শাকিবের ‘রাজনীতি’, বউ চলে গেল দিনমজুরের!
শাকিব খানের ‘রাজনীতি’ সিনেমায় মোবাইল ফোন নম্বর প্রকাশের পর থেকে মহাবিড়ম্বনায় পড়েছেন সিএনজি অটোরিকশা চালক ইজাজুল মিয়া (২৫)। দিনরাত তাকে শাকিব খানের ভক্তরা কল দিয়ে বিরক্ত করে মারছেন। তারা সবাই শাকিব খানের নাম্বার দাবি করে শাকিবের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন। অনেক নারী ভক্তরা চলে আসছেন বাড়িতে, শাকিব খানকে যাচাই করতে। এতে অতিষ্ঠ ইজাজুলের জীবন। এমনটা জানাচ্ছে জাগো নিউজ ও বাংলা ট্রিবিউন।
জাগো নিউজ জানায়, এত ফোনকল আসায় পরকীয়ার সন্দেহে রাগ করে তার বউ বাপের বাড়ি চলে গেছে। মা-বাবাও দেখেন সন্দেহের চোখে। অতিরিক্ত কল আসায় ফোন নিয়ে বিজি থাকতে হয় বলে রোজগারেও পড়েছে টান, এমনটাই জানান ইজাজুল।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুর। সারাদিন কাজ করে ক’টাকা আর রোজগার করি। সারাদিনে অন্তত ২-৩শ’ ফোন আসে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কে আমাকে কাজ দেবে। মা-বাবাও ত্যাগ করেছে, বউও চলে গেছে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বুঝাতে পারিনি। এখন আমাদের এলাকার মুরুব্বিরা লেগেছেন তার ভুল ভাঙ্গানোর জন্য।’
সিনেমার নায়ক-পরিচালকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি সিনেমায় আমার নাম্বারটি দেয়া হয়েছে শাকিব খানের নাম্বার হিসেবে। পুরো নাম্বারটি প্রকাশ হওয়ায় সবাই আমাকে কল দিচ্ছে। ছবিতে দেয়ার আগে তাদের অবশ্যই জানা উচিত ছিল এটি কার নাম্বার। দায়িত্বশীল হয়ে দেয়া উচিত ছিল। আমিও নায়ক শাকিব খানের একজন ভক্ত। কিন্তু এখন আমার যে বিড়ম্বনা হচ্ছে তার দায় কে নেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমারতো টাকা পয়সা নেই, তাই মামলা করতে পারছিনা। তবে থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি।’
ইজাজুল জানান, ‘আমি শাকিব খান কি-না তা যাচাই করার জন্য তানিয়া নামে এক যুবতী কিছুদিন পূর্বে খুলনা থেকে হবিগঞ্জ চলে আসেন। মা-বাবাকে না জানিয়েই তিনি এসেছেন বলে জানিয়েছেন। পরে তাকে গাড়িতে তুলে বিদায় দিয়েছি। এই খবর শুনে আমার বউ রাগ করে। তাকে কিছুতেই বোঝাতে পারিনি। এই অবস্থায় দিন পার করছি।’
খবর নিয়ে জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলা সদরের যাত্রাপাশা গ্রামের বাসিন্দা মোবারক মিয়ার ছেলে ইজাজুল মিয়া। তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ী বাদল মিয়ার সিএনজি অটোরিকশা চালক ছিলেন। এ চাকরি করে অভাবের সংসার চালাতে তিনি হিমশিম খান। তাই মাঝে মাঝে তিনি নির্মাণ শ্রমিকের কাজ এবং অন্যের জমি চাষাবাদসহ দৈনিক মজুরী ভিত্তিতেও করেন।
গেল ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া ‘রাজনীতি’ নামক একটি সিনেমার একটি দৃশ্যে নায়ক শাকিব খান নায়িকা অপু বিশ্বাসকে একটি মোবাইল ফোন নম্বর দেন। মূলত ওই নাম্বারটির মালিক দিনমজুর ইজাজুল। সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর শাকিব খানের মোবাইল নাম্বার মনে করে অসংখ্য নারী পুরুষ ইজাজুলকে ফোন করতে থাকেন। দিন নেই, রাত নেই, দেশ-বিদেশ থেকে আসা শাকিব ভক্তদের ফোনে অতিষ্ট হয়ে উঠেন তিনি।
এদিকে স্বামী নিজেকে নায়ক শাকিব খান পরিচয় দিয়ে পরনারীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন সন্দেহে স্ত্রী মিশু আক্তার বাপের বাড়িতে চলে যান ১৬ মাস বয়সী একমাত্র শিশু কন্যা ইমুকে নিয়ে। কোনভাবেই তাকে বুঝাতে পারেননি ইজাজুল। পরে সিনেমা দেখে মিশুর ভুল আংশিক ভাংলেও এখনও ফিরেননি তিনি। অপরদিকে দিনে প্রায় ৭/৮শ’ ফোন আসার কারণে ইজাজুলের মোবাইল ব্যস্ত থাকে সারাদিন। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যবসায়ী বাদল তার সিএনজি অটোরিকশা চালকের চাকরি থেকে বাদ দিয়েছেন।
সবকিছু হারিয়ে শাকিব ভক্তদের মোবাইল ফোনে অতিষ্ট হয়ে অবশেষে ইজাজুল গত ২৮ সেপ্টেম্বর বানিয়াচং থানায় রাজনীতি সিনেমার প্রযোজক আশফাক আহমেদ, পরিচালক বুলবুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন।
যার সামান্য একটা অসচেতনায় অন্যজন মাশুল দিচ্ছেন, ‘রাজনীতি’ ছবির পরিচালক বুলবুল বিশ্বাস কী বলেন?
বুলবুল বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘এটা একটি র্যানডম নম্বর। দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। আমরা বহুদিন এটি পর্যবেক্ষণে রেখেই নম্বরটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিই।’
কিন্তু কারও কি অনুমতি নিয়েছেন- এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি এ নবীন পরিচালক। বলেন, ‘এটা নিয়ে এখন কেন নতুন করে কথা হচ্ছে, বিষয়টি বুঝলাম না। আমি বিষয়টি জানার পর পত্রিকায় দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছি। উনি চাইলে অন্য একটা নম্বর ব্যবহার করতেই পারেন। তিনি কেন করছেন না? নাকি এখন আমি তো ভিন্ন কথা বলতে পারি যে, উনি ছবিতে দেখে নতুনভাবে নম্বর কিনেছেন। তারপর উল্টো নিজের দাবি করছেন।’
কিন্তু কবে পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছেন তার তারিখ ও পত্রিকার নাম বলতে পারেননি পরিচালক।
এদিকে পরিচালকের এমন কথার যুক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ নম্বরটি পুরনো সিরিজের। এটা ৫ বছর বন্ধ থাকলে এর অপারেটর জিপি নতুন করে বিক্রি করতে পারবে। তাই এই নম্বর এখনই কেনার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এছাড়া ইজাজুল বায়োমেট্রিক পদ্ধতি রেজিস্ট্রেশন নিজেরসহ বিভিন্ন কাগজ উপস্থাপন করেন বাংলা ট্রিবিউনের কাছে।