শাকিব খান কেন্দ্রিক ১৯ সিনেমা
লম্বা ক্যারিয়ারে আড়াইশ’টির ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। এর মধ্যে কিছু ছবি আছে যেগুলোর গল্প তাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সে সব ছবি নিয়েই এ আয়োজন এবং তালিকায় স্থান পাওয়া ছবিগুলো মানের বিবেচনায় নির্বাচিত হয়েছে।
খুনি শিকদার (২০০৪)
পরিচালক মনোয়ার খোকন। শাকিব খানের ক্যারিয়ারের প্রথমদিকের আলোচিত ছবি। তার ন্যাচারাল অভিনয়ের সেরা পারফরম্যান্সের একটি ছবি। দুর্ধর্ষ খুনি এরশাদ শিকদারের বায়োপিক এটি। ছবিতে শাকিব এরশাদ শিকদারের ভূমিকায় ছিল। প্রথমদিকে তার পেশা ছিল চুরি করা তারপর ঘটনাক্রমে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। এরপর নিজের মালিককে খুন করে নিজেই ত্রাস হয়ে ওঠে এবং দল গঠন করে নতুনভাবে। অপরাধের সীমা অতিক্রম করলে শেষের দিকে ঘটনাক্রমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এবং ফাঁসির শাস্তি হয়। ছবিতে প্রথমদিকের দুর্ধর্ষ শাকিব এবং ফিনিশিং-এ ফাঁসির আসামী শাকিব টোটালি আলাদা ইমেজের ছিল। ছবির শুরুতে দর্শক যেমন হিরোইজমের স্বাদ নিয়েছে পাশাপাশি ফাঁসির দড়িতে ঝোলা শাকিবের অভিনয় দেখে অশ্রুসিক্তও হয়েছে। অসাধারণ ছবি ছিল। শাকিবকেন্দ্রিক ছবির মধ্যে এটি প্রথমেই থাকবে।
ভাড়াটে খুনি (২০০৪)
পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন লিটন। এ ছবিটি অ্যাকশনের দিক থেকে শাকিবকেন্দ্রিক ছবির মধ্যে অন্যতম। ছবিতে শাকিব একজন ভাড়াটে খুনির চরিত্রে থাকে। তার ভাড়াটে হয়ে ওঠার গল্পটি ছবিতে দেখানো হয় যেখানে সে সামান্য গোরখোদক থেকে খুনি হয়ে ওঠে। নিজের ভাইকে কবর দেয়ার পর একটা লকেট থেকে তার পরিচয় জানতে পারে এবং ভাইয়ের খুনিকে খুন করার পর মিশা সওদাগরের হাতে পড়ে ভাড়াটে খুনি হয়ে যায়। ছবির নির্মাণ ঐ সময়ের তুলনায় বেটার ছিল এবং শাকিব অসাধারণ অভিনয় করেছে।
নিষ্পাপ কয়েদি (২০০৬)
পরিচালক বদিউল আলম খোকন। মান্নার ‘আমি জেল থেকে বলছি’ ছবির গল্পেই নতুন করে নির্মিত হয় এ ছবি। মান্নার মতো ভয়েস ও পার্সোনালিটি শাকিব ধারণ করতে না পারলেও নিজের মতো ভালো অভিনয় করেছে। লুক ভালো ছিল।
নষ্ট ছাত্র (২০০৬)
পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন লিটন। ক্যাম্পাস পলিটিক্সে পড়ে একজন সাধারণ ছাত্রের প্রতিবাদী হয়ে ওঠার পর অপরাধ জগতের সাথে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে।
জমজ (২০০৭)
পরিচালক শাহীন সুমন। খুবই উপভোগ্য ছবি। ডাবল রোলের শাকিব খানের দুই রকম ফ্লেভার ছিল অভিনয়ে।
সন্তান আমার অহংকার (২০০৮)
পরিচালক শাহিন সুমন। স্বার্থপর সন্তানের বিপরীতে আদর্শ সন্তানের চরিত্রে শাকিব খান অভিনয় করেছে। বাবা আলীরাজ ও মা ডলি জহুরকে আগলে রাখার সাধনা ছিল তার চরিত্রে। খুব ভালো ছবি এবং শাকিব খানের অভিনয়ও ভালো ছিল।
সাহেব নামে গোলাম (২০০৯)
পরিচালক রাজু চৌধুরী। ভাইবোনের সম্পর্ক ও তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্র নিয়ে ছবির গল্প। মৌসুমীর ভাই থাকে শাকিব যাকে ঘটনাচক্রে মৌসুমীর চোখের কাঁটা হতে হয়। নামে সাহেব হলেও তাকে থাকতে হয় গোলামের মতো এবং শাকিব নিজের বোনের সংসার ঠিক রাখার জন্য অনেক ঝুঁকি নিতে থাকে। শাকিব দারুণ অভিনয় করেছে এবং নির্মাণও দারুণ।
মিয়া বাড়ির চাকর (২০০৯)
পরিচালক শাহাদাত হোসেন লিটন। এ ছবিটিও খুবই উপভোগ্য। ঝাঁকড়া চুলের লুকে শাকিবকে চমৎকার মানিয়েছিল। সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে শাকিব মিয়া বাড়ির চাকর হয় এবং ধনী মিয়া বাড়ির অহংকারের পতন ঘটায়।
নাম্বার ওয়ান শাকিব খান (২০১০)
পরিচালক বদিউল আলম খোকন। নায়কের নামে ছবি হয়েছে কিছু সংখ্যক নায়কের তার মধ্যে এটি একটি। বাণিজ্যিকভাবে উপভোগ্য ছবি তবে নির্মাণ ততটা ভালো না।
চাচ্চু আমার চাচ্চু (২০১০)
পরিচালক পি এ কাজল। অপরাধের শাস্তি ভিন্নভাবে দেয়া হয় শাকিবকে। নায়করাজ রাজ্জাক শাকিবের বাবা এবং জজ চরিত্রে ছিল। শাকিব খুনের দায়ে পড়ে এবং শাস্তি হিসেবে দিঘিদের বাড়িতে কাজ করে তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করার শাস্তি দেয়া হয়। কাজ করতে গেলে দিঘি শাকিবকে চাচ্চু বানিয়ে ফেলে। মানবিক সম্পর্ক তৈরি হয় এবং এটাই ছবিটিকে উপভোগ্য করেছে।
বস নাম্বার ওয়ান (২০১১)
পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন জেমী। হিরোইজমের ছবিগুলোর মধ্যে এটি বেশ ভালো। শাকিব ঘটনাক্রমে বস হয়ে ওঠে অন্ধকার জগতে এবং তার আধিপত্য চলতে থাকে। ভালো পারফরম্যান্স ছিল।
টাইগার নাম্বার ওয়ান (২০১১)
পরিচালক শাহীন সুমন। অ্যাটিচিউডের দিক থেকে শাকিবের ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ছবি। রিমান্ডে অমিত হাসানের সাথে শাকিবের কথোপকথনের সময়টিতে শাকিবের অভিনয় ছিল অসাধারণ। লুকও দুর্দান্ত ছিল।
হিরো দ্য সুপারস্টার (২০১৪)
পরিচালক বদিউল আলম খোকন। ডিজিটাল ছবির প্রথমদিকে শাকিব খান প্রযোজিত ছবি। কেন্দ্রীয় চরিত্রে ডাবল রোলের শাকিব খানের হিরোইজম ছিল দেখার মতো। বিশেষ করে ছবির ফিনিশিং-এ শাকিবের দুর্দান্ত অভিনয় মনে রাখার মতো ছিল।
সম্রাট (২০১৬)
পরিচালক মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। এ ছবিটি ছিল কেন্দ্রীয় চরিত্রে সম্রাটের ভূমিকায় শাকিবের লুকের দিক থেকে ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ছবি। একদম ফ্রেশ হিরোইক লুক ছিল। ছবির গল্প তত ভালো না হলেও শাকিবের লুকের জন্যই ছবিটি উল্লেখযোগ্য।
শিকারি (২০১৬)
পরিচালক জয়দীপ মুখার্জী। যৌথ প্রযোজনার ছবিতে শাকিব খানের প্রশংসিত ছবি। এ ছবিটি দিয়ে শাকিব প্রথমবারের মতো অনেক দর্শকের কাছে পৌঁছায় যারা এর আগে শাকিবের নাম শুনলে নাক সিঁটকাতো। ভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও ছবিটি আগ্রহ ভরে দেখেছে এবং শাকিবের অভিনয়ের প্রশংসা করেছে। ছবিতে শাকিব হলো শিকারী যার শিকার ছিল বাবাকে হত্যার পরিকল্পনাকারীদের কৌশলে খুঁজের বের করে শাস্তি দেয়া। প্রথমদিকে নিজেই নিজের বাবাকে খুন করতে আসলেও পরে তার টার্গেট যায় পাল্টে। শাকিবের লুকেরও পরিবর্তন ঘটে এ ছবিতে এবং পরের কয়েকটি ছবিতে লাগাতার এ লুক ছিল প্রভাব হিসেবে।
সুপার হিরো (২০১৮)
পরিচালক আশিকুর রহমান। কেন্দ্রীয় চরিত্রে শাকিবের এ ছবিটি বিশেষভাবে আলাদা। মূলত এ ধরনের ছবিতে শাকিব আগে কখনো কাজ করেনি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ভূমিকায় জীবন বাজি রাখার চরিত্র ছিল।
ক্যাপ্টেন খান (২০১৮)
পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন। এ ছবিটি ছিল শাকিব খানের কেন্দ্রীয় চরিত্রের উল্লেখযোগ্য ছবি। প্রথমদিকের শাকিব আর পরের নতুনভাবে ফিরে আসা শাকিব ছিল ভিন্ন। পরের শাকিবের অভিনয় ছিল অনবদ্য।
বীর (২০২০)
পরিচালক কাজী হায়াত। কাজী হায়াতের পরিচালনায় প্রথম ও একমাত্র ছবি এটি এখন পর্যন্ত। ছবির গল্প ও শাকিবের বীরের ভূমিকায় অভিনয় ভালো ছিল তবে ছবির নির্মাণ ছিল হতাশাজনক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে শাকিবের অবস্থান এবং প্রতাবাদী ভূমিকাই ছবির গল্প। লুকের দিক থেকেও শাকিবের ব্যতিক্রমী ছবি এটি।
নবাব এলএলবি (২০২০)
পরিচালক অনন্য মামুন। কেন্দ্রীয় চরিত্রে শাকিবের এ ছবিটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও দোষীদের শাস্তি দেয়ার গল্পে। সামাজিক সচেতনতার দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ টপিক ছিল। ছবির নির্মাণ তত ভালো ছিল না।
সামনের দিনগুলোতে শাকিব খান কেন্দ্রিক ছবি আরো হবে হয়তো তবে ক্যারিয়ারের বয়স হিসেবে সেসব ছবি গল্পে, অভিনয়ে, নির্মাণে অলওভার ভালো হওয়া জরুরি।