
রিয়াজ কোনো আফসোসের নাম না, গর্বের
রিয়াজের চলচ্চিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়া নিয়ে ইদানীং কথা ওঠে প্রায়ই..
প্রথমত পরিষ্কারভাবে বলে দেই, যখন চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলছি তখন রিয়াজ আমার কাছে শুধুই একজন নায়ক ও অভিনেতা, তার অন্য পরিচয় নিয়ে বিন্দুমাত্র কোনো আগ্রহ নেই।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে পরিপূর্ণ অভিনেতাদের তালিকা করলে রিয়াজ অনায়াসে স্থান পাবে। তার অভিনয়দক্ষতার স্বাক্ষর আমাদের বিনোদনজগতকে সমৃদ্ধ করেছে। ২০০০ পরবর্তী সময়ে পাক্ষিক আনন্দ আলোতে মান্নার একটি সাক্ষাৎকার এসেছিল সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘চলচ্চিত্রে কে এগিয়ে আছে?’ মান্নার উত্তর ছিল, ‘দৌড়ে তো রিয়াজই এগিয়ে এখন, নিজেকে প্রমাণ করে কাজ করছে বিভিন্ন রকম ছবিতে।’ মান্নার মতো ইন্ডাস্ট্রির তখনকার টপ নায়কের কাছ থেকে এই অ্যাপ্রিসিয়েশন রিয়াজের জন্য বিশাল কিছু ছিল।
রিয়াজের ক্যারিয়ারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে –
এক. কমার্শিয়াল ও অফট্র্যাক (এক্সপেরিমেন্টাল) ছবিতে তার প্রজন্মে নিজের অভিনয়দক্ষতার দুর্দান্ত স্বাক্ষর রাখা।
দুই. ২০০০ পরবর্তী অশ্লীল সময়েও চমৎকার সব মানসম্মত ছবি দিয়ে নিজের বিশেষত্ব তুলে ধরা।
তিন. চলচ্চিত্রের পাশাপাশি নাটকের মতো সমৃদ্ধ প্লাটফর্মেও নিজেকে পরীক্ষিত অভিনেতার প্রমাণ দেয়া। এর মাধ্যমে তার ক্যারিয়ারে বৈচিত্র্য যোগ হয়েছে। একাধিক প্লাটফর্মে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছে।

আমার মতে রিয়াজ যদি চলচ্চিত্রে আর কাজ নাও করে বা যে সময়ে অনিয়মিত হয়েছিল তারপরেও তাকে নিয়ে কোনো আফসোস নেই কারণ রিয়াজ যেসব ছবি উপহার দিয়েছে দর্শকদের তার ৯৫ শতাংশই মানসম্মত ছিল। কালজয়ী ছবির সংখ্যা বেশকিছু এবং সেসব ছবি দিয়ে রিয়াজকে আমরা যারা মানসম্মত ছবির অনুরাগী তাদের কাছে রিয়াজ সোনালী স্মৃতি হয়ে থাকবে। নায়ক হয়ে মনের মাঝে তুমি, হৃদয়ের কথা, আকাশছোঁয়া ভালোবাসা, মাটির ফুল, প্রেমের তাজমহল, ভালোবাসি তোমাকে, নারীর মন, স্বপ্নের বাসর, স্বপ্নের পুরুষ, মিলন হবে কত দিনে, বুক ভরা ভালোবাসা, আমি তোমারি, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, ভালোবাসা কারে কয়, ও প্রিয়া তুমি কোথায়, নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি, এই মন চায় যে, দুই নয়নের আলো, বাধা, হৃদয়ের আয়না, রং নাম্বার, মন মানে না, ভালোবাসি তোমাকে, প্রেমের তাজমহল, সুন্দরী বধূ, বস্তির মেয়ে, কাজের মেয়ে, এ জীবন তোমার আমার, মনে পড়ে তোমাকে, বিদ্রোহ চারিদিকে, মেঘের কোলে রোদ, কি জাদু করিলা, একজন সঙ্গে ছিল, কুসুম কুসুম প্রেম, প্রিয়জন, অজান্তে এমন অনেক মানসম্মত কমার্শিয়াল ছবি অন্যদিকে অভিনেতার ইমেজে হাজার বছর ধরে, দুই দুয়ারী, খেলাঘর, মেঘের পরে মেঘ, মোল্লাবাড়ির বউ, শাস্তি, চন্দ্রগ্রহণ, শ্যামল ছায়া, দারুচিনি দ্বীপ ছবিগুলো দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিকে সমৃদ্ধ করেছে।
জুটির কথা বললেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী শাবনূরের সাথে রিয়াজের সফল জুটি ছিল। অমর নায়ক সালমান শাহর পর তার যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল রিয়াজের সাথে শাবনূরের জুটি গড়ে ওঠা ও ব্যাপক জনপ্রিয়তায় সেটি ছিল বড় বিষয়। এছাড়া পূর্ণিমার বিপরীতেও রিয়াজের সফল জুটি ছিল এবং জনপ্রিয়।

হুমায়ূন আহমেদের মতো সেরা নির্মাতার সাথে রিয়াজের কাজ করাকে কিছু দর্শক নেতিবাচকভাবে প্রচার করে অথচ এটা রিয়াজের ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছে, ক্লাসিক আবেদন তৈরি করেছে চলচ্চিত্র ও নাটকে। ‘দুই দুয়ারী’ ছবির রিয়াজের চরিত্র ও অভিনয় ক্লাসিক একটা আবেদন তৈরি করে। রিয়াজের ব্যক্তিত্ব ও অভিনয়ের ধরন এ ছবিতে তার বিশেষত্ব প্রমাণ করে। এছাড়া হাবলংগের বাজার, জোছনার ফুল, এই বর্ষায়, বিভ্রম’ এমন নাটকগুলো রিয়াজের ক্যারিয়ারে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইউটিউবে তার নাটকের কমেন্টবক্স দেখলে বোঝা যায় রিয়াজকে তখনকার দর্শক কত দারুণভাবে গ্রহণ করেছিল।
অভিনয়জগতে কেউই চিরদিন থাকে না অবসর নিতেই হয়। ক্যারিয়ার বড় হোক বা ছোট কাজের মান কেমন সেটাই মোদ্দাকথা। কাজটাই টিকে থাকে, মানুষ স্মরণ করে। চলচ্চিত্রে রিয়াজের কাজ তাকে যে-কোনোভাবেই স্মরণীয় করে রাখবে কারণ তার কাজের মধ্যে মানের সাথে আপস ছিল না। তাই রিয়াজ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কোনো আফসোসের নাম নয় বরং গর্বের নাম হয়ে থাকবে তার অসাধারণ ছবি আর অভিনয়দক্ষতার জন্য।