শশীর গল্প
কিছু ভিন্ন ঘটনা ঘটে যায় এমনভাবে যা নিয়ে কেউ আগে থেকে ভাবে না। ২০০৫ সালের ঘটনাটি অভাবনীয়ভাবেই ঘটে গিয়েছিল। জহির রায়হানের ক্লাসিক উপন্যাস ‘হাজার বছর ধরে‘ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হবে, তার জন্য টুনির চরিত্রের অভিনেত্রী খোঁজা হচ্ছে- নিউজ হতে থাকল একের পর এক।
মন্তুর জন্য রিয়াজ তো আগে থেকেই চূড়ান্ত। বেশ আগ্রহ জন্ম দিয়ে নাম এল শশী নামের মেয়েটির। শশীর প্রথম ছবি ছাপা হলে পত্রিকায় তাকে দেখে একদম নাক কুঁচকে উঠেছিল। এই মেয়ে কি পারবে নাকি রিয়াজের মতো পরিণত অভিনেতার সাথে অভিনয় করতে! কিন্তু না সিনেমাহলে গিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না সেই মেয়েটিকে এত ভালো অভিনয় করতে দেখব।
শশী নিজেকে তুলে ধরেছিল নিজস্বতা রেখে। টুনি চরিত্রের স্বাভাবিক চঞ্চলতা তার ছিল। রাত করে মন্তুর সাথে মাছ ধরতে যাওয়া। জমির মুন্সীর পুকুরে জাল ফেলার পর তার বেরিয়ে আসা দেখে পুকুরে লুকালো রিয়াজ আর সে লুকালো আড়ালে। দাঁত মাজতে গিয়ে চোখে পড়ল মন্তুর গায়ে বুনো কাঁটার আঁচড়ের দাগ। দাগ দেখে যেন তারই মনে দাগ পড়ল। মন্তুর জন্য তার মনে ভালোবাসা আছে কিনা সে তা প্রথম প্রথম অনুভব না করলেও আম্বিয়ার সাথে মন্তুর বিয়ের কথা তুললে মকবুলের মেয়ে হীরণের বিয়ের দিন মারামারি করে টুনি। তারপর স্বামী মকবুলকে বুদ্ধি দেয় আম্বিয়াকে বিয়ে করার জন্য। এতেই ঘটনা যায় উল্টে।
আবুলের পিঁড়ির আঘাতে জ্বরের ঘোরে চলে যায় মকবুল। টুনিকে বাপের বাড়ি রেখে যাবার আগে নৌকায় মনোয়ার হাজীর শান্তিরহাটে নেমে কাজি ডেকে বিয়ে পড়ানোর প্রস্তাবেও পরে আর রাজি হয় না টুনি। বলে-‘তা আর অয় না মিয়া।’ বহুদিন বাদে যখন মন্তুরও বয়স বেড়ে গেছে, বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে সবার কথা যখন তার মনে পড়ে সেদিন টুনিরও মাথার চুলে পাক ধরেছে। সেলাই কাজে তার সময় কাটে, পরনে বিধবার পোশাক।
এতকিছু কি সহজ ছিল ফুটিয়ে তোলা?
না, একদম না। সহজ কাজটাকে শৈল্পিক অভিনয়ে প্রথমবার চলচ্চিত্রে অভিনয় করা শশী ফুটিয়ে তুলেছিল নিজের অভিনয় প্রতিভার ছাপ রেখে। তার মিশে যাওয়া অভিনয়ে ভালো লাগা ছিল দর্শকের মনে সিনেমাহলেও। হল থেকে বের হয়ে তাই গল্প করতে দেখা গিয়েছিল-‘মেয়েটা কি দারুণ অভিনয় করল টুনির চরিত্রে! রিয়াজ খেতে বসে যখন ভাত চায় না শশী ভাত দিয়ে বলল, চাইয়া নিতে পারো না! তখন তার অভিনয় দেখে কে বলবে সে নতুন!’ এরকম ভালো অবজারভেশন শশী প্রথম ছবিতেই পেয়ে গিয়েছিল। কার ভাগ্যে জোটে এমন সৌভাগ্য!
শুধু কি তাই! ঐ গানটার কথা না বললে তো অর্ধেকই থেকে যাবে কথাবার্তা-
‘তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল, নাকি তোমার মন। আমি জীবন বেঁধেছি মরণ বেঁধেছি, ভালোবেসে সারাক্ষণ।’
পল্লী গাঁয়ের সরল সুন্দর মাধুর্যে শশী তার টুনি চরিত্রে মিশে গিয়েছিল গানে। তার ডাগর কালো চোখ দুটি দেখে অনেক দর্শকই প্রেমের ছোঁয়া পেয়েছিল। বলেছিল-‘নায়িকার চোখ দেখেই তো প্রেমে পড়া যায়।’ রিয়াজ বা মন্তুর যোগ্য শিল্পী ছিল শশী।
অনেক চলচ্চিত্রেই অনেক প্রথম শিল্পীর আবির্ভাব ঘটে। কজন প্রথম হয় যাদের ভাগ্য বা কাজ শশীর মতো হয়!
শশী মানে চাঁদ সে তার নামের অর্থে নিজেকে আলোকিত করতে পেরেছিল।