রাজ্জাককে নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’, বাপ্পারাজ-শাকিবের প্রতিক্রিয়া, ভেঙে যাচ্ছে পরিচালক সমিতি!
কয়েকদিন ধরেই এফডিসিতে ঘটে চলেছে একের পর এক দু:খজনক ঘটনা। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে নানা ঝামেলা, বাপ্পারাজ, শাকিব খান, মাহিকে পরিচালক সমিতির নোটিশ দেয়াসহ বিভিন্ন ঘটনা এরইমধ্যে ঘটেছে। এফডিসিতে গতকাল বিকেলের দিকে নায়করাজ রাজ্জাককে ঘিরে পরিচালক বদিউল আলম খোকন ও গাজী মাহবুবের কথা কাটাকাটি এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতিও হয়েছে বলে জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে পরিচালক গাজী মাহবুব বলেন, নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে নানা কটু কথা বলেন পরিচালক বদিউল আলম খোকন। তিনি বলেন, নায়করাজ দুই নাম্বার লোক। রাজলক্ষী কমপ্লেক্স দুই নাম্বারি করে করেছেন। খোকন সাহেব আরো বলেন, তিনি নাকি মুখ খুললে আরো অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। এই কথা শোনার পর আমি প্রতিবাদ করি। আমি বলি যে, রাজ্জাক সাহেবকে আজ আপনি খারাপ বলছেন, কাল তো নায়ক আলমগীর সাহেবকে বলবেন। এরপর নায়ক ফারুক সাহেবকে বলবেন। কিছুদিন আগে অনেকগুলো ঘটনা হয়েছে। আপনি পেয়েছেন কি, আপনি তো মানসিক রোগী। এই কথার উপর উত্তেজিত হয়ে খোকন সাহেব বলেন, তুমি আমাকে অপমান করেছো। আমি মহাসচিব। আমি তোমাকে নিষিদ্ধ করে দেব। এফডিসি ঢুকতে পারবানা তুমি।
গাজী মাহবুব আরো বলেন, একটা সময় আমি উত্তেজিত হয়ে বলেছি যে, এফডিসি কি আপনার? এটা কি আপনার বাবা বানিয়ে দিয়েছেন। আপনি আমাকে এটা বললেন কেন? আমি পরিচালক সমিতির কেবিনেটের রানিং সদস্য। এরপর তিনি আমাকে আরো অনেক খারাপ কথা বলেছেন। এরপর আমাকে ধাওয়া করা হয়েছে। এক পর্যায়ে বদিউল আলম খোকনের হাতে ছুরিও দেখলাম। এরপর আমি দৌড় দিয়েছি। আমার বাম হাতে ব্যাথাও পেয়েছি। প্রয়োজনে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, কাজী হায়াত যারা সিনিয়র আছেন তাদের পরামর্শে আমি আইনের ব্যবস্থা নিব। পরিচালক সমিতির সভাপতি তো আমাকে ফোন করেননি। পরিচালক সমিতির সিসি ফুটেজ দেখতে বলেন।
এ বিষয়ে খোকন বলেন, এফডিসি কি ছুরি নিয়ে ধাওয়া দেয়ার জায়গা? যারা সেসময় উপস্থিত ছিলেন এ বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করলে জানতে পারবেন। আমার মুখ থেকে জানাটা ঠিক হবে না। এ ব্যাপারে সভাপতির নিষেধ রয়েছে।
সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, আমি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলাম না। তবে যেটুকু শুনেছি তাতে মনে হয়েছে তিলকে তাল করা হচ্ছে। যারা ছিল তাদেরকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম। আমাকে বলেছে যে, খুবই সামান্য একটি বিষয় ছিল এটি। হাতে ছুরি মারার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। এসব বলে রাজ্জাক সাহেবকে আরো অপমান করা হচ্ছে বলে মনে করি আমি। ছোট্ট কথাটা অনেক বেশি বড় করে বলা হচ্ছে। কথাপ্রসঙ্গে সেখানে রাজ্জাক সাহেবকে নিয়ে সামান্য কিছু কথা হয়েছে। রাজ্জাক সাহেব অনেক সম্মানীয় ব্যক্তি। তাকে নিয়ে কোনো বাজে কথা আমি মেনে নিব না। তারপরও এ বিষয়টি নিয়ে আমি পরিচালক সমিতির সকলের সঙ্গে কথা বলব । দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, আমি রাজ্জাক সাহেবকে ফোন করে বলেছি, যা ঘটেছে তার জন্য আমি দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে পরিচালক সমিতির সবাইকে নিয়ে আবার বসবেন গুলজার। তখন নিজেদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান।
খোকন ও গাজী মাহবুবের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার সময় উপস্থিত পরিচালকের মধ্যে ছিলেন শাহ আলম কিরণ, শাহীন সুমন, সাফিউদ্দিন সাফি, সাইমন তারিক, অপূর্ব রানা ও ফাইটার আরমান প্রমুখ।
এ ঘটনার পর নায়করাজের ছেলে চিত্রনায়ক বাপ্পারাজের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে মন্তব্য করার কিছুই নেই। শুধু একটি কথাই বলবো, বদিউলের মতো পরিচালক আমার বাবাকে নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা রাখেন কি-না সেটা সবারই জানা।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শাকিব খান বলেন, কিছু বললেই নিষিদ্ধ, কিংবা পাল্টা কটুক্তি! এ রকম আচরণ তো কোনো সময়েই ছিল না। তারা তো কেউ ডিকটেটর নন! তারা আমাদের সহকর্মী, অথচ এফডিসির সাংগঠনিক পরিবেশ দিনকে দিন এই অবস্থায় দেখে খুব আহত হচ্ছি প্রতিদিন।
তিনি আরো বলেন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা কি এজন্য সংগঠন করবো, যে সংগঠন আমার সিনিয়র, আমাদের নায়করাজকে অসম্মান করার ধৃষ্টতা দেখাবে। আমি সত্যিই হতবাক ক্রমাগতভাবে এফডিসির এই চেহারা-চরিত্র দেখে। নায়করাজকে নিয়ে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এদেশ মেনে নেবে না।
শোনা যাচ্ছে, চলমান সংকটে সমিতিকে ভেঙে দিয়ে নতুন করে কমিটি করার কথাও ভাবছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে সিনিয়র বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় পরিচালক নতুন পরিচালক সমিতি গঠনের কথাও বলেছেন। এরই মধ্যে অনেকের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। বর্তমান সমিতির অধিকাংশ পরিচালক সিনিয়রদের প্রস্তাবের সঙ্গে একাত্মতাও ঘোষণা করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র : মানবজমিন, কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, প্রথম আলো