শুশীলদের আয়নাবাজি, গণমানুষের উপর ফাঁপরবাজি
একজন সাব-অলটার্ন হিসেবে কখনই এলিটদের টেলিফিল্ম টেনে লম্বা করা আয়নাবাজি, টেলিভিশন, পিঁপড়াবিদ্যা এই জাতীয় ছাইপাশে আগ্রহ পাই না। এর থেকে ঢের আগ্রহ বাংলা ভিশনের সংবাদপাঠিকা শবনম বুবলি কিভাবে মৃতপ্রায় বাংলা চলচ্চিত্রের ক্রান্তিকালে লিজেন্ডারি নায়ক শাকিব খানকে নিয়ে হাল ধরেছেন সেদিকে। পরী মনি, অপু বিশ্বাস কিংবা সম্প্রতি অহনা যেভাবে সাহস দেখিয়ে মাঠে নেমেছে এদের পক্ষেও অকুষ্ঠ সমর্থন রাখি শুধুু বাণিজ্যিক বাংলা চলচ্চিত্রকে কোরামিন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার কৃতজ্ঞতায়।
আমি বলেছিলাম বিশ্বের অন্য সব দেশে চলচ্চিত্রের গুণগত মান দেখে পুরষ্কার দেয়া হয়। আর আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছেন যারা ফ্রেম ধরা চলচ্চিত্র বানান, নিজস্ব ব্যানার থেকে পুরষ্কার, দক্ষিণা, মিডিয়া কাভারেজ সবই নিয়ে যান। কিন্তু পুরো দেশে চলচ্চিত্রের নামে যে ফালতু টেলিফিল্ম টেনে লম্বা করার প্রকল্পগুলো একের পর এক বাস্তবায়িত হচ্ছে কথিত শুশীল সমাজ সেগুলোকে প্রণোদিত করছে। শেষ পর্যন্ত ঢাকাই বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র দিশা হারিয়ে সর্বনাশের শেষ সীমায় উপস্থিত।
ব্যানারে ব্যানারে দৃষ্টি/কু-দৃষ্টি গেলে চকচক করছে সিকিপ্যান্ট পরা শুভশ্রীর চকচকে ঠ্যাং যার পায়ের পাতায় কি যেন লিখছে ওম। কিন্তু এরা কেউ আমাদের দেশের শিল্পী নন। শুভশ্রীর ঐ চকচকে ঠ্যাঙ্গের বিপরীতে কালো আঁধারে ঠিক অতটাই ঘোলাটে এখন বিএফডিসির প্রাঙ্গন। মডেলিং এর নামে সাহসী মেয়েগুলোকে সোসাইটি কলগার্ল বানানো, ভিডিও ভিক্টিমাইজ, এফডিসিতে নায়ক-নায়িকা বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে ইমোশনাল ব্লাকমেইলিং বাংলাদেশের শিল্পখাতের জন্য বহু পুরাতন অশনি সংকেত।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের মত শুশীল আড্ডার কবিরা কবিতা লেখার বদলে যেমন গুলশান, বনানী কিংবা বেইলি রোড থেকে আসা মেয়েদের পেট,পিঠ আর উন্মুক্ত বাহুতে চোখ আটকে পেরেশানিতে আছেন। ওদিকে নাটক, মিউজিক ভিডিও নাকি টেলিফিল্ম আর সিনেমা করলেও পুরষ্কারের সিনেমা নাকি গণমানুষের ঢাকাই সিনেমা কোনটা হবে এটা নিয়ে গ্যাঞ্জাম কমছে না। শেষ অবধি মুড়ি মুড়কির মত ব্যবসা করার দাবি জানাচ্ছে আয়নাবাজি। কিন্তু মাজার বিষয় এই সিনেমার টিকিট বিক্রি শুরু আর আর শেষ কোনদিক থেকে হচ্ছে সেটা এখনও রহস্যাবৃত। আমার তো মনে হয় টিকিটের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সিমেনাটাকে হিট বানানোর চেষ্টা চলছে শুরু থেকেই।
একজন গুলশান-বনানীর শুশীল অভিজাত আয়নাবাজি দেখেছে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে ব্যস শুরু হয়ে গেলো। পরনে পরার প্যান্ট নাই, নাক দিয়ে সর্দি উগলে পড়ছে কিংবা পায়ে পরার চটি নাই সেও এসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস মারে দেখে আসছে আয়নাবাজি। কিন্তু এগুলোর ফলাফল সাকুল্যে একটা ঘোড়ার ডিম। ঐ আয়নাবাজিতে নিষ্পাপ নাবিলার মুখের চাইতে ব্যবসায় সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে চকচকে শুভশ্রীর ঠ্যাং। আর এখানেই কুপোকাত হচ্ছে ঢাকাই সিনেমা যার মুক্তির পথ দেখাবে কে?
কথিত শুশীলরা ভদ্রবেশে দুষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের পেইড কাস্টমার, তাদের বউ-বান্ধবী-মেয়ে-বোন ঠিকই হাফস্কার্ট স্লিভলেস টপ পরে ডিজে পার্টিতে গিয়ে আকণ্ঠ মদ গেলে। তবে বাতেলায় একহাত চওড়া এদের কাছে রিক্সাঅলাদের চলচ্চিত্র অশ্লীল। শেষ পর্যন্ত ধরা খেয়ে যাচ্ছে ঢাকা, ঢুকছে কলকাতা। আর স্বপ্নবিলাসী পরিচালকদের যেমন মাথায় হাত, তেমনি ধামাধরা ধান্ধাবাজরা টিকে যাচ্ছে তেলাপোকার মত। আসুন এসব তেলাপোকাদের চলচ্চিত্রকে আমরা না বলি, হ্যাঁ বলতে শুরু করি সংগ্রামী মানুষের সাহসী চলচ্চিত্রকে। যেখানে জড়িয়ে আছে আমাদের ঐতিহ্য আর বাণিজ্যের শেকড়। সেটাকে অস্বীকার করলে জাতিসত্তাকেই যে অস্বীকার করতে হয়। একটু চিন্তা করে দেখবেন বেজন্মা শুশীল হওয়ার চাইতে আত্মপরিচয় রক্ষায় দায়টা বেশি নয় কি ?