Select Page

লিখিত বক্তব্যে যা বললেন শাওন

লিখিত বক্তব্যে যা বললেন শাওন

মুক্তির আগে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘ডুব’ ছবিটি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন বলিউডের ইরফান খান, কলকাতার পার্নো মিত্র ও বাংলাদেশের রোকেয়া প্রাচী এবং নুসরাত ইমরোজ তিশা। হুমায়ূন আহমেদের বায়োপিক কিনা— এমন বিতর্কের জেরে সম্প্রতি সিনেমাটিকে দেওয়া অনাপত্তিপত্র স্থগিত করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

এ নিয়ে রোববার সংবাদ সম্মেলন করেন মেহের আফরোজ শাওন। এখানে তার লিখিত বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

“গত বছরের শেষ দিকে ভারতের একটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘আনন্দ বাজার’-এর কাছ থেকে প্রথম ‘ডুব’ ছবিটির পটভূমি সম্পর্কে জানতে পারি। আমাকে জানানো হয়, ছবিটি হুমায়ূন আহমেদ এর জীবনকে ঘিরে। এবং হুমায়ূন পরিবারের কিছু সদস্যের চরিত্রও ছবিটিতে উঠে এসেছে যার মধ্যে আমিও আছি। খবরটি আমাকে বিস্মিত করে। তার পরপরই বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জানতে পারি যে আলোচ্য ছবিটি কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জীবনের কিছু স্পর্শকাতর ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ছবির মূল চরিত্রের অভিনয়শিল্পী ইরফান খান শুটিংয়ের আগে হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর ভিডিও দেখেছিলেন। এবং সেগুলো দেখেই হুমায়ূন আহমেদের কথাবার্তা বলার ধরন নিয়ে হোমওয়ার্ক করেছিলেন। ছবির আরেক অভিনয়শিল্পী পার্নো মিত্র তার ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন যে, তার অভিনীত চরিত্রের নাম ‘মেহের আফরোজ শাওন’ (যদিও কিছুক্ষণ পর তা সম্পাদনা করে বাদ দেন)। সঙ্গত কারণেই আমি আশঙ্কা বোধ করি। কেননা ছবিটির পরিচালক তার কোনও মন্তব্যেই ছবিটির সাথে হুমায়ূন আহমেদের জীবনের সম্পৃক্ততার কথা স্পষ্ট ভাবে অস্বীকার করেননি।

আমার আশঙ্কা আরও প্রবল হয়, যখন ‘ডুব’ ছবির অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী তার সাক্ষাকারে স্পষ্ট করে বলেন যে ‘ডুব’ হুমায়ূন আহমেদরই জীবন কাহিনি। তার সাক্ষাৎকার থেকে ছবির কাহিনির যে সারসংক্ষেপ জানা যায় তা হুমায়ূন আহমেদের জীবনের কিছু বিতর্কিত অংশ; যার সত্যতা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের তথা বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি লেখক। তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার মানে কি এই যে, তাকে নিয়ে একটি মনগড়া কাহিনিচিত্র বানিয়ে ফেলা যাবে! ‘হুমায়ূন আহমেদ’ নাম বদলে চরিত্রের অন্য যে নামই দেয়া হোক, সেই চরিত্র যদি হয় বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় লেখকের যিনি চলচ্চিত্র নির্মাণও করেন, সংসার জীবনে যার দু’টি অধ্যায় আছে এবং ক্যানসার আক্রান্ত হয়েই যার জীবনাবসান হয়েছে, সেটি কার জীবন এটি বুঝতে কোনও দর্শকের গবেষণা করার প্রয়োজন পড়ে না।

তার জীবনের অনেক গল্পই পাঠক দর্শকের জানা। সেই সত্য গল্পের সঙ্গে কিছু বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এবং তাকে নিয়ে ট্যাবলয়েড পত্রিকার কিছু চটকদার গুজবজুড়ে দিয়ে যদি কোনও ছবি বানানো হয় সেটা কি নৈতিক?

চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম। দর্শকদের মধ্যে অনেক হুমায়ূন ভক্ত আছেন। নতুন প্রজন্মের এমন অনেক দর্শক আছেন যারা হুমায়ূন আহমেদ পড়া শুরু করেছেন মাত্র। তারা ছবিটি দেখে ভুল তথ্য পাবেন হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে। এবং এই বিভ্রান্তিকর তথ্যে ভরা কাহিনিচিত্রটি পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদের জীবনী হিসেবে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে উপস্থাপিত হবে। হুমায়ূন এবং আমার দু’টি ছোট সন্তান আছে। তাদেরও ভবিষ্যত আছে। বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের মধ্যে তারা কেন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে! এসব বিবেচনায় হুমায়ূন আহমেদ-এর জীবন নিয়ে নির্মিত সিনেমার ব্যপারে আমার আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ আছে।

সেই আশঙ্কা থেকেই ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে আমি একটি চিঠি সেন্সর বোর্ডে দিই। চিঠিতে অনুরোধ করা হয়, আমি যেই আশঙ্কাগুলো করছি, ছবিটি দেখার সময় সেই বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে যেন তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এ ছবিতে যদি কোনও আপত্তিকর বিষয় থাকে, সেগুলো যেন যথাযথভাবে পরিবর্তন এবং পরিশোধন করে মুক্তি দেওয়া হয়।

আমি নিজেও একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। কোনও নির্মাতা বা তার নির্মাণের সাথে আমার কোনও বিরোধ নেই। আমি কোনও চলচ্চিত্র নিষিদ্ধের কথাও বলিনি। কিন্তু হুমায়ূনের স্ত্রী হিসাবে এবং তার একজন ভক্ত, পাঠক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা কোনও চলচ্চিত্রের পক্ষে আমার অবস্থান থাকবে না- এটাই স্বাভাবিক।”


মন্তব্য করুন