রাবু বা সোমার গল্প
আমার মন খারাপ.. আজ আমার মন খারাপ…
বারবার বিড়বিড় করতে থাকে মেয়েটি ‘আজ আমার মন খারাপ’ বলে। সারা উঠোনের এপাশ-ওপাশ একা একা হাঁটতে হাঁটতে বারবার বলতে থাকে। যেন তাকে বোঝার কেউ নেই বাড়িতে। ছোটবোন তার বিড়বিড় করা দেখে নিশ্চুপ হয়ে। নাম তার রাবু। বয়সের তুলনায় মানসিক বৃদ্ধি না হওয়াতে সে বোঝে না কথা কোথায় কিভাবে কতটুকু বলতে হবে।
রাবু সবার বড় ভাইবোনদের মধ্যে। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে রাবু বড় তাছাড়া শিশুর মতো সরল হওয়াতে সে বাড়িতে আদরটা বরং বেশিই পায়। পাশের বাড়িতে বেড়াতে গেলে যখন তাদের বাড়িতে দামি দামি অনেককিছু দেখে সে বলে-‘খোকা যখন চাকরি করবে তখন অনেককিছু আমাকে কিনে দেবে খোকা বলেছে’।
রাবুকে একদিন বাড়ির মাস্টার বলে বেড়াতে নিয়ে যাবে, শুনে তার সে কী আনন্দ! সে আনন্দে নাচতে থাকে বেড়াতে যাবে বলে। নৌকায় করে ঘুরবে মাস্টারের সাথে। ছোটভাই মন্টুর দেখা পেলে লাফিয়ে বলে-‘মন্টু, যাবি আমাদের সাথে বেড়াতে?’ মন্টু না-সূচক মাথা নাড়ে। রাবুকে নৌকায় নিয়ে মাঝ নদীতে মাস্টার ছইয়ের ভেতর ঢুকে পড়ে। তারপরের ঘটনাটি নন্দিত নরকের যাত্রা।
রাবু এতই সরল যে তার গায়ে কে হাত দিয়েছে সে বলতে পারে না, গায়ে হাত দিয়ে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ মাস্টার তার কী সর্বনাশ করেছে তাও সে জানে না বা বোঝে না। মা তাকে জিজ্ঞেস করে-‘বল মা, তোর গায়ে কে হাত দিয়েছে?’ তার সরল উত্তর-‘তুমিই তো হাত দিলে!’ চড় খেতে হয় তাকে কিন্তু তাও উত্তর সে দিতে পারে না।
একসময় চলে গর্ভপাতের আয়োজন। রাবু জানে না কী ঘটতে যাচ্ছে তার সাথে। ঘর থেকে অবুঝ বড়বোনের কাতরানির আওয়াজ আসে। খোকা জানতে চায় কী হচ্ছে রাবুর সাথে বাবা জানতে দেয় না মান-সম্মানের কথা ভেবে। একসময় অবস্থা খারাপের দিকে গেলে মাস্টারকে বলে-‘মাস্টার, আমার একটা ডাক্তার লাগবে।’ সকালে বিধ্বস্ত অবস্থায় বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে জানায়-‘আমার বড়মা মারা গেছে’। খোকা চিৎকার করে মন্টুকে বলে-‘মন্টু, রাবু মারা গেছে’। মাথা গরম মন্টু ঠিক তখনই রান্নাঘরে গিয়ে দা হাতে নিয়ে মাস্টারের সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রকৃতি তো সাক্ষী রেখে যায় অন্যায়ের তাই মন্টুই ছিল সাক্ষী কারণ তার কানের মধ্যে বড়বোনের সেই কথাই ভাসছিল তখন-”মন্টু, যাবি আমাদের সাথে বেড়াতে?’ সোজা কোপ বসিয়ে দেয় মাস্টারের ঘাড়ে। মাস্টার পড়ে যায়।
তারপর মন্টুরও ফাঁসি।
তারপর সংসারটা শূন্যতায় ভরে যায়।
তারপর নন্দিত নরকে যাত্রা হয়ে যায় যে নরক কষ্টের নয় বরং মন্টুর বীরোচিত মৃত্যুর। এই পরিণতির পুরো কারণটাই রাবু, সেই কেন্দ্রবিন্দু ছবির।
ছবির নাম দর্শকের এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন ‘নন্দিত নরকে‘ আর রাবু চরিত্রে অনন্য অভিনয়ে স্মরণীয় হয়ে আছে সুমনা সোমা। থাকার মতো থাকলে এক চরিত্রই যথেষ্ট রাবু তার জন্য তেমনই কিছু। এ চরিত্র মনে দাগ কেটে থাকবে।