Select Page

শাকিবকে ‘রাবিশ’ বলে সমালোচিত খিজির

শাকিবকে ‘রাবিশ’ বলে সমালোচিত খিজির

kijir-hayat-khan-shakib-khan

শাকিব খানকে ‘রাবিশ’ বলে বিতর্কে পড়লেন পরিচালক খিজির হায়াত খান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘জাগো’ নির্মাতাকে নিয়ে শুরু হয়েছে তর্ক-বিতর্ক। শাকিব ভক্তের পাশাপাশি নির্মাতা শামীম আহমেদ রনিসহ অনেকেই এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। আবার কারো কারো মতে মন্তব্যটি যৌক্তিক।

নিউজ নেক্সটকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে চলচ্চিত্রের সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন খিজির।

এফডিসিকে শ্রদ্ধা করেন না— জানিয়ে বলেন, ‘একটা ইন্ডাস্ট্রি যখন মূল্যবোধ হারায় বা যখন কোনো মূল্যবোধই থাকে না; তখন আসলে ওটাকে শ্রদ্ধা করা যায় না। আমার কাছে মনে হয়, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি, আমরা, মূল্যবোধ হারিয়েছি। সিনেমা বা এ ধরনের শিল্পচর্চা; একটা জাতির জন্য আয়না, কিন্তু আমদের এখানে এটা শুধুই ব্যবসা, ব্যবসাটাও এমন যে একটা নোংরা জায়গায় চলে গেছে, প্রফেশনাল ব্যবসা হলেও হতো। এখানে উপরে উঠতে হলে অনেক নোংরামি করতে হয়, অনেক পলিটিক্স করতে হয়, নিজের কোনো মোরালিটি থাকে না। সব কিছু মিলিয়ে যে জিনিসটা পঁচে গেছে সেটাকে তো আর শ্রদ্ধা করা যায় না।‘

এর আগেও তিনি এফডিসির উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন।

বাংলা সিনেমার মৌলিক গল্প প্রসঙ্গে বলেন, ‘মৌলিক গল্প নিয়ে ছবি করার জন্য যে ধরনের অবকাঠামো দরকার সে ধরনের অবকাঠামো আমাদের নেই। আমার যদি অবকাঠামো না থাকে; আসলে ফিল্মটাতো একটা ব্যয়বহুল মিডিয়া, ওই যে বলে না, দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র। আমাদেরটা হচ্ছে ‘অনিয়মের দুষ্ট চক্র’। তাই এটাকে সরল ভাষায় বিশ্লেষণ করা কঠিন। সবাই আমরা কম বেশি দোষী, আজকে আমরা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি; আমাদের মিডিয়া, ফিল্ম, টিভি, ছোট পর্দা বড় পর্দা একটা ধংসের দিকে চলে গেছে এটার জন্য। আমরা জাতি হিসেবে সবাই কম বেশি দোষী।’

কারণ হিসেবে বলেন, ‘সব চেয়ে বড় দোষ হচ্ছে যারা এফডিসিটাকে চালাচ্ছে। একটা জিনিস ভালো থেকে খারাপ হয়ে গেছে, এটা যদি ভালো হতো; তাহলে এটা কেন খারাপ? যারা এটাকে বছরের পর বছর চালাচ্ছে এবং যেভাবে চালাচ্ছে, এটার জন্য দায় দায়িত্ব সবার আগে তাদেরকেই নিতে হবে। আমি এফডিসি’র একজন তালিকাভুক্ত পরিচালক কিন্তু আমি এফডিসিতে পা দেই না। কেননা আমার কাছে মনে হয় ওই জায়গাটাতে পা দেয়ার মতো পরিবেশ নেই এবং আমার ইচ্ছাও নেই। যতদিন না আমি ওখানে পরিবর্তন দেখবো। এখন বলা যেতে পারে আপনি না গেলে পরিবর্তন করবেন কিভাবে? পরিবর্তন করতে হলে আসলে— চেষ্টা করার একটা পরিবেশ লাগে, আমার কাছে মনে হয় না সেই পরিবেশটা এফডিসিতে এখন আছে।‘

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সংস্কৃতির মানুষ হওয়া সত্ত্বেও এ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‌‘ওনার মতো একজন মানুষ আসলে সিনেমার জন্য কী করেছেন। কয়েক দিন পর পর কলকাতা থেকে আর্টিস্ট এনে শুধু মিটিং করলে, আবার যৌথ প্রযোজনার নামে সিনেমাটাকে অন্য দিকে… আসলে তারা কি করেছেন একটা সেন্সর নীতিমালা ষাট/সত্তরের দশকের। আমাদের সিনেমাকে উন্নত করার জন্য আসলেই কি তারা সঠিক কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমার তো মনে হয় না। আমি স্যরি, আমাদের রাজনীতিবিদরা যে দায়িত্ব নিয়ে আসে, সে দায়িত্বটাকে পালন করার জন্য যেটা করা দরকার অনেক রাজনীতিবিদরাই সেটা করে না। আমি আমার আঙ্গুল কারো দিকে তুলতে চাই না। তবে আমি মনে করি আমি যেটা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই সেটা বিশ্বাস করে। ‘

যৌথ প্রযোজনা নিয়ে তার মত হলো, ‘আসলে যৌথ প্রযোজনা না বলে, এটাকে আমরা জাজ প্রযোজনা বলি। আসলে এটাতো একটা ফেস যায় বাংলাদেশের… কখনো এটা ছিলো কাকরাইলের দৌরাত্ব, কখনো এটা ছিলো দুই একটা চ্যানেলের দৌরাত্ব এখন এটা হচ্ছে ‘জাজ’ আর ‘আব্দুল আজিজ’ সাহেবের দৌরাত্ব। এটাও একটা সময় কেটে যাবে, কয়েকদিন পর কেউ একজন আসবে। যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার এটার কোনো আলাদা নীতিমালা না করবে এবং বাংলাদেশ সরকার এখানে কোনো হস্তক্ষেপ না করবে, ততদিন পর্যন্ত এরকম ফেস বাই ফেস কেউ না কেউ আসবেই। কোনো না কোনো ‘আব্দুল আজিজ’ কোনো না কোনো চ্যানেল কোনো না কোনো গোষ্ঠী এটাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। এবং এটাই ফ্যাক্ট।‘

তিনি আরো বলেন, ‘যৌথ প্রযোজনার নামে যা হচ্ছে আসলেই কি এটা যৌথ প্রযোজনা? যৌথ প্রযোজনা এক সময় যেসব ছবি বাংলাদেশে হয়েছে স্বাধীনতার পরে ওইসব ছবির মানদণ্ড আর এখনকার ছবির মানদণ্ড কি এক? আর শাকিব খান সম্পর্কে তো কিছু বলতেই চাই না। এই লোকটা বাংলাদেশের সুপার হিরো, হ্যা সে বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিকে এক সময় টেনেছে কিন্তু সে একক ভাবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংসও করেছে। একটা হিরোর অনেক দায়িত্ব আছে; আমিও বাংলাদেশের কিছু ভালো ভালো হিরোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে… ‘সো হি ইজ এ রাবিশ গাই!’

শাকিব প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘ইট ইজ অলওয়েজ অন দ্য রেকর্ড। হি ইজ এ রাবিশ গায়। ওর ক্যারেকটার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, বাংলাদেশের যদি সুপার হিরো হয়; সুপার হিরোদের কিছু দায়িত্ব থাকে। তার নামে যেসব ঘটনা আমরা শুনি বা প্রতক্ষদর্শীও… আপনার দায়িত্ব শুধু এটা না টাকা কামানোর জন্য সিনেমা করবো। আমরা অসলে ভুল মানুষদের সুপার হিরো বানাই। অনেক বড় ক্ষতি আমরা নিজেরাই করি। শাকিব খানের মতো লোকরা যারা এই দর্শকদের টাকায় সুপার হিরো হয়েছেন তারা তাদের দায়িত্বটা পালন করে না। শুধু নিজেরটা চিন্তা করে। এন্ড ইট ইজ অন দ্য রেকর্ড।’

এদিকে সাক্ষাৎকার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া নিয়ে খিজির ঢালিউড টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘সাক্ষাৎকারটিতে আমি বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ওভারঅল সবকিছুর কথা বলেছি। হয়তো আমার কথাগুলো ভুলও হতে পারে। কিন্তু আমার যা বিশ্বাস, সেটা তো আমার বিশ্বাস। আমার বিশ্বাস আমি মিথ্যা বলিনি। আমি যা বলেছি, সঠিক বলেছি। অনেকে হয়তো বলে না, কিন্তু আমি বলেছি। বিষয়টি নিয়ে আমি অনুতপ্তও নই।’

খিজির হায়াৎ খান পরিচালিত এখন পর্যন্ত দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। তার প্রথম ছবি ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’ ও অন্যটি ‘জাগো’। এছাড়াও ‘প্রতিরুদ্ধ’ নামে তিনি আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। ‘জাগো’ অরিফিন শুভ অভিনীত প্রথম ছবি। সম্প্রতি পূর্ণিমা ও ফেরদৌসকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন কর বিষয়ক বিজ্ঞাপনচিত্র।


Leave a reply