রাজমহলের রোজিনা
তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের রাজমহলের ‘রাজনন্দিনী’। তাঁর ঠোঁটের কোণায় একটি তিল কেড়ে নিয়েছিল হাজারো ‘যুবরাজ’ এর ঘুম,ভালোবেসে তাঁরা ডাকেন ‘মানসী’ নামে। ‘শাহী দরবার’ এ তিনি খ্যাত ‘আনারকলি’ নামে,ডাকাত সর্দার তাঁর প্রেমে পড়ে নাম দেন ‘সুলতানা ডাকু’। টানা চোখ ও মিষ্টি হাসির এই রুপের রানী ‘সুরুজ মিঞা’র কল্পনায় একজন ‘কুঁচবরণ কন্যা’,ভালোবাসার জন্য গেঁথে যান ‘বিনি সুতোর মালা’। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় নায়িকা ‘রোজিনা’। ১৯৫৫ সালের ২০ এপ্রিল তার জন্ম।
আসল নাম রওশন আরা রেনু,মায়াবড়ির বিজ্ঞাপন করে তখন তিনি সুপরিচিত,বাংলাদেশের প্রথম জনপ্রিয় মডেল তিনি।সেই সুবাদেই ডাক পান চলচ্চিত্রে অভিনয়ের। ১৯৭৬ সালে এফ কবির চৌধুরীর ‘জানোয়ার’ ছবিতে স্বল্প চরিত্রের মাধ্যমে অভিষেক ঘটে চলচ্চিত্র পাড়ায়। এর পরের বছরেই নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন রাজমহল সিনেমায়।প্রথম সিনেমা হিট,হাতে আসতে থাকে অনেক চলচ্চিত্র,নতুন নায়িকা যেন মন কেড়ে নিল দর্শক,নির্মাতা থেকে প্রযোজকদের ও। একে একে অভিনয় করেন কসাই,গাঁয়ের ছেলে, অভিযান, অবিচার, মহানগর, আলাদিন আলীবাবা সিন্দাবাদ, শীষনাগ, বৌমা, ধনী গরীব, সাজানো বাগান, ক্ষতিপূরণের মতো সব ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র।
অভিনয়,সৌন্দর্যতা দিয়ে হয়ে উঠেন বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম শীর্ষ নায়িকা, পোশাকী ছবিতে তিনি অনন্য। পরবর্তীতে পারিবারিক ও সামাজিক ধারার ছবিতেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন, যা আরো গ্রহনযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয় দর্শক মহলে।
প্রযোজক হিসেবেও তিনি সফল, প্রযোজনা করেন জীবনধারা, দোলনা’র মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্র।বাংলাদেশের বাইরে পাকিস্তান,ভারতের চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেন। নব্বই দশকের প্রথম দিকেই তিনি চলচ্চিত্র জগত ছেড়ে চলে যান, এরপর প্রায় এক যুগ বিরতি দিয়ে ২০০৬ সালে অভিনয় করেন ‘রাক্ষুসী’ চলচ্চিত্রে। এটাই এখন পর্যন্ত তাঁর সর্বশেষ চলচ্চিত্র। গুরুত্বহীন চরিত্র করে নিজেকে ম্লান করেননি, এটাও ক্যারিয়ারের অন্যরকম সার্থকতা।
পোশাকী ছবির নায়ক ওয়াসিমের সিংগভাগ ব্যবসাসফল ছবির নায়িকা রোজিনাই, আলমগীর এখনো সেই সোনালি সময়ের মতো রোজিনার নায়ক হতে চান। ভারতীয় চিত্রনায়ক মিঠুন চক্রবর্তী হাত ছাড়তে চান না রোজিনার, পাকিস্তানের নায়ক নাদিম গানে গানে রোজিনাকে বলেন ‘হাম দো হ্যায়’। ‘তোমাকে চাই আমি আরো কাছে’ গানে যেমন প্রাণবন্ত তেমনি ‘তুমি আমার কত চেনা’ গানে ছড়ান মুগ্ধতা। এছাড়া ‘এই মন তোমাকে দিলাম’র মত ক্ল্যাসিক্যাল গান তো রয়েছেই,আছে আরো জনপ্রিয় গান।
বর্ণিল ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই ‘কসাই’ এর জন্য পার্শ্ব চরিত্রে প্রথম জাতীয় পুরস্কার পান তিনি, এরপর ‘জীবনধারা’র জন্য প্রধান চরিত্রে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। পুরস্কার আরো যোগ হতে পারতো অনেক ছবিতেই, বিশেষ করে ‘বিনি সুতোর মালা’র জন্য। বাচসাস পুরস্কার, পাকিস্তানের নিগার অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু পুরস্কার। বেশ কয়েক বছর প্রবাস জীবন কাটালেও,এখন বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন। জাতীয় পুরস্কারের জুরি বোর্ডের সদস্য হয়েছেন, এখন সেন্সর বোর্ডেএ সদস্য। সম্প্রতি সরকারি অনুদানে সিনেমা নির্মাণ করছেন প্রথমবারের মতো, অভিনয়ও করছেন।