতা হবো’র চেয়ে ভালো


নাম: চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া
ধরণ: কমেডি ড্রামা
পরিচালক: উত্তম আকাশ
কাস্ট: শাকিব খান (আনজাম), শবনম বুবলি (রানী), সাদেক বাচ্চু (আকবর), কাজী হায়াত (জব্বার), মৌসুমী (বৃষ্টি), ওমর সানী (আব্বাস), ডি জে সোহেল (নিয়াজ), বড়দা মিঠু (স্মাগডিলার), রেবেকা রউফ (আনজামের মা), সুমি (রানীর মা), শাহীন (শাহীন) প্রমুখ।
প্রযোজনা: শাপলা মিডিয়া
ভাষা: বাংলা

♦ নামকরণ: একটা ছবির নামের ওপর ছবিটি কেমন হবে সেটা নির্ভর করে। অনেক দর্শক আছে যারা হলে যায় না শুধুমাত্র ছবির নাম ভালো লাগে না এই কারণে। তার ওপর আবার টাইটেলে ‘পোয়া/মাইয়া’ টাইপ ক্ষ্যাত ওয়ার্ড ইউজ করার মাধ্যমে তারা দর্শক শ্রেণির মধ্যে একটা বিভাজন এনে দিলেন।

এ ছবির গল্পটা হলো দুইজন ফ্রেন্ডকে নিয়ে, যারা পরবর্তীতে একে ওপরের শত্রুতে পরিণত হয়। সে হিসেবে অন্য কোনো নাম রাখা যেতো এবং তাদের মুখের আঞ্চলিক ভাষাটি চমক হিসেবে রাখা যেতো। “চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া” নামটি আমার কাছে একদমই যথার্থ মনে হয়নি।

♦কা.চি.স (কাহিনী+ চিত্রনাট্য+সংলাপ):
উত্তম আকাশ বর্তমান সময়ে সম্ভবত তার ডিরেকশন নিয়ে প্রচুর সমালোচিত হওয়ার কারণে আবার পুরনো ফর্মুলায় ফিরতে চেয়েছেন। ২০০৬ সালে তিনি “ঢাকাইয়া পোলা বরিশাইল্লা মাইয়া” বানিয়েছিলেন। ছবিটি সে সময় বেশ ভালো ব্যবসা করেছিল। সেটার অবশ্য কারণও ছিল। সে সময় অশ্লীলতা রমরমিয়ে চলতো এবং কোনোপ্রকার কাটপিস ছাড়া যদি একটি ছবি মুক্তি পেতো, তাহলে সেটাকেই ঈদের চাঁদ ভাবা হত। যুগ পালটেছে; এখন ২০১৮। স্বাভাবিকভাবেই দর্শকও পরিবর্তন হয়েছে এবং অশ্লীলতা মুক্ত হওয়ার পর নতুন দর্শকও বেড়েছে।

ছবির কাহিনী খুব একটা আহামরি কিছু না। খুব সাধারণভ্যবেই গল্পটি লেখা হয়েছে। সাধারণত কমেডি মুভির গল্পগুলো এমনই হয়। খুব একটা ভিন্নভাবে লেখা হয় না।

ছবির গল্পটা যেমন সাধারণ, ছবির চিত্রনাট্যও তেমনি সাধারণভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। ঠিক একটা গল্প যেভাবে লেখা হয়, ছবির চিত্রনাট্যও সে গতিতে এগিয়েছে। কোনো প্রকার টুইস্ট রাখা হয়নি। রাখা হয়নি এই জন্যে বললাম, চাইলে এই স্ক্রিপ্টে বেশ কয়েকটি টুইস্ট রাখা যেতো। তখন আরো বেশি উপভোগ্য হতো। তবে শেষের দিকে তারা বেশ কিছু সিনে গোলমাল পাকিয়ে ফেলেছেন। যেমন: সব ছবির মতো এ ছবিও নায়ক-নায়িকার মিলনের মাধ্যমে শেষ হয়। কিন্তু অন্যদিকে তাদের বাবাদের পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। এ নিয়ে তাদের কোনো ভ্রূক্ষেপ তো ছিলই না, উল্টো তারা মিলনে ব্যস্ত। এ রকম আরো কিছু সিন রয়েছে খটকা লাগার মতো।

ছবির প্রায় ৮০% ডায়লগ লেখা হয়েছে নোয়াখালী এবং চিটাগাং এর ভাষায়। এই প্রচেষ্টাটা ভালো ছিল। চিটাগাং এর ভাষা কে অনেক বেশি সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেনো একজন সাধারন দর্শকও বুঝতে পারে। সমস্যা হলো শুধু দুইটি পরিবার নয়, ঢাকা শহরের যাদেরই দেখানো হয়েছে তারা সকলেই হয় চাটগাইয়া, না হয় নোয়াখাইল্লা(!) রানী নোয়াখাইল্লা, রানীর বয়ফ্রেন্ড নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলে; বৃষ্টি চিটাগাইঙ্গা, তার এক্স চিটাগাং এর ভাষায় কথা বলে। একজন বড় মাপের ড্রাগডিলার নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলে। এমনকি পুলিশ কর্মকর্তারাও নোয়াখালী ভাষায় কথা বলে (!) মনে হলো আঞ্চলিক ভাষা এই দুটাই (!) ও হ্যাঁ, একজন ছিল, তিনি বাংলা না, হিন্দীতে ডায়লগ ঝেড়েছেন।

ছবিতে আমি তেমন মনে রাখার মতো পাঞ্চলাইন খুঁজে পাইনি। এই ২ ভাষার ওপর ভর করেই ছবি এগিয়ে গেছে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৩০।

♦ টিমওয়ার্ক: প্রথমে চিটাগাংবাসীরা কেমন করেছেন সেটা বলি। বলাই বাহুল্য, এ ছবির প্রাণ শাকিব খান। তিনি যে ঢাকাইয়া ভাষায় অনেক বেশি এক্সপার্ট সেটা আমরা সবাই জানি। চিটাগাইঙ্গা ভাষায় তিনি কেমন করেন সেটাই ছিল দেখার বিষয়। বেশ ভালোই করেছেন তিনি। শুধুমাত্র মৌসুমী এবং তারই চিটাগাইঙ্গা ভাষায় ডায়লগ ডেলিভারি এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ভালো ছিল। তারা দুজনই এ্যাকটিং ভালো করেছেন।

ওমর সানীও মোটামুটি ভালো করেছেন; কিন্তু তিনি মাঝে মধ্যে তিনি বিশুদ্ধ বাংলা বলে ফেলছিলেন যা দৃষ্টিকটু ছিল। তবে তার ক্লাইম্যাক্স সিনের এন্ট্রি বেশ ভালো ছিল। দর্শক সিটি মেরে এবং হাততালি দিয়ে তাকে স্বাগতম জানিয়েছিলেন। কাজী হায়াতের ডায়লগ ডেলিভারি আমার ধৈর্য্যের চরম পরীক্ষা নিয়েছে। তাও বেশ ভালো হয়েছে ছবিতে তার ডায়লগ অন্যান্যদের তুলনায় কম ছিল। রেবেকা রউফ মোটামুটি ভালো অভিনয় করেছেন।

এবার আসা যাক নোয়াখালীর দিকে। প্রধান চরিত্রে থাকা শবনম বুবলি বেশ ভালোভাবেই নোয়াখালীর ভাষাটি রপ্ত করেছিলেন। বেশ ভালো ডায়লগ ডেলিভারি করেছেন। এক্সপ্রেশনে তার যে দূর্বলতা ছিল, এ ছবিতে কিছুটা ওভারকাম করেছেন। ডি জে সোহেল বেশ ভালো অভিনয় করেছেন নোয়াখালী ভাষায়; তবে তার হুটহাট করে ইংরেজি বলাটা এ ছবিতে একটু কম বললেই ভালো হত। এক মুখ দিয়ে ইংরেজি বলছেন আবার বাংলা বলার সময় আঞ্চলিক ভাষা বলছেন; খাপছাড়া ভাব ছিল।

সাদেক বাচ্চুও মোটামুটি ভালো অভিনয় করেছেন, কিন্তু তিনিও মাঝে-মধ্যে শুদ্ধ বাংলা বলে ফেলছিলেন। বড়দা মিঠুর অভিনয়টা এ ছবিতে তেমন একটা ভালো লাগেনি। তার ক্যারেক্টারটা ঠিকমতো লেখা হয়নি। পূর্ববর্তী ছবিগুলোয় তার চেহারায় যে ডেয়ারিং ভাবটা ছিল এছবিতে সেটা খুঁজে পাইনি।

সর্বোপরি এ ছবিতে প্রপার কমেডিয়ানের বেশ অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে যারা এই ২ ভাষায় এক্সপার্ট। এক শাহীন ছাড়া আর কাউকেই খুঁজে পাইনি।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৪৫।

♦ কারিগরি: এই জায়গাটায় আমার চরম অসন্তুষ্টি। ছবির বাজেটে তেমন কোনো কমতি চোখে পড়েনি। কিন্তু এডিটিং এমন আনাড়িকে দিয়ে কেনো করানো হলো(!) VFX এর নামে বাংলা কার্টুন দেখানো হয়েছে। শেষের ক্ল্যাইম্যাক্স সিনে যে VFX দেখানো হয়েছে তাতে চোখ কপালে উঠে গেছে। কালার গ্রেডিংয়ের কাজে প্রব্লেম ছিল। কস্টিউম সিলেকশনেও ভুল ছিল। ওই সিনে শাকিব খানকে কৃশ-এর মাস্ক পড়ানোর কোনো দরকারই ছিল না (!) একটা সাধারণ মাস্ক পড়ানো যেতো যেন শুধু মুখ না দেখা যায়।

লোকেশনের ক্ষেত্রে এফডিসি ব্যবহার করা হলেও যে ২ দুটো বাংলোতে শ্যুট করা হয়েছে সেগুলো ভালো ছিল; গতানুগতিকতার বাইরে ছিল।

সিনেমাটোগ্রাফি নরমাল মনে হয়েছে। এর মধ্যে ভালো করার কোনো চেষ্টা ছিল না অর্থ্যাৎ কোনো সৌন্দর্য ছিল না। ফাইট কোরিওগ্রাফি যেমন করা হয়েছে এগুলোতে দয়া করে চেঞ্জ আনতে হবে। এখনো আমাদের অ্যানলগ যুগের ঘুষি দিয়ে কাচের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলা দেখানো হয়। সময় পাল্টেছে কিন্তু এফডিসি এই দিক টায় কোনো উন্নতি করতে পারলো না।

ডান্স কোরিওগ্রাফি এককথায় জোশ হয়েছে। আইটেম সংও বেশ যত্নসহকারে শ্যুট করা হয়েছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ মোটামুটি ভালো হয়েছে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ২৫।

♦ বিনোদন: ছবিতে শাকিব ভাই চিটাগাং এর ভাষায় কথা বলে; বুবলী আপা, ডি জে ভাই নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলে; মৌসুমী আপা, সানী ভাই চিটাগাং এর ভাষায় কথা বলে। তাদের মুখে আঞ্চলিক ভাষা শুনলে আজিব আজিব লাগে, এই ছিল ছবির বিনোদন!

স্পেশাল কোনো কমেডি সিন রাখা হয়নি, শাহীন ছাড়া তেমন ভালো কোনো কমেডিয়ানকে খুঁজেও পাইনি। শাহীনকেও যথেষ্ট স্ক্রিনটাইম দেওয়া হয়নি, প্রায় ১০ মিনিটের মতো ছিলেন। শাকিব-বুবলীর রসায়ন টা উপভোগ্য ছিল।

ছবিতে মোট গান রয়েছে ৪ টি। সবগুলো গানই উপভোগ্য ছিল। টাইটেল ট্র্যাক এবং “গোলাপি গোলাপি” গান দুইটি তে শাকিব-বুবলী বেশ ভালো নেচেছেন। “কেন আজকাল” গানের কোরিওগ্রাফি দূর্দান্ত হয়েছে।

সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ বিনোদন পাইনি এ
ছবি থেকে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৩০।

♦ ব্যক্তিগত: ছবিটা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিলো না। কমেডি ছবি যেহেতু, আড়াই ঘণ্টা হাসি-খুশি থাকবো এই আশাতেই দেখলাম। সুড়সুড়ি দিয়ে হাসানোর পরিমাণ মোটামুটি ছিল। আর তাদের আঞ্চলিক ভাষা শুনতেই কেমন যেনো আজিব আজিব লাগে। সবাই এই জন্যেই বিনোদিত হচ্ছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমার ভালো লাগেনি, আরো ভালো করার স্কোপ ছিল। তবে অন্তত “আমি নেতা হব” তুলনায় এছবি বেটার।

যত যাই হোক এছবিতে একটা গল্প আছে। “আমি নেতা হব” তে কোনো গল্পই ছিল না! কাটপিস দিয়ে ৪ মিনিটের গান বানানো হয়েছিল। এই ছবিতে অন্তত এগুলো নেই।

রেটিং: ১.৫/৫

♦ ছবিটি কেন দেখবেন: আপনি যদি শাকিব খানের ডাইহার্ট ফ্যান হন তবে এছবি আপনার জন্য মাস্টওয়াচ। নরমাল ফ্যান হলে ছবিটা একবার দেখতে পারেন। আপনার যদি আঞ্চলিক ভাষা শুনতে অনেক হাসি পায় তাহলে এছবি দেখতে পারেন।
“অ্যা’র জীবনডা হ্যাতা হ্যাতা কইরা দিলো হারামজাদা”


মন্তব্য করুন