Select Page

লায়লা আর্জুমান্দ বানু: ঢাকা বেতারের প্রথম মুসলিম গায়িকা

লায়লা আর্জুমান্দ বানু: ঢাকা বেতারের প্রথম মুসলিম গায়িকা

সংগীতের নানা ঘরানায় নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন লায়লা আর্জুমান্দ বানু। তিনি ছিলেন ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত বেতারের প্রথম মুসলিম গায়িকা। চলচ্চিত্রের গানেও দেখিয়েছেন অসামান্য দক্ষতা। তাকে পাওয়া গেছে নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, গজল, আধুনিক গান ও লোকসঙ্গীতে। 

লায়লা আর্জুমান্দ বানু বিদেশের মাটিতেও পরিবেশেন করেছেন বাংলা সংগীত।

লায়লা আর্জুমান্দ বানুর জন্ম ১৯২৯ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকায়, মারা যান ১৯৯৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি একই শহরে।

তার পৈত্রিক বাড়ি সোনারগাঁর শাদীপুরে। বাবা ইতিহাসবিদ-লেখক সৈয়দ মোহাম্মদ তৈফুর এবং মা সৈয়দা সারা তৈফুর ছিলেন লেখিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট মেম্বার, জেল ভিজিটর, পাকিস্তান ফিল্মস সেন্সর বোর্ডের সদস্য এবং ঢাকার রেডিওর ব্রডকাস্টার ছিলেন। তার বড় বোন বেগম লুলু বিলকীস বানু ছিলেন ঢাকা রেডিও তথা অল ইন্ডিয়া রেডিওর ঢাকা কেন্দ্রের প্রথম বাঙালি ছোট বোন বেগম মালেকা পারভীন বানুও ছিলেন ঢাকা বেতারের দ্বিতীয় মুসলিম গায়িকা। এ ছাড়া বিখ্যাত চলচ্চিত্র বিষয়ক সাপ্তাহিক ‘চিত্রালী’র প্রতিষ্ঠান ও পরিচালক-প্রযোজক সৈয়দ মোহাম্মদ পারভেজ ছিলেন তাদের চাচাতো ভাই।

লায়লা আরজুমান্দ বানু ১৯৪৪ সালে ইডেন বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৬ সালে ইডেন গার্লস কলেজ থেকে আইএ, ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং ১৯৫০ সালে ফারসি ও দর্শনশাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।

উচ্চাঙ্গ সংগীতে তার প্রথম গুরু পণ্ডিত রমনী মোহন ভট্রাচার্য এবং পরে শেখেন ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খানের কাছে। ১০ বছর বয়সে ১৯৩৯ সালে ১৬ ডিসেম্বর অল ইন্ডিয়া রেডিওর ঢাকা কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিশুশিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করেন। সেদিন ‌‘খেলার সাথী এসো এসো আমার খেলা ঘরে’ গানটি সমবেত কণ্ঠে ও পরে করেন একক গান ‘নহে নহে প্রিয় এ নয় আঁখি জল’। গান দুটি যথাক্রমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের।

১৯৬৩ সালে মস্কোয় সংগীত পরিবেশন করেন ফেরদৌসী রহমান ও লায়লা আর্জুমান্দ বানু

তার গাওয়া মোহাম্মদ মোর নয়নমণি, মুহররমের চাঁদ এলো ওই কাঁদাতে ফের দুনিয়ায়, ‘মসজিদে ওই শোনোরে আজান চলো না নামাজে চলো, খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে, সাহারাতে ফুটলরে ফুল, মোহাম্মদ নাম যতই জপি ততই মধুর লাগে প্রভৃতি গান সেই সময় ঢাকা বেতারে প্রায়শ বাজানো হতো। এরপর ১৯৬৭ সালে টেলিভিশনে গান গাওয়া শুরু করেন।

নজরুল গীতির বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত লায়লা আর্জুমান্দ বানু চলচ্চিত্রের গানেও কন্ঠ দিয়েছেন। প্রথম প্লব্যাক করেন উর্দু ‌‘সাহুনী’ ছবিতে। এরপর কণ্ঠ দেন কিসমৎ (উর্দু), এদেশ তোমার আমার, মাটির পাহাড়, সন্ধিক্ষণ ও রংবাজ ছবিতে।

তিনি বাংলার পাশাপাশি উর্দু, ফার্সি, তুর্কি ও রুশ ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষায় সংগীত পরিবেশনে পারদর্শী ছিলেন।

ব্যক্তিজীবনে লায়লা আর্জুমান্দ বানু প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব মো. শামসুল হুদা চৌধুরীকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র কন্যা ড. শাহনাজ হুদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক।

লায়লা আর্জুমান্দ বানু ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা সরকারী সংগীত মহাবিদ্যালয়ের অবৈতনিক অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি ঢাকা জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি, নজরুল স্বরলিপি শুদ্ধীকরণ বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সংস্কৃতি কমিশনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য এবং এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের উদ্যোগে প্রকাশিত ঢাকা পাস্ট প্রেজেন্ট ফিউচারের সংগঠনিক কমিটির সদস্য ছিলেন।

১৯৬৮ সালে ইরানের শাহ রেজা পাহলভির হাত থেকে পদক নেন। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দেন  ‘প্রাইড অব পারফরমেন্স’ পুরস্কার।


মন্তব্য করুন