Select Page

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন সেতারা আহমেদের ছেলে

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন সেতারা আহমেদের ছেলে

সেতারা আহমেদ বেশিরভাগ ছবিতে জটিল ও কুটিল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনয় দেখে অনেকেই বলতেন ‘কূটনীবুড়ি.। তার অভিনয় প্রতিভা দিয়ে জানিয়ে দেন, এ রকম সব চরিত্রে তিনি অদ্বিতীয়।  এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটক ‘সকাল সন্ধ্যা’য় পঁচার মা চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক-শ্রোতাদের কাছে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি।

এর চেয়ে বড় বিষয় সেতারা আহমেদ একজন শহীদ জননী। ২০০১ সালের ৩০ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এ অভিনেত্রী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

সেতারা আহমেদ ১৯৩১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন। মঞ্চনাটক দিয়ে অভিনয় শুরু করেন তিনি। ঢাকা রেডিওতে নাট্যশিল্পী হিসেবে যোগ দেন চল্লিশদশকের শেষের দিকে।

সেতারা আহমেদের ছেলে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক আহমেদ, যিনি আামাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। সেখানে রয়েছে এক মর্মান্তিক গল্প।

মূলত মুক্তিযুদ্ধে গুরুতর আহত হয়েছিলেন মানিক। প্রথমে তাকে সীমান্তবর্তী ফিল্ড হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পাঠানো হয়েছিলো ভারতের এক বড় হাসপাতালে। তিনি যখন সেখানে চিকিৎসাধীন তখন বিজয় অর্জিত হয়। সবাই দেশে ফেরত আসছে। গুটিয়ে নেয়া হচ্ছে ফিল্ড হাসপাতাল। অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় এ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পাঠানো হয় জার্মানি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তিনি শহীদ হন। যোগাযোগ করা হয় ভারতের হাসপাতালে। সেই হাসপাতালে কেবল নাম আর ফিল্ড হাসপাতালের রেফারেন্স ছিলো। কিন্তু ফিল্ড হাসপাতাল তখন নেই। ঠিকানা না পাওয়ায় জার্মানিতেই দাফন করা হয় সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।

সে সময় জার্মান পত্রিকায় ছবিসহ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো। অনেক বছর পর খোঁজ পান আনিসুল হক (ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র)। ছবিসহ সেই সংবাদ, যে জার্মান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো তার কপি এনেছিলেন তিনি। তার নিজের গ্রন্থনা ও উপস্থাপনার একটি বিনোদন মূলক পাক্ষিক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ছিলো বাংলাদেশ টেলিভিশনে। সেখানেই তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেতারা আহমেদকে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত এবং টেলিভিশন সেটের সামনে উপস্থিত কোটি দর্শকের সামনে তিনি বললেন সেই ঘটনা, দেখালেন সেই জার্মান পত্রিকা। মঞ্চে সন্তানের খোঁজ জেনে হাউমাউ করে কাঁদছেন সেতারা আহমেদ। সেই দৃশ্য দেখা আবেগে আপ্লুত হন আরো কোটি মানুষ।

সেতারা আহমেদ অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে রয়েছে-  আসিয়া, ধূপছাঁও, পালাবদল, সখিনা, আলিঙ্গন, নীল আকাশের নীচে, রং বদলায়, অশান্ত ঢেউ, সারেং বউ, অনির্বাণ, সুন্দরী, আরাধনা, অশিক্ষিত, সূর্য দীঘল বাড়ী, তরুলতা, আপন ভাই, বিনি সুতার মালা, ভালো মানুষ, কলমিলতা, লালকাজল, ভালো মানুষ, উজান ভাটি, ভাগ্যচক্র, সাত রাজার ধন, চন্দ্রনাথ, স্বামীর ঘর, সীমার, বড় মা, মেহমান, নতুন পৃথিবী, গৃহবিবাদ, সুদ আসল, আওলাদ, চাঁপা ডাঙ্গার বউ, রক্তের অধিকার, দেবর ভাবী, চোরের বউ, প্রভৃতি।

তথ্য ও ছবি সূত্র: আজাদ আবুল কাশেম, মুজতবা সউদ ও ফিরোজ এম হাসান


মন্তব্য করুন