একজন অপরাধীর বিবর্তন, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ও ‘রান আউট’ হবার গল্প
*** নো স্পয়লার ***
(এখানে আমি যা কিছু বলেছি সম্পূর্ণ নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলেছি, সবার মতের সাথে ও দৃষ্টিভঙ্গির সাথে নাও মিলতে পারে)
যেকোনো ভিন্নধর্মী সিনেমা দেখার ক্ষেত্রে বলাকা সিনেমা হলের প্রথম দিনের মর্নিং শো আমার প্রিয় সঙ্গী। রান আউট নিয়ে আমি অনেক বেশি এক্সাইটেড ছিলাম এবং ট্রেইলার তাও ভালো লেগেছিল। তাই এবারও ফার্স্ট শো ধরলাম বলাকায়।
একটা সিনেমায় আমি সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে ধরার চেষ্টা করি গল্প। রান আউটের গল্পটা পরিষ্কার, গোছালো এবং চমৎকার। আমাদের সমাজের গড ফাদাররা কখনই নিজেরা বড় বড় অপরাধ করেন না। তারা তাদের ডান হাত তথা “প্রোডাক্ট” দেরকে দিয়ে নিজেদের কাজ হাসিল করেন। রান আউটে অনেকগুলো ছোট ছোট গল্প ছিল। তার মধ্যে একটা ছিল, কিভাবে একজন সাধারণ মানুষকে গড ফাদাররা নিজেদের “প্রোডাক্ট” হিসেবে গড়ে তুলেন এবং দাবার গুঁটি হিসেবে চালতে থাকেন নিজেদের নিল নকশা বাস্তবায়নে।
রান আউটে আরও ফুটে উঠেছে কঠিন বাস্তবতা ও মানুষরূপী হায়েনার ছোবলের শিকার হওয়া একজন সিঙ্গেল মায়ের অন্ধকার জগতে উথাবসা এবং নিজের সন্তানকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা। আর ছোট্ট একটা মেয়ে যে কোনদিন নিজের বাবাকে দেখেনি বা জানে না কে তার বাবা, সেই মেয়েটার ছোট্ট একটা জগত।
গল্প পরিবেশনার স্টাইল টা পছন্দ হয়েছে আমার। অন্ধকার জগতের মানুষগুলোর মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, স্বার্থ, এবং বিবর্তনের ধারায় কিভাবে একজন মানুষ অপরাধী হয় ও কঠিন পরিনতির দিকে এগিয়ে যায় সেটাই দেখানো হয়েছে রান আউটে।
এই সিনেমার সঙ্গীত বেশ ব্যাতিক্রমধর্মী ছিল। আমার কাছে গানগুলো খুবই ভালো লেগেছে, ভাইকিংস বুঝিয়েছে এখনও তাদের দম আছে।
সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফি বেশ ভালো ছিল, এডিটিং ভালো ছিল, গানের করিওগ্রাফি ও লোকেশন খুবই চমৎকার ছিল। আর কিছু কিছু সংলাপ খুবই চমকপ্রদ ছিল।
যদি অভিনয়ের কথায় আসি, তারিক আনাম খান একজন জাত অভিনেতা। একজন গড ফাদারের সাইকোলজি, তার চিন্তা ভাবনা, এটিচিউড, ছক কষা এগুলো দুর্দান্তভাবে পর্দায় তুলে ধরেছেন।
আমি ভাবতে পারি নাই সজল এরকম একটা চরিত্র প্লে করতে পারবে। সজলের চরিত্রে ক্ষণে ক্ষণে প্রচুর ডাইভারজেন্স ছিল, মুহূর্তে মুহূর্তে ওর চরিত্র বিকশিত হচ্ছিল এবং সেটা সজল খুব ভালো ভাবেই করতে পেরেছে। চরিত্র টা খুব চেলেঞ্জিং ছিল এবং সজল নিজের কাজে সফল।
কিন্তু মৌসুমী নাগ !!! আমি ইম্প্রেসড। মৌসুমী নাগ একই সাথে আমার কাছে এই সিনেমার নায়িকা এবং লেডি ভিলেইন !!! তার চরিত্রের বাঁক অনেক গুলা ছিল। অনেক বেশি ছক কষে ও মেপে মেপে তাকে চরিত্র টেনে নিয়ে যেতে হয়েছে। তার চরিত্রের কয়েকটা ফেইজ ছিল। গড ফাদারের রক্ষিতা, সিঙ্গেল মাদার, কুটিল ছক কষা, সজলের সাথে রোমান্স করা – সব গুলো ক্ষেত্রে তিনি জাস্ট ফাটিয়েছেন ।
এছাড়া পুলিশ অফিসার ওমর সানি, বাচ্চা মেয়েটা ও বেশ ভালো অভিনয় করেছে। কিন্তু রোমানা স্বর্ণার চরিত্র টা আমার কাছে ছোট মনে হয়েছে এবং তিনি পর্দায় খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেন নি।
তন্ময় তানসেন পদ্ম পাতার জলেই বুঝিয়েছেন তিনি কি জিনিস, এই সিনেমায় নিজেকে আরও ভালো করে প্রমাণ করেছেন।
রান আউট বাংলা সিনেমার গতানুগতিক ফর্মুলা থেকে বের হয়ে এসেছে এবং আমি সত্যি এজন্য তন্ময় তানসেনের কাছে কৃতজ্ঞ ।
আমি এই সিনেমাকে দশে আট দিব ।
পুনশ্চ – নায়লা নাঈম খুব একটা ভালো নাচতে পারেন না। তবে পর্দায় তাকে আইটেম গানে খুব হট ও আবেদনময়ী লেগেছে !!! আমাদের দেশের হল মালিকরা ভালো সিনেমা হলে চালাতে চায় না !!! তাই যদি বাধ্য হয়ে পরিচালকদের কেউ কেউ একটু বাজে পোস্টার ছাপান কিংবা নায়লা নাইমদের পর্দায় নিয়ে আসেন তবে আমার আপত্তি নেই। কারণ আমি ভালো গল্প ও ভালো সিনেমা পেলেই খুশি। প্রচারণার স্বার্থে এইরকম একটু আধটু দুষ্টামি করলে ক্ষতি নাই 😛