রইস ও বিজয়ের গল্প
সেলিনা হোসেনের উপন্যাস থেকে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের ক্লাসিক ছবি ‘হাঙর নদী গ্রেনেড‘-এ টাচি ক্যারেক্টার ছিল রইস। রইস চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতার নাম বিজয় চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের ছবির তালিকা করলে দর্শকের পছন্দের তালিকায় এ ছবিটি থাকে। স্পেশালি ‘রইস’ চরিত্রের আবেদন ছবিটিতে অনেক। বোবা-কালার ভূমিকায় কঠিন ছিল চরিত্রটি এবং ছবির শেষে তার করুণ মৃত্যুর জন্য চরিত্রটি টাচি হয়ে ওঠে।
বিজয় চৌধুরী ঢাকার দক্ষিণ বাড্ডার ছেলে। সেখানেই বড় হয়েছেন। গ্রামের বাড়ি গাজীপুর। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার আইডিয়াল কলেজে।
পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম এ ছবির ‘রইস’ চরিত্রের জন্য যখন উপযুক্ত অভিনেতা খোঁজ করছেন তাঁর সহকারী পরিচালক বিজয়ের কথা বলেন। বিজয়ের সাথে যোগাযোগ করা হয়। বিজয় যান এফডিসিতে। পরিচালকের সাথে কথা হয়। ‘রইস’ চরিত্রের জন্য তাকে চূড়ান্ত করা হয়।
বিজয় চৌধুরী প্রথম অভিনয় করেন রায়হান মুজিব পরিচালিত ‘প্রেমপ্রীতি’ ছবিতে। এছাড়া সালমান শাহ-র ‘রঙিন সুজন সখি’ ও সোহেল চৌধুরী-দিতির ‘হিংসার আগুন’ ছবিতে অভিনয় করেন।
ছবির জন্য চাষী নজরুল ইসলাম বিজয়কে একটা কুকুর সংগ্রহ করতে বলেন যে সবসময় রইসের সাথে থাকবে। ছবিতে যে কুকুরটিকে দেখা যায় তার কথা বলা হচ্ছে। বিজয় কুকুরটির নাম দেন ‘ভোলা।’ ভোলার সাথে দারুণ সখ্য গড়ে ওঠে বিজয়ের।
ছবির স্যুটিং হয় মানিকগঞ্জের ঝিটকা গ্রামে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসত স্যুটিং দেখতে। চাষী নজরুল ইসলাম তখন নামকরা পরিচলক মানুষ জানতেন। সুচরিতা, সোহেল রানা, শর্মিলী আহমেদ, মিজু আহমেদ, নাসির খান তাদের মতো গ্রেট আর্টিস্টরা ছিল মানুষের আগ্রহের কেন্দ্র। বিজয় রইস চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সুচরিতা, সোহেল রানা, শর্মিলী আহমেদ, মিজু আহমেদ তাদের স্নেহধন্য যেমন হয়েছেন পাশাপাশি অন্তরা, দোদুল, ইমরান তাদের সাথেও বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক হয়েছিল। বিজয় অন্তরার অকালমৃত্যুর জন্য নিজের কষ্ট প্রকাশ করেন।
ছবিতে কাজ করার দুটি স্মরণীয় স্মৃতি বিজয়ের মুখে শোনা-
* মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরে অন্তরা-কে তার বাবা যখন বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য আসে চাষী নজরুল ইসলাম দৃশ্যটা বুঝিয়ে দেন বিজয়কে। দৃশ্যে বোঝাতে হবে অন্তরাকে নিয়ে যাবার সময় তার কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু বারবার দেখানোর পরেও দৃশ্যটার টেক ওকে হচ্ছিল না। তখন পরিচালক রেগে চড় বসিয়ে দেন। এর পরের শটেই ওকে হয় তখন বিজয় তার অভিনয়ে পারফেক্ট ছিল।
* শেষ দৃশ্যে পাকিস্তানি হানাদার যখন রইসকে গুলি করে আর রইসের মৃত্যু হয় স্যুটিং-এ ক্যামেরার বাইরে থাকা শেকল দিয়ে আটকানো কুকুর ভোলা সর্বশক্তি দিয়ে দৌড়ে আসে। কুকুরটি মনে করে রইস বা বিজয় সত্যি সত্যি মারা গেছে। সে পাক হানাদার চরিত্রে অভিনয় করা লোকটিকে তাড়া করে। লোকটি ভয় পেয়ে ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিলে কুকুরটি চারপায়ে লাথি দিতে থাকে দরজায়। তখন বিজয় উঠে ‘ভোলা’ বলে ডাক দিতেই কুকুরটি জাস্ট সারপ্রাইজড হয়ে যায়। বিজয়ের ভাষায়-‘পোষা প্রাণীকে ভালোবাসলে তারাও যে মানুষকে ভালোবাসে সেদিন চাক্ষুষ দেখেছি।’
‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে বিজয় চৌধুরী ধন্য মনে করেন নিজেকে। তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম-এর প্রতি। আমরাও আনন্দিত তার সাথে পরিচিত হতে পেরে এবং মানুষকে জানাতে পেরে। ‘রইস’ চরিত্রটি নিজগুণে মুক্তিযুদ্ধের ছবির দর্শকের মনে অমর হয়ে আছে, থাকবে পাশাপাশি বিজয় চৌধুরী নামটিও বেঁচে থাকবে ‘রইস’ চরিত্রের অসাধারণ অভিনয়গুণে।