রাজীবকেন্দ্রিক সাত ছবি
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা অভিনেতা কিংবদন্তি রাজীব। তাঁর অভিনীত অসংখ্য ছবির মধ্যে নির্বাচিত কিছু ছবি নিয়ে এ লেখা। কিছু ছবি আছে যেগুলোর গল্প রাজিবকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বা তাঁকে প্রাধান্য দিয়ে গল্প এগিয়েছে। এমন ছবিগুলোকে ‘রাজিবকেন্দ্রিক ছবি’ বলা যায়। সেসব ছবি নিয়েই এ আয়োজন।
১. চাঁদাবাজ (১৯৯৩)
কাজী হায়াৎ পরিচালিত ছবি। রাজিবকেন্দ্রিক ছবিতে এ ছবি প্রথমেই থাকবে। ভয়ঙ্কর অভিনয় করেছিলেন। ছবিতে রাজিব একজন চাঁদাবাজ। সোহেল চৌধুরীর পরিবারকে শর্তসাপেক্ষে চাঁদা দাবি করে কিন্তু সোহেলের পরিবার দিতে রাজি হয় না। তখন সে চাঁদা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তারিখ পরিবর্তনের সাথে সাথে। একসময় রাজিব সোহেলের বোন কবিতাকে তুলে এনে ধর্ষণ করে তারপর সোহেলের বাবাকেও খুন করে এমনকি প্রতিবাদী সাদেক বাচ্চুকেও। ছবিতে তার জনপ্রিয় সংলাপ ছিল ‘ইল বাবা।’ তিনি ভণ্ড বাবার পোশাকে থেকে কালো ব্যবসা চালাতেন। তাঁর গেটআপও ছিল ভয়ঙ্কর এবং ছবির পোস্টারেও তাঁকে ফোকাস করা হয়।
২. মীরজাফর (১৯৯৪)
আবুল খায়ের বুলবুল পরিচালিত ছবি। রাজিবকেন্দ্রিক অন্যতম সেরা ছবি। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি পক্ষের থেকে স্বাধীন দেশে খোলস পাল্টে ফেলেন রাজিব। ফকির বাবার বেশ ধরে দল গঠন করে গোপনে আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। রুবেল তাঁর চালাকি বুঝতে পেরে তাকে ধরতে কৌশল অবলম্বন করে এবং ধরা পড়ে যায়। রুবেলকে মারতে শরীরের সাথে বোম বেঁধে দেয় কিন্তু রুবেল কৌশলে বেঁচে যায়। শেষ পর্যন্ত রাজিবের পতন ঘটে। ছবিতে তাঁর জনপ্রিয় সংলাপ ছিল ‘শান্তি নাই রে শান্তি নাই।’
৩. দুর্নীতিবাজ (১৯৯৫)
এম এ মালেক পরিচালিত এ ছবিতে রাজিব দুর্নীতিবাজ পুলিশ থাকে। হুমায়ুন ফরীদির সাথে তাঁর সম্পর্ক তাই ফরীদির অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সৎ পুলিশ অফিসার ইলিয়াস কাঞ্চনকে পদক্ষেপ নিতে বাধা দেয়।
৪. শয়তান মানুষ (১৯৯৬)
মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ছবি। এ ছবিতে শয়তানী বুদ্ধির মানুষের চরিত্রে রাজিবের পাশাপাশি হুমায়ুন ফরীদিও ছিলেন। যেহেতু প্রধান দুই চরিত্র ভাগ হয়ে যায় তাই রাজিবকেন্দ্রিক ছবিও বলা যায়। তবে রাজিব ছবির শেষের দিকে পজেটিভ হয়ে যান পরিস্থিতির সাথে। ছবির নায়ক-নায়িকা ছিলেন ওমর সানী, আমিন খান, মৌসুমী ও অন্তরা।
৫. ভণ্ড (১৯৯৮)
শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত জনপ্রিয় ও ব্লকবাস্টার ছবি। সে বছরের সবচেয়ে আলোচিত ছবি ছিল। রাজিবের ডাবল রোল ছিল। একজন সাদামাটা আরেকজন ভণ্ড। ভণ্ড রাজিব সুযোগ বুঝে একই চেহারার অন্য রাজিবকে হত্যা করে নিজে তার চরিত্রে গিয়ে ভণ্ডামি করে সম্পদশালী হন। তামান্না তাঁর মেয়ে এবং রুবেল ছবির নায়ক। মাল্টিস্টারার ছবি ছিল। হুমায়ুন ফরীদি, এটিএম শামসুজ্জামান কমেডি চরিত্র করেছেন এবং খলিল ছিলেন পজেটিভ। ‘ভণ্ড’ টাইটেলে রাজিবই ছিলেন।
৬. আব্বাজান (২০০১)
কাজী হায়াৎ পরিচালিত ছবি। ‘আম্মাজান’ ছবির তুমুল জনপ্রিয়তা ও বিশাল সাফল্যের পর কাজী হায়াৎ ‘আব্বাজান’ ছবি নির্মাণ করেন। যদিও এ ছবি প্রথমটির মতো সফল হয়নি। তবে ছবির গল্প দারুণ ছিল এবং যথারীতি মান্নার অভিনয়ও অনবদ্য ছিল। তবে ছবির প্রধান চরিত্র ছিলেন রাজিবই এবং নামভূমিকা তাঁরই। ছবির শেষটা ছিল মর্মান্তিক। ‘তোমার মরণকালে কাঁদবে যে জন’ গানটি রাজিবের লিপেও ছিল এবং জনপ্রিয় গান।
৭. ভেজা বিড়াল (২০০১)
শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ছবি। রাজিব ছিলেন ছবির টাইটেলে কৌশলী ভিলেন এবং এজন্যই ভেজা বিড়াল যার অর্থ কৌশলী। এটিএম শামসুজ্জামান রাজিবের সাথে থাকলেও তিনি ছিলেন পজেটিভ। রাজিব কৌশলে মৌসুমী ও সিমলা দুই বোনের পরিবারে ঢুকে পড়ে এবং তাদের শত্রুতে পরিণত হয়। মান্না রাজিবের চালাকি ধরে ফেলে এবং তাঁকে শাস্তি দিতে চেষ্টা করলে সিমলা মারা যায় রাজিবের হাতে। রাজিব শেষ পর্যন্ত তাঁর পরিণতি ভোগ করে।
এই ছবিগুলোতে রাজিব কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং তাঁকে ঘিরে ছবিগুলোর গল্প এগিয়েছে। তাঁর মতো কিংবদন্তি অভিনেতার অভিনয়ক্ষমতাই এমন ছিল যে তখন তাঁকে ঘিরেই ছবি হত। আজকের দিনে তাঁর মতো অভিনেতা নেই বলেই কেন্দ্রীয় চরিত্রের ছবির বড় অভাব। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।