Select Page

শিক্ষণীয় চরিত্র ‘বাদশা’

শিক্ষণীয় চরিত্র ‘বাদশা’

টাইগারপাস নেভাল অডিটোরিয়ামে ১৯৮৬ সালে ‘দস্যু ফুলন’ দেখি। ‘দস্যু ফুলন’ দেখতে গিয়ে পরবর্তী আকর্ষণ বোর্ডে ‘বাদশা’ ছায়াছবির পোস্টার দেখি। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত পরবর্তী আকর্ষণে পোস্টার দেখেই চললাম। পাঁচ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটে ১৯৯০ সালে। যতটুকু মনে পড়ে, বৃহস্পতিবার রাতে মুভি অব দ্য উইকে বিটিভিতে দেখানো হয়।

শুক্রবার গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ। রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত আমি আর বন্ধু মজিবর রহমান ছবিটা দেখি।

পোস্টার দেখে মনে করেছিলাম দুর্দান্ত অ্যাকশন ছবি। আসলে ছবিটি ছিলো কাহিনী প্রধান। আর প্রধান চরিত্র বাদশা। বাদশা চরিত্রে রূপায়ণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়ক খসরু।

বাদশা ভয়ঙ্কর ডাকাত গ্যাং-এর সর্দার। একদিন একটি গ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে শাবানাকে বাদশা অপহরণ করে। আস্তানায় নিয়ে এসে বাদশা ঘোষণা দেয়, শাবানা তার একার। সে একাই শাবানার কাছে যাবে।

বাদশা শাবানাকে ধর্ষণ করতে যায়। শাবানা যেমন ছিলো রুপবতী, তেমনি ছিলো প্রতিবাদী। শাবানা বাদশার অন্যায় আব্দারের প্রতিরোধ করে, প্রতিবাদ করে। প্রতিবাদী-প্রতিরোধী মনোভাবে মুগ্ধ হয়ে শাবানাকে ধর্ষণ করার ইচ্ছা ত্যাগ করে বাদশা। এরপর অপহৃতা বাড়ি ফিরিয়ে দিতে যায় সে। আড়াল থেকে শাবানার চাচা-চাচীর কথাবার্তা শুনে।

শুনতে পায়, শাবানাকে ডাকাত দল অপহরণ করায় চাচা-চাচী খুশি। এতে শাবানার সম্পত্তির ভোগ করতে পারবে। আর যদি ফিরেও আসে সমাজে জায়গা হবে না। ডাকাতের আস্তানা থেকে ফিরে আসা নারী নষ্টাই হয়। আর নষ্টা মেয়েকে সবাই সমাজ থেকে তাড়িয়ে দিবে।

চাচা-চাচী মহাখুশি। শাবানা বাদশাকে বলে, আমার সবশেষ, আমি এখন কি করবো! তুই আমাকে বিয়ে করবি? বাদশা শাবানার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। বাদশা শাবানাকে বিয়ে করার পর আর গ্যাং-এ ফিরে যায়নি। দূরে এক মফস্বল শহরে চলে যায়।

শাবানা বাদশাকে বলে, সকল প্রকার মন্দকাজ ত্যাগ করতে। সৎপথে উপার্জন করতে। বাদশা তাই করে। নিজের অতীত কবর দিয়ে নতুন জীবন শুরু করে।

বাদশা ঠেলাগাড়ি চালিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে, উপার্জন করতে থাকে। বাদশার একটি সন্তান হয়। স্ত্রীর ভালোবাসায় বাদশা সম্পূর্ণ বদলে যায়। যদিও নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা, তবু স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখি। শাবানার কঠিন অসুখ হয়। চিকিৎসা করতে মোটা অংকের টাকা প্রয়োজন। বাদশা যার কাজ করে তার কাছে চায়। সে অপমান করে বের করে দেয়। তারপর অনেক জনের কাছে টাকা চায়। বাদশাকে কেউ টাকা দিতে চায় না। প্রিয়তমা স্ত্রী দিনদিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাদশা আর সইতে পারেনি।

অবশেষে বাদশা একটি অপরাধ করে। অর্থশালী মোস্তফার শিশুপুত্র অহরণ করে, দাবী করে টাকা। যা টাকা স্ত্রীর চিকিৎসা করতে প্রয়োজন তাই দাবী করে।

টাকা নিয়ে মোস্তফাকে যেখানে যেতে বলে, সেখানে বাদশা মোস্তফার শিশুপুত্র নিয়ে অপেক্ষা করে। বাদশা পাহাড়ের উপর ছিলো। নীচে জলাশয় ছিলো। ভুলক্রমে বাদশার হাত থেকে শিশুপুত্রটি পড়ে তলিয়ে যায়। বাদশা স্থান ত্যাগ করে। বাসায় এসে দেখে শাবানা মারা গেছে।

বাদশা সন্তান নিয়ে নিজের গ্যাং-এ ফেরত আসে। আবার শুরু করে ডাকাতি। বছর তিন বছর পর। বাদশা তার সন্তানকে নিয়ে মোস্তফার কাছে যায়। নিজের ছেলে মোস্তফার ছেলে বলে, মোস্তফাকে দেয়। তারপর থানায় আত্মসমর্পণ করে।

মেয়াদ শেষে বাদশা মুক্তি পায়। ততদিনে বাদশার ছেলে যুবক। বাদশা মোস্তফার কাছে যায়। মোস্তফা নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেয়। বাদশার ছেলে জানে বাদশা ডাকাত ছিলো। তাকে অপহরণ করে ও তিন বছর পর ফেরত দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য জেলে যায়।

বাদশার ছেলে বাদশাকে ঘৃণা করতো। সুযোগ পেলে বাদশাকে অপমান-লাঞ্ছিত করতো। আপন ছেলের দ্বারা অপমান জেলের কঠিন শাস্তির চেয়ে বড় কঠিন। আপন ছেলে কাছে পেয়েও আদর করতে পারে না। বলতে পারে না আমি তোর বাপ। উল্টো অপমানিত- লাঞ্ছিত হতে হয়।

২৮ বছর আগের স্মৃতি থেকে লিখছি- কাহিনী এদিকওদিক হতে পারে।

এই কাহিনী থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আছে। যা উপলব্ধি করতে হবে।

এক. স্ত্রী ভালোবাসা দিয়ে স্বামীকে মন্দ পথ থেকে ভালো পথে আনতে পারে।

দুই. বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি সাহার্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিৎ। না হয় সেই বিপদগ্রস্ত মানুষ নিরুপায় হয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধ করতে পারে।

এককভাবে না পারলে সবাই মিলে করা উচিৎ।

যেমন; একটি পাড়া বা মহল্লায় কোন পরিবার যদি বিপদগ্রস্ত হয়। আর সেই বিপদ কাটতে পারে একলাখ টাকায়। কিন্তু সেই পরিবারে একলাখ তো দূরের কথা, একহাজার টাকাও নাই। পাড়ার একশ জন যদি ১০০০ টাকা করে দেয়,তাহলে একলাখ টাকা। এই বিপদগ্রস্ত পরিবার যদি কারো সাহায্য- সহযোগিতা না পায়। নিরুপায় হয়ে যে কোন ভয়ঙ্কর অপরাধ করতে পারে।

তিন. বাদশা অতীতে যা অপরাধ,পাপ করেছে। দীর্ঘ কারাবাস থাকার পরও ছেলে দ্বারা মানসিক শাস্তি পাচ্ছে।অপকর্মের ফল ভোগ করতে হয় দীর্ঘ সময় ধরে।

বাদশা  আমার কাছে শিক্ষণীয় একটি চরিত্র।

এই ছায়াছবি আমার কাছে প্রিয় দুটি কারণে। এক. কাহিনী, যা আমার কাছে শিক্ষণীয় ছিলো। দুই. শাবানা ও খসরুর সাবলীল অভিনয়। শাবানা যে একজনই, তার স্বাক্ষর রেখেছেন। আর খসরুর অভিনয় পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।


Leave a reply