লায়ন/ রায়হান রাফীর হাত ধরে জিতের ভাগ্য ফিরবে তো?
জিতের হাত ধরে ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে কলকাতার ফর্মুলা সিনেমা। এরই মধ্যে টানা ফ্লপ দিয়ে এ নায়ক এক প্রকার ক্লান্ত! নানাভাবে ভাগ্য পরীক্ষা করে লাভ হয়নি। এর আগে বাংলাদেশের সঞ্জয় সমাদ্দারের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। আর এবার ডাকলেন হিটমেকার রায়হান রাফীকে, নতুন সেই ছবির নাম ‘লায়ন’, তাও কিনা যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হবে তিন কিস্তিতে।
এ সিনেমায় জিতের সঙ্গে বাংলাদেশ ও থেকে আছেন শরীফুল রাজ। উল্লেখ্য যে, ‘তুফান’ মুক্তির পরপরই শোনা যায়, রাফীর সঙ্গে কাজ করত আগ্রহী জিথ। এবার তাতে পাকা সিলমোহর পড়ল।
‘লায়ন’ সম্পর্কে রায়হান রাফী বলেন, ‘বিশাল আয়োজনে আমাদের এই সিনেমাটি। এমন একটি গল্প নিয়ে কাজ করছি, যা দেশের দর্শক আগে দেখেনি। এটি নানা বৈচিত্র্যের থ্রিলার সিনেমা। ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা জিৎ নতুনভাবে পর্দায় আসছেন। বাংলাদেশ থেকে শরীফুল রাজের চরিত্রে চমক আছে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলব, আমার “পরাণ”, “সুড়ঙ্গ”, “তুফান”–এর চেয়েও “লায়ন-১” বেশি আলোচিত হবে। সেভাবেই আমরা সিনেমার প্রজেক্টটিকে দাঁড় করাচ্ছি।’
আগামী ডিসেম্বর থেকে ‘লায়ন’–এর শুটিং করতে যাচ্ছেন রাফী। জানিয়ে রাখলেন, সিনেমাটি তিনটি কিস্তিতে শেষ হবে। ‘লায়ন-১’ থেকে ৩। প্রথম কিস্তি আগামী ঈদুল ফিতরে মুক্তি দিতে চান। পর্যায়ক্রমে শুটিং হবে। বাংলাদেশ ও কলকাতার বড় অংশের দর্শক ধরার টার্গেট রয়েছে।
তাহলে কি কলকাতার দর্শক ধরতেই জিৎ–কে অভিনয়ে নিচ্ছেন? রাফী বলেন, ‘নিঃসন্দেহে জিৎ একজন ভালো, দক্ষ ও যোগ্য অভিনেতা। তাঁর কলকাতায় ও আমাদের এখানে বড় শ্রেণির দর্শক রয়েছে। সেসব দর্শককে আমরা টার্গেট করতে চাই। আমরা শুধু ঢালিউডের বাজারের ওপর নির্ভর করতে চাচ্ছি না। এই দুই বাজারের বাইরে আন্তর্জাতিক বাজারও আমরা ধরতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সিনেমা কলকাতায় দর্শকেরা পছন্দ করলেও সেই অর্থে ব্যবসায়িকভাবে আমরা সফল হতে পারছি না। সেই জায়গায় আমরা আর সংকুচিত করতে চাই না। আমাদের এখানে কলকাতার তারকারা পরিচিতি যত বেশি পাবে তত দর্শক বেশি হবে। তেমন আমি রাফী যদি কলকাতায় পরিচিতি পাই, তাহলে তারাও কিন্তু আমার পরের ছবিগুলো দেখবে। এভাবে রাজেরও একটা পরিচিতি হবে। এখন পুরোনো দিনের চিন্তা করলে হবে না। সবাইকে বাজার সম্প্রসারণ করতে কাজ করতে হবে। তাহলে সিনেমা অঙ্গন ও ইন্ডাস্ট্রি এগোবে।’
‘লায়ন’ নিয়ে গল্প কী এখনই বলতে চান না রায়হান রাফী। তবে জানালেন, এমন প্রেক্ষাপট আগে কেউ দেখেননি। ‘আমরা শুধু গল্পের আঁচ দিতে পারি। ৭০ শতাংশ শুটিং হবে সাগরের মাঝে। সাগরের মাঝেই পুরো অ্যাকশন। জাহাজ, স্পিডবোট, হেলিকপ্টার আর গল্পের উত্তেজনায় দর্শক বুঁদ হয়ে থাকবে।’—বলেন রাফী। জানা গেল এখন বঙ্গোপসাগরে সিনেমাটি লোকেশন দেখা নিয়ে ব্যস্ত। তবে লোকেশন এখনো অনির্ধারিত।
রাফী নিশ্চিত করেন, ‘লায়ন’ নায়ক-ভিলেনের ছবি নয়। এখানে জিৎ-রাজ দুজনেই সমান্তরাল নায়করূপে থাকছেন। নির্মাতা আরও জানান, দুই নায়ক দুই ইন্ডাস্ট্রির হলেও নায়িকারা থাকছেন ঢালিউড থেকে।
ছবিটির প্রযোজনায় ভারত থেকে থাকছে স্যাডো ফিল্মস। বাংলাদেশ থেকে থাকছে আরও দুটি প্রোডাকশন হাউজ। সেই মোতাবেক এই ছবির বাজেট ছাড়াবে ‘তুফান’কেও।
জানা গেছে, ‘লায়ন’-এর সঙ্গে শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’-এর সংযোগ টানতে চান রাফী। তিনি বলেন ‘‘দেখুন, ‘লায়ন’ কিন্তু একটা সিঙ্গেল ছবি না। এটাকে আমি অ্যাকশন সিরিজ বা ফ্র্যাঞ্চাইজি সিনেমা হিসেবে দাঁড় করাতে চাই। এখনই আমার পরিকল্পনা রয়েছে এটির তিনটি পার্ট করার। আমার কাছে গল্পটাও তৈরি করা। পরিকল্পনাও তৈরি আছে। চরিত্রটিকে একটা আন্তর্জাতিক রূপ দিতে চাই। কারণ শুধু আমাদের বাজার ও বাজেট নিয়ে ভাবলে আর হবে না। আমি বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গসহ পুরো দুনিয়াটাকে যখন বাজার হিসেবে ভাববো, তখনই আমার সিনেমাটা বড় হতে থাকবে। বাজেটও বড় হবে। মানও গ্লোবাল হবে। দিনশেষে লাভ কিন্তু বাংলাদেশেরই। কারণ আমি মঙ্গলগ্রহে চলে গেলেও দেশ আমার বাংলাদেশই থাকবে। ফলে আমি আসলে গ্লোবালি ভাবতে চাই সিনেমাটাকে। সেই লক্ষ্যেই ‘লায়ন’ ফ্র্যাঞ্চাইজিতে হাত দেওয়া।’’
রাফী বলেন ‘‘যদি বলি লায়ন চরিত্রটি সৃষ্টি করছি তুফানের জন্য, তাহলে ভুল বলা হবে না। আগেই বলেছি, আমার পরিকল্পনাটা এখন আর লোকালে নেই, পুরোটাই গ্লোবাল। তুফান চরিত্রটি এর মধ্যে দাঁড়ালো। এবার ‘লায়ন’ সৃষ্টির চেষ্টা করছি। এরপর আবার তুফান, এরপর আবার লায়ন। এভাবে এগোতে থাকবো। আমার লক্ষ্য তুফান ও লায়ন- এই দুটো চরিত্রকে একটা সময়ে গিয়ে একই সিনেমায় মুখোমুখি বা পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে দেওয়া। এর জন্য দুটো চরিত্রকেই গ্লোবাল ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ফরমেটে দাঁড় করাতে হবে। দম থাকলে আমি সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। সে জন্যই বলছি, ‘তুফান ২’ ‘লায়ন’ মুক্তির আগে নয়, পরে। এই দুটো চরিত্র আমি টানতে চাই বহুদূর। যতদূর আমি এখনও দেখতে পাই না ঠিক।’’
প্রথম আলো ও বাংলা ট্রিবিউন অবলম্বনে