Select Page

যার সুরে গড়ল ক্যারিয়ার সেই শেখ সাদী খানকে অবহেলা কুমার শানুর

যার সুরে গড়ল ক্যারিয়ার সেই শেখ সাদী খানকে অবহেলা কুমার শানুর

বলিউডে অভিষেক হওয়ার আগে বাংলাদেশী সিনেমার জন্য গান করেছিলেন কুমার শানু। পরবর্তী সেই গানের সুরে হিন্দিতে পেলেন রাতারাতি জনপ্রিয়তা, হয়ে উঠলেন শীর্ষ প্লেব্যাক গায়ক। আর বাংলা গানটির সুর করেছিলেন শেখ সাদী খান। সেই সুরকারকেই হঠাৎ দেখায় অবহেলা করলেন কুমার শানু।

এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি উল্লেখ করেন বরেণ্য সংগীতকার শেখ সাদী খান। বিষয়টি উল্লেখ করে গায়ক ও লেখক লুৎফর হাসান ফেসবুক পোস্টে দুঃখপ্রকাশ করেন।

‘ঘুড়ি’-খ্যাত গায়ক লেখেন, “শ্রদ্ধেয় শেখ সাদী খানের একটা ইন্টার্ভিউ দেখলাম গতকাল। ভীষণ মন খারাপ হলো। তিনি বলছিলেন কুমার শানু সম্পর্কে। কুমার শানু তখনো মুম্বাই যাননি। তার আগেই তাকে দিয়ে শেখ সাদী খান গান করালেন ‘আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা’।

পরবর্তীতে কুমার শানু যখন মুম্বাইতে যান, গিয়ে সেই গান শোনান নাদিম শ্রাবণ জুটিকে। তারা শেখ সাদী খানের গান ‘আমার মনের আকাশে’ ভেঙে তৈরি করলেন ‘মাই দুনিয়া ভুলাদুঙ্গা তেরে চাহাত মে’। প্রথমে সেই গান তৈরি হয়েছিল অডিও ক্যাসেটের জন্য। গান অতিরিক্ত ভালো হওয়ায় সেই গানসহ আরও আট গান ব্যবহার হয় আশিকি সিনেমায়। তারপর ইতিহাস। বলিউড পেল নাদিম-শ্রাবণ জুটি, কুমার শানু ও অনুরাধা পাডোয়াল। আর টি সিরিজ হয়ে গেল সারা দুনিয়ার সেরা অডিও প্রতিষ্ঠানের একটি। 

ভুবন বিখ্যাত হিট গানের আড়ালে চাপা পড়ে গেল প্রকৃত সুরকারের চিহ্নটুকুও। অনেক বছর পর এয়ারপোর্টে কুমার শানুর সঙ্গে দেখা হয় শেখ সাদী খানের। খান সাহেবই এগিয়ে গিয়ে পরিচয় দেন। কুমার শানু শুধু ‘ওহ আচ্ছা’ বলে দ্রুত বিদায় নেন।

শেখ সাদী খানের কথার ভেতর অচেনা একটা কষ্ট স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর আমরা যারা অনুভূতিপ্রবণ, আমরা খুঁজে পাই সফল শিল্পীদেরও কৃতজ্ঞতা বোধের অপার ঘাটতির খোঁজ।”

‘আমার মনের আকাশে’ রেকর্ড করার আগেই আলম খানের সুরে আরেক ঢাকাই সিনেমা ‘তিন কন্যা’য় এ গায়কের অভিষেক ঘটে।

বিএমডিবিতে প্রকাশিত একটি ব্লগ থেকে জানা যাচ্ছে, কলকাতার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘সানন্দা’র পূজার সংখ্যায় বিশেষ সাক্ষাৎকারে কুমার শানু বাংলাদেশের গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং আলম খানকে নিজের ‘প্লেব্যাকের গুরু’ বলে কৃতজ্ঞতা জানান এবং শেখ সাদী খান, সত্য সাহারও অনেক প্রশংসা করেন।

তিনি বাংলাদেশের গীতিকার,সঙ্গীত পরিচালকদের মেধার ভূয়সী প্রশংসা করলেন। কথা প্রসঙ্গে জানালেন— ভারতীয় ছবির গানে ১৯৯০ সালে ‘আশিকি’ ছবির গান দিয়ে তার হিন্দি প্লেব্যাকে যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তার পেছনেও বাংলাদেশের  ছবির গানের সুরের অবদান আছে। ‘আশিকি’র ‘ম্যায়নে দুনিয়া ভুলাদুঙ্গা ম্যায়’ এবং ‘দিল কা ক্যায়া কসুর’ ছবির ‘আশিকি ম্যায় হার আশিকি’ গানটির সুরটা বাংলাদেশেরই শেখ সাদী খানের সুর করা ‘আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা’ গানটির সুর থেকেই নেয়া।

তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালে ফজল আহমেদ বেনজিরের ‘হেফাজত’ ও ‘প্রতিরোধ’ ছবির জন্য বেশ কয়েকটি গান তৈরি করেন নজরুল ইসলাম বাবু ও শেখ সাদী খান। আমি তখনও হিন্দি ছবিতে জনপ্রিয়তা পাইনি বা নিয়মিত হইনি। কলকাতার ছবিতেই গান গাইতাম। গুরু আলম খানের ‘তিন কন্যা এক ছবি’ গানটির জন্য বাংলাদেশে বেশ পরিচিত ছিলাম। ‘প্রতিরোধ’ ছবিতে হৈমন্তী শুক্লার গান রেকর্ডিংয়ের জন্য কলকাতায় আসেন শেখ সাদী খান। সেখানে কলকাতার স্টুডিওতে আমার  সাথে  দেখা  এবং আমাকে ‘হেফাজত’ ছবির  দুটি  গানের কণ্ঠে দেয়ার জন্য বলেন যার একটি ছিল ‘আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা’। পরবর্তীতে নানা কারণে ‘হেফাজত’ শেষ না হওয়ায় গানটি আর আলোর মুখ দেখেনি। একই ছবির জন্য আশা’দির (আশা ভোঁসলে) গাওয়া ‘কাল সারারাত ছিল স্বপ্নের রাত’ গানটিও ছিল।

পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে পরিচালক ফজল আহমেদ বেনজির ‘প্রেমের প্রতিদান’ ছবিতে গান দুটো যুক্ত করেন। রেকর্ডিং করা গানটির একটি কপি রয়ে যায় আমার কাছে। ১৯৮৯ সালে নাদিম-শ্রাবণ জুটি ‘আশিকি’ ছবির সবগুলো গানের জন্য আমাকে প্রস্তাব দিলেন। আমার কাছ থেকেই রেকর্ড করা ‘আমার মনে আকাশে আজ’ শুনলে দারুণ মেলোডিয়াস সুরটা তাদের মনে ধরে যায়। যেহেতু গানটি বাংলাদেশের ছবিতে তখনও যুক্ত হয়নি তাই নাদিম শ্রাবণ ‘আশিকি’ ছবির ‘ম্যায়নে দুনিয়া ভুলাদুঙ্গা’ গানটির প্রথম অন্তরার সুরটা বাংলাদেশের গানটা থেকে নেন যা ছবি মুক্তির আগেই গানটা সুপারহিট হয়ে যায়। সুরটা এতো পছন্দ হয়েছিল যে পরবর্তীতে ‘দিল কা ক্যায়া কসুর’ ছবির ‘আশিকি ম্যায় হার আশিকি’ গানটির পুরোটাতেই রাখেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের ‘প্রেমের প্রতিদান’ ছবিতে গানটি যুক্ত হলে সেখানেও গানটি সুপারহিট হয়। এই একই সুরে ওই ছবিতে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠেও আরেকটি গান আছে যার কথাগুলো শুধু ভিন্ন। আসলে ভালো একটা সুর সবাইকেই আকর্ষণ করে।


Leave a reply