Select Page

শ্রেষ্ঠ সিনেমা হলে কামারের ‘অন্যদিন…’

শ্রেষ্ঠ সিনেমা হলে কামারের ‘অন্যদিন…’

বিশ্বের ‘টপ টেন ফেস্টিভ্যাল লিস্ট’র অন্যতম এবং বৃহত্তম প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব আমস্টারডামের ইডফা’র মূল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে কামার আহমাদ সাইমনের নতুন ছবি ‘অন্যদিন…’ (ইংরেজি টাইটেল ‘ডে আফটার…’)।

১ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টায় আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন ইডফার উৎসব পরিচালক অরওয়া নাইরাবিয়া।

নন-ফিকশন ছবির জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলা উপস্থাপন করার জন্য চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে দুনিয়াজোড়া খ্যাত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ইডফা। তিন শতাধিক শক্তিশালী ও কাব্যিক ছবি দেখানো হয় ১২ দিনের এই উৎসবে, যেখানে টিকেট কেটে ছবি দেখতে আসেন আড়াই লক্ষাধিক দর্শক। সেই ইডফার মূল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে ২০শে নভেম্বর শনিবার প্রাইম টাইম স্ক্রিনিংয়ে রাত নয়টায় বিশ্ব অভিষেক হবে কামার আহমাদ সাইমনের ‘অন্যদিন…’।

আর এই অভিষেক হবে পৃথিবীর সুন্দরতম ৫০টি সিনেমা হলের লিস্টে ১ নম্বর আমস্টারডামের তুসানস্কি থিয়েটারে। এই আয়োজনে সশরীরে উপস্থিত থাকার জন্য ইডফার আয়োজকরা ১৯ তারিখেই আতিথেয়তা গ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কামার আহমাদ সাইমন ও প্রযোজক সারা আফরীনকে।

এই বছরের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে শ্রেষ্ঠ নন-ফিকশন ফিচার ছবির মর্যাদাপূর্ণ পুরষ্কারের দৌড়ে আছে ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানী, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালসহ মোট ২১টি দেশের ১৪টি ছবি। যার মধ্যে কামারের হাইব্রিড ছবি ‘অন্যদিন…’ লড়াই করবে ইউখরেনিয়ান নির্মাতা সার্গেই লজনিতসা, পর্তূগিজ নির্মাতা সুজানা ডি সুজা ডিয়াজ, রুশ নির্মাতা আলিওনা ভন দার হোস্টের মতো আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত নির্মাতাদের নতুন সব ছবির সাথে। ২৫ তারিখের একটি আড়ম্বরপূর্ণ পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এই ফল ঘোষণা করা হবে আমস্টারডামের বিখ্যাত আই ফিল্ম মিউজিয়ামে।

উল্লেখ্য কামার আহমাদ সাইমনের জলত্রয়ীর (ওয়াটার ট্রিলজির) দ্বিতীয় ছবি  ‘অন্যদিন…’ জলত্রয়ীর প্রথম ছবি ‘শুনতে কি পাও!’ আন্তর্জাতিক উৎসব অঙ্গনে বাংলাদেশের একটি আলোচিত ছবি। বিশ্বের এ-ফেস্টিভ্যাল লিস্টের অন্যতম লোকার্নোর ওপেন ডোর্সের উদ্বোধনী ছবি এবং প্রাচীনতম প্রামাণ্য উৎসব ডক-লাইপজিগের উদ্বোধনী ছবি হিসেবে প্রদর্শিত হয়েছে ‘শুনতে কি পাও!’। এই ছবি কামারকে এনে দিয়েছে প্যারিসে গ্রাঁ প্রি, মুম্বাইয়ে স্বর্ণশঙ্খ, শ্রেষ্ঠ সিনেমাটাগ্রাফিসহ আরও অনেকগুলা আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার। আবার জলত্রয়ীর দ্বিতীয় ছবি ‘অন্যদিন…’ এর স্ক্রিপ্টের জন্যই ২০১৬ সালে বিশ্ব চলচ্চিত্র মঞ্চ পিয়াৎজা গ্রান্দার রেড কার্পেট ডিরেক্টরের সম্মাননা পেয়েছিলেন কামার,  সেইসাথে লোকার্নোর ওপেন ডোর্সের শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার এবং আর্তে ইন্টারন্যশনাল প্রাইজ।

এরপরের বছর এই একই স্ক্রিপ্টের জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবের সিনেফন্ডেশনের লা’এতেলিয়ারে এমন এক আয়োজনে কামার নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন, যেখানে কোন নির্মাতা নিজে থেকে আবেদন করতে পারেন না, বরঞ্চ আয়োজকদের বাছাইয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুঁজে খুঁজে নতুন গুণী নির্মাতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

ইডফার ওয়েবসাইটে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে ‘অন্যদিন…’ ছবিটাকে বর্ণনা করতে গিয়ে লেখা হয়েছে ‘ক্যালাইডোস্কোপিক ও গভীর প্রজ্ঞাসম্পন্ন’।

উৎসবের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর সিরীয় বংশোদ্ভুত চলচ্চিত্র নির্মাতা অরওয়া নাইরাবিয়া কামারকে এক ব্যাক্তিগত চিঠিতে লিখেছেন, “তাবৎ দুনিয়া থেকে পাঠানো হাজার হাজার ছবি দেখার পর, বাছাই কমিটি আপনার ‘অন্যদিন…’ ছবিটাকে ইডফার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগের আমন্ত্রণ জানাতে চায়। দুনিয়ার নানান প্রান্ত ঘুরে আসা ছবি থেকে বাছাই করাটা আমাদের জন্যও একটা অভিজ্ঞতা ছিল, যার মধ্যে ‘অন্যদিন…’ সেই অল্প কয়েকটা ছবির মধ্যে একটা যেটা নিয়ে বাছাই কমিটির কারও কোন দ্বিধা ছিল না। আমি ব্যাক্তিগতভাবেও আপনাকে অভিনন্দন জানাতে চাই এত সুন্দর একটা ছবি বানানোর জন্য। যে পরিমাণ কষ্ট, ভালোবাসা আর প্রতিশ্রুতি নিয়ে ছবিটা বানানো হয়েছে, যে সাহস আর মেধার পরিচয় দিয়েছেন আপনি ছবিটা বানাতে – বাছাই কমিটির মতে সেইটা ছবিতেই পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান।”

কামার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, “অন্যদিন’ একটা হাইব্রিড ছবি – এর ১০০% ফিকশন এবং নন-ফিকশন। শুনতে কি পাও!’ শেষ করে ২০১৩তেই শুরু করেছিলাম ‘অন্যদিন…’এর কাজ। শ্যুটিং শেষ করে ২০১৭তে ছবিটা সম্পাদনার টেবিলে রেখে চলে গিয়েছিলাম ‘শিকলবাহা’র শ্যুটিংয়ে। এইবার কোভিডের সুযোগে ছবিটায় আবার হাত দিয়েছিলাম, জুলাইতে সম্পাদনা শেষ করেই জমা দিয়েছিলাম ইডফায়। যদিও আমাদের এখানে ইডফার নাম লোকে একটু কম জানে। কিন্তু প্রথম জমাতেই বৃহত্তম একটা ফেস্টিভালে আমন্ত্রণ পেলাম, টপ টেন লিস্টেড ফেস্টিভ্যালের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ছবি নির্বাচিত হলো, দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ থিয়েটারে বিশ্ব অভিষেকের দাওয়াত পেলাম – একটা ছবির জন্য আর কি চাই! আমার মনে হয় নিজেদের ভাষা আর ভঙ্গী নিয়ে বাংলাদেশসহ গোটা এশিয়ায় আমরা যারা ছবি বানানোর চেষ্টা করছি তাদের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়।”

বাংলাদেশ, ফ্রান্স ও নরওয়ের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘অন্যদিন…’ এর এই খবরে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রযোজক সারা আফরীন বলেন, “এই ছবিটা একটা লিড ফেস্টিভ্যালে যাওয়া দরকার ছিল। এইটা একটা অন্যরকম ছবি, ‘শুনতে কি পাও!’-এর এক্সপেরিমেন্টটা কামার আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এর কোনটুকু ফিকশন আর কোনটুকু নন-ফিকশন সম্পাদনা টেবিলে রাশ দেখেও অনেক সময় আমরা বুঝতে পারিনি। তাই ইডফার মতো একটা টপ টেন ফেস্টিভ্যালের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মেইল পেয়ে প্রথমে চোখে পানি চলে এসেছিল।”


Leave a reply