Select Page

রেডিও : নতুন কনটেন্টে মুক্তিযুদ্ধ

রেডিও : নতুন কনটেন্টে মুক্তিযুদ্ধ

অনন্য মামুনের ছবিগুলোর মধ্যে কোথাও না কোথাও বড় একটা সীমাবদ্ধতা সবসময় ছিল। ‘অস্তিত্ব’ বেশ ভালো ছবি হবার পরেও অনেকে এ ছবি পছন্দ করেনি তাদের যুক্তিতে। এভাবে অনন্য মামুন ওভারঅল মানসম্মত ছবি নির্মাণ করতে সেভাবে পারেননি। তবে এবার প্রথমবারের মতোই ‘রেডিও’ ছবিটি ওভারঅল মানসম্মত হয়েছে।

ছবির প্লট তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে। ৭ মার্চের ভাষণ যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছিল তাই ‘রেডিও’-কে মুক্তিযুদ্ধের ছবি বলা সঙ্গত। ভাষণকে কেন্দ্র করে একটি গ্রামের মানুষ নিজেদের মতো আয়োজন করতে চায় সেই ভাষণ শোনার জন্য। রেডিও হচ্ছে সেই ভাষণের প্রধান আকর্ষণ। রেডিও ছাড়া শোনার আর কোনো মাধ্যম নেই তাই এটি হয়ে ওঠে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহাজন পাকিস্তানপন্থী হওয়ায় তার চেষ্টা থাকে যেন শেখ মুজিবের ভাষণ কেউ শুনতে না পারে কিন্তু রেডিওটা? একটা রেডিওকে ঘিরে মানুষের আগ্রহ কেমন হতে পারে এবং রেডিওটিকে আগলে রাখার জন্য মানসিক ও শারীরিক যুদ্ধ কেমন হতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত রেডিও সংরক্ষণ হবে কি, ভাষণ শোনা হবে কি এটাই ছবির দেখানোর বিষয়।

কনটেন্টের দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে ‘রেডিও’ নতুন একটি কাজ। শুধুমাত্র ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে পূর্বে কোনো ছবি হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ছবি আছে সেগুলোর কনটেন্টেও ভিন্নতা আছে কিন্তু শুধু ৭ মার্চকে কেন্দ্র করে ছবি হয়নি। তাই কনটেন্টের দিক থেকে এটি নতুন ছবি এবং পরিচালক অনন্য মামুন তার এখন পর্যন্ত নির্মিত চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে ‘রেডিও’-কেই ব্যতিক্রমী কনটেন্টে নির্মাণ করতে পেরেছেন।

গ্রামের মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত করা এবং রেডিওতে ভাষণ শোনার জন্য সংগঠিত করে রিয়াজ। পুরো ছবিতে রিয়াজের স্বাভাবিক ন্যাচারাল অভিনয় ‘খেলাঘর, শ্যামল ছায়া’-র রিয়াজকেই স্মরণ করাবে। রিয়াজের সহযোদ্ধার চরিত্রে মম বরাবরের মতোই চমৎকার। নাদের চৌধুরী, প্রাণ রায় নির্দিষ্ট চরিত্রে ভালো। মহাজন লুৎফর রহমান জর্জের পাকিস্তানপন্থীর অভিনয় অসাধারণ। তিনি নেতিবাচক চরিত্রে সবসময়ই নিজের সেরাটা দেন। এলিনা শাম্মীর চরিত্রটি সবচেয়ে ব্যতিক্রমী ছিল।

ছবির নির্মাণে ১৯৭১-এর আবহ আনতে অজপাড়াগাঁর আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সাদাকালো ফরম্যাটে ছবিটি করা হয়েছে এতে করে ১৯৭১ সালের পরিবেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে। ছবির মূল বিষয় যে রেডিও সেটিকে ঘিরে আবেগ, অনুভূতির ভালো পরিবেশনা ছিল। গানের মধ্যে ‘জয় বাংলা’ গানটি বেস্ট এবং দৃশ্যায়ন বেশ ভালো ছিল। সাধারণ জনগণের অভিনয়ের বিষয়গুলোতে দুর্বলতা লক্ষণীয় এবং সেটা স্বাভাবিকও বটে।

‘রেডিও’ ছবি কোনো তাড়াহুড়ো ছাড়া নির্মিত শান্ত, সুন্দর ছবি। নতুন কনটেন্টের ব্যতিক্রমী এ কাজটি দর্শকের ভালো লাগবে এ প্রত্যাশা রইল।

রেটিং – ৭.৫/১০


About The Author

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

Leave a reply