শাকিব খানের সেটে কী ঘটেছিল?
সাংবাদিকদের সঙ্গে শাকিব খানের অসদাচরণ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে বিভ্রান্তিকর খবর ছড়ানোরও। বিষয়টি খোলাসা করে ফেসবুকে লেখেন সাংবাদিক সুদীপ্ত সাঈদ খান। তিনি বলেন-
বিএফডিসিতে সাংবাদিক হেনস্তা এবং দিনভর বিভিন্ন পত্রিকায় মিথ্যাচারের বিষয়টি সার্কাস পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গেই এর প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হলাম। সত্যিই বুঝতে পারছি না দেশের সর্বাধিক পঠিত একটি জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কেন সত্য লুকিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে। মূল ঘটনা তুলে ধরতে আপত্তি কোথায়? বেশিরভাগ গণমাধ্যম ভুক্তভোগিদের অভিযোগকে পাত্তা না দিয়ে মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করে চলেছে। অথচ, নিউজে তো প্রকৃত ঘটনাটাই তুলে ধরা উচিত ছিল? বিষয়টি সত্যিই বেদনাদায়ক। অথচ, কী আশ্চর্য! যারা তথ্য গোপন করে নিউজ করছেন তারা আমাদেরই ভাই! ভাবতে অবাক লাগে।
পাশে না থাকুন, অন্তত সত্যটা তো লিখতে পারেন। কী ঘটেছে, কী হয়েছে সেই সত্যটা লেখায় তো সাংবাদিকের কাজ। নাকি? অথচ আপনারা একজন ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করতে নিজেদেরকেই কলঙ্কিত করছেন। আপনারা ভুলে যাচ্ছেন যে, এই ঘটনা আপনাদের সঙ্গেও ঘটতে পারত। আমার ভাবতে অবাক লাগছে আমাদের তথাকথিত ভাই-ব্রাদাররাই কেন সত্যটাকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন! আখেরে ক্ষতিটা কার বা কাদের হচ্ছে? সে যাই হোক, যারা সত্যটা তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ। কিছু গণমাধ্যম সত্য তুলে ধরবে আবার কেউ কেউ নিজেদের পারপাস সার্ভ করবে এটাই স্বাভাবিক, সেসব নিয়ে বলার কিছু নেই। বরং ফেসবুক মারফত সত্যটা তুলে ধরা যেতে পারে।
সিডাবের সঙ্গে শাকিব খানের ঝামেলার দীর্ঘকাহিনি ইতোমধ্যেই আপনারা জেনে গেছেন। ফলে সেই ফিরিস্তি না দিয়ে আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটাই বলি। শাকিব খানের সঙ্গে সিডাব সদস্যদের যখন ঝগড়া চলছিল তখন জিয়াউদ্দিন আলম ভাই ও আমি পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকেই ঘটনাটির ছবি, ভিডিও ধারণ করছিলাম। একসময় শাকিব খান জিয়া উদ্দিন অালম ভাইকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তার দিকে তেড়ে যান। তাকে গালি দিয়ে মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় শাকিব খানের সঙ্গে আলম ভাইয়ের ধস্তাধস্তি হয়। খান নিজেই ধস্তাধস্তি করে মোবাইল কেড়ে নেন। এ সময় জিয়া উদ্দিন আলম হাতে চোট পান। এরপর শাকিব খান মোবাইল নিয়ে চলে যান মেকআপরুমে। সেখানে আলম ভাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ডিলেট করা হয়।
অপরদিকে শামীম আহমেদ রনির এসিস্ট্যান্ট পূজন ও পাঁচ ছয়জন প্রোডাকশন বয় এসে আমাকে ঘিরে ফেলে মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় প্রযোজক লিটন হাশমী আমাকে জোর করে শাকিব খানের মেকআপরুমে নিয়ে যায়। সেখানে শাকিব আমাকে ধমকান ও শামীম রনি মোবাইলের গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও নিজ হাতে ডিলিট করেন।
এবার আসি স্বনামধন্য পত্রিকাগুলোয় প্রকাশিত মিথ্যাচারে:
১. শুটিং সেটের বাইরে কোন দৃশ্য ধারণ বা ছবি তুলতে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই, এতটুকু সবাই জানি। ঘটনাটি ঘটেছে জসিম ফ্লোরের সামনে। শিল্পী সমিতি লাগোয়া জসিম ফ্লোরের রাস্তায় ‘শাহেনশাহ’ ছবির কোন সেট ফেলানো হয়নি। সেটটা ছিল প্রশাসনিক ভবনের সামনে। অথচ চ্যানেল আই অনলাইনসহ কিছু গণমাধ্যমে শাকিব খান ও শামীম রনি বিবৃতি দিয়েছেন ঘটনাটি শুটিং সেটে ঘটেছে।
২. প্রথম অালোর মতো জনপ্রিয় পত্রিকা শাকিব খানের বিবৃতি দিয়ে লিখেছে, নায়কের দেহরক্ষি হারুন এসে মোবাইল কেড়ে নেন। বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যাচার। শাকিব খান নিজেই ধস্তাধস্তি করে মোবাইল কেড়ে নেন। হারুনের ভূমিকা ছিল সহযোগীর।
৩. বাজে ব্যবহার করে কারও ফোন কেড়ে নেওয়ার অধিকার
সুপারস্টার রাখেন কিনা? একজন সুপারস্টারের আচরণ কেন প্রোডাকশন বয়ের মতো হবে? এটা লজ্জাজনক।
৪. শাকিব খান বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন আমাদেরকে ছোট ভাই হিসেবে দেখেন। কিন্তু ছোট ভাইদের সঙ্গে অভদ্র ভাষায় গালিগালাজ আর উগ্র আচরণ কেউ করতে পারে কিনা? যদিও আমরা সবসময় তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখেই দেখি। বলতে পারেন দর্শক হিসেবে আমরাও তার ফ্যান। তিনি বা তার পরিচালক ভদ্রভাবে অনুরোধ করলে আমরা কোন অভিযোগ করতাম না।
৫. তিনি বলেছিলেন, ঝগড়াটা তাদের অভ্যন্তরীন বিষয়। কিন্তু শুটিং সেটের বাইরে পাবলিক প্লেসে কোন ঝগড়া বাঁধলে সেটা অভ্যন্তরীন বিষয় থাকে কিনা?
৬. তিনি ভালোভাবেই আমাদের সম্পর্কে জানেন যে, আমরা কোন পত্রিকায় কাজ করি। তারপরও কেন তিনি ইউটিউবার বলছেন? নিজের দোষ ঢাকতে তার এই মিথ্যাচার মেনে নেয়ার মতো নয়।
সাংবাদিক হিসেবে এই অপমানের বিচার চেয়েছিলাম সাংবাদিক ভাইদের কাছে। অনেকে পাশে আছেন, আমাদের শান্তনা দিয়েছেন। কিন্তু কেউ কেউ তাদের জাত ভাইদের অপমানকে উপহাস করে তারকা শাকিব খানের বক্তব্যকেই সত্যি বলে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। এটা হতাশার। আজ আমি আর আলম ভাই শিকার হলাম, দুদিন পর আপনারাও হবেন। তখন কী কাউকে পাশে চাইবেন না? বা পাবেন? তারকা আসে তারকা যায়, কিন্তু সাংবাদিকরা খেয়ে না খেয়েও শোবিজে থেকে যাই। আমরা যদি অপমানিত হই, তারপর আমাদের ভাই বন্ধুরাই বগল বাজাই, চামচামি করি সাংবাদিক সত্ত্বা বিসর্জন দিয়ে তখন খারাপ লাগে। আজ যদি শাকিব খান না হয়ে অন্য কোনো তারকা এমনটা করতো, বা আপনাদের সাথে এই ঘটনা ঘটতো মূল ঘটনা চাপা দিয়ে আষাঢ়ে গল্প কী লিখতে পারতেন, ছাপাতে পারতেন? সঠিক জবাবটা দিতে পারলে দিয়েন দয়া করে।
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সবাই।