Select Page

মৌসুমী কেন্দ্রিক ১৭ সিনেমা

মৌসুমী কেন্দ্রিক ১৭ সিনেমা

মৌসুমী দেশের বাণিজিক চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা নায়িকা। বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি তাকে সাহিত্যভিত্তিক চলচ্চিত্রেও দেখা গেছে। কিছু ছবির গল্প তাকে কেন্দ্র করেই/তাকে প্রধান চরিত্র করেই এগিয়েছে। সেসব ছবিকেই মৌসুমীকেন্দ্রিক ছবি বলা যায়। সেই ছবিগুলো নিয়ে এ আয়োজন।

মৌসুমী: নাজমুল হুদা মিন্টু পরিচালিত মৌসুমীর নামেই নির্মিত হয়েছিল এ ছবি। নায়িকার নামে ছবি সেভাবে হয়নি ঢালিউডে, মৌসুমী সেক্ষেত্রে একটি উদাহরণ এ ছবিতে। ছবির গল্প গতানুগতিক ত্রিভুজ প্রেমের হলেও গান ছিল কালজয়ী বিশেষ করে ‘সেই মেয়েটি’ এবং ‘চারিদিকে শুধু তুমি’ গান দুটি। ছবিতে মৌসুমীর বিপরীতে ছিল অমিত হাসান ও নাদিম হায়দার।

দোলা: দিলীপ সোম পরিচালিত এ ছবিটি মৌসুমী-ওমর সানী জুটির প্রথম ছবি। প্রথম ছবিতেই এ জুটি দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। অমর প্রেমের গল্পে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। ছবিতে মৌসুমীর নাম ছিল দোলা। সানীর সাথে প্রেমের পর ধর্মীয় ও পারিবারিক বাধা আসে এবং করুণ পরিণতিতে ছবি শেষ হয়। ছবির ‘তুমি সুন্দরও আমার অন্তরও, তুমি একবার এসে দেখে যাও ভালোবাসার মরণ, স্বপ্নের পৃথিবী থেকে এসো তুমি’ গানগুলো কালজয়ী হয়ে আছে।

লজ্জা: আজিজুর রহমান পরিচালিত এ ছবিটি সুনির্মিত বাণিজ্যিক ছবি। মৌসুমী থাকে নাম ভূমিকায়। পাহাড়ি লোকেশনে ছবিটির দৃশ্যায়ন চমৎকার ছিল। এ ছবির ‘আমার চোখে সে যে ছবি হয়ে ভাসে’ এবং ‘এসো এসো কাছে এসো ভালোবাসা দেবো তোমাকে’ গানগুলো জনপ্রিয়।

বিদ্রোহী বধূ: ইস্পাহানি আরিফ জাহান পরিচালিত লেডি অ্যাকশন ছবি। মৌসুমী ছিল কেন্দ্রীয় চরিত্র। বাপ্পারাজের সাথে বিয়ের পর তার বাড়িতে মৌসুমী নির্যাতিত হয় এবং পরে প্রতিশোধ নেয়া শুরু করে। প্রতিশোধের সময়গুলোতে তার অভিনয় ছিল অনবদ্য। এ ছবির ‘বুকে ধরে রাখব ছবি আঁকব মনে কত আশা’ গানটি জনপ্রিয়।

বাঘিনী কন্যা: মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত লেডি অ্যাকশন ছবি। এ ধারার ছবিতে মৌসুমীর সক্ষমতা আবারো প্রমাণিত হয়েছে এ ছবিতে। প্রথমদিকে পুলিশ ইন্সপেক্টর এবং ঘটনাক্রমে অপরাধীর চরিত্রে অসাধারণ ছিল মৌসুমী।

গরিবের রাণী: ইস্পাহানি আরিফ জাহান পরিচালিত সুনির্মিত বাণিজ্যিক ছবি। ধনী-গরিবের চিরন্তন সামাজিক দ্বন্দ্ব এবং সুন্দর সমাজ গঠনের একটি স্বপ্ন দেখানো হয়েছে এ ছবিতে। ধনীর মেয়ে মৌসুমী ঘটনাক্রমে গরিবের প্রতিনিধি হয়ে যায়। মৌসুমী নাম ভূমিকায় ছিল বিপরীতে ওমর সানী। ছবির ‘তুমি ডাকলেও আসি না ডাকলেও আসি’ এবং ‘ও চাঁদ তুমি দূরে যাও’ গান দুটি কালজয়ী।

রূপসী রাজকন্যা: ফোক ঘরানার বাণিজ্যিক ছবিতেও মৌসুমী ছিল দারুণ। এ ছবিতে মৌসুমী নতুন চরিত্রে অভিনয় করেছিল। বিপরীতে ওমর সানী। এ ছবির ‘চুপি চুপি কথা বলো না’ গানটি জনপ্রিয়।

কাল নাগিনীর প্রেম: শাহজাহান আখন্দ পরিচালিত ফোক গল্পের আরেকটি ছবি। সাপের ছবির একটা মার্কেট আশি/নব্বই দশকে ছিল এ ছবিটি নব্বইয়ের। মৌসুমী তার সাথী ওমর সানীকে সাথে নিয়ে পৃথিবীতে যায় সর্পজগতের অন্য গ্রহ থেকে। পৃথিবীতে তাদের নতুন প্রেমের গল্প রচিত হয়। নাম ভূমিকায় ছিল মৌসুমী।

লাট সাহেবের মেয়ে: ইস্পাহানি আরিফ জাহান পরিচালিত এ ছবিতে মৌসুমী নাম ভূমিকায় ছিল। ধনীর অহংকারী মেয়ে মৌসুমীর স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয় ওমর সানী তারপর ঘটনাচক্রে মৌসুমী চলে যায় সানীর কাতারে এবং সানী মৌসুমীর। ধনীর অহংকারী মেয়ের চরিত্রে তখন মৌসুমীর বিকল্প ছিল না।

আমার প্রতিজ্ঞা: সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ছবি। লেডি অ্যাকশন ছবি। মৌসুমীর স্বাভাবিক চমৎকার পারফরম্যান্স ছিল লেডি অ্যাকশনে। বিপরীতে মান্না।

মিস ডায়না: বাদল খন্দকার পরিচালিত আরেকটি লেডি অ্যাকশন ছবি মৌসুমীর। এ ধরনের ছবিতে মৌসুমীর সক্ষমতার হিসেবে অন্যতম সেরা পারফরম্যান্সের ছবি। চরিত্রে বৈচিত্র্য ছিল।

খায়রুন সুন্দরী: মৌসুমীর জনপ্রিয় ছবির মধ্যে অন্যতম সেরা। ব্যবসাসফলতার দিক থেকেও। এ কে সোহেল পরিচালিত ফোক গল্পের করুণ এ ছবিটি ছিল ব্লকবাস্টার। ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্র খায়রুনে ছিল মৌসুমী। বিপরীতে ফেরদৌস। অসাধারণ অভিনয় করেছে। ‘খায়রুন লো’ কালজয়ী গান ছবির। ছবিটি টলিউডে ‘প্রাণের স্বামী’ নামে রিমেকও হয়েছিল।

মাতৃত্ব: জাহিদ হোসেন পরিচালিত মাস্টারপিস ছবি। পরিচালকের পরিচালনার গুণে ছবিটি অসাধারণত্ব পেয়েছে। মৌসুমী ছিল প্রধান চরিত্রে বিপরীতে হুমায়ুন ফরীদি। ছবিটি বাণিজ্যিক হলেও এটি শিল্পসম্মত অন্যরকম গল্পের বাণিজ্যিক ছবি। একজন নারীর মা হবার স্বপ্নের যে রঙ, রূপ থাকে সেটি ছবিতে মানবিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মৌসুমীর অভিনয় ছিল অনবদ্য।

মেহেরনেগার: পরিচালক মৌসুমীর ছবি। সাহিত্যনির্ভর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গল্প থেকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছে মৌসুমী। ছবিতে ‘দূর দ্বীপবাসিনী, এমনো রাত যেন যায় না বৃথাই’ গানগুলোতে তার অভিনয় চমৎকার।

বিন্দুর ছেলে: মুশফিকুর রহমান গুলজার পরিচালিত আরেকটি সাহিত্যনির্ভর ছবি। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী গল্প থেকে নির্মিত। বিন্দু চরিত্রে ছিল মৌসুমী। নিঃসন্তান বিন্দুর মাতৃত্ব বোধের আবেদন ছবিতে ভালোভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মৌসুমীর মাতৃত্ববোধের অভিনয় এ ছবিতেও দারুণ।

গোলাপি এখন বিলাতে: আমজাদ হোসেন পরিচালিত ছবি। সিক্যুয়েল ছবি ছিল তাঁর ‘গোলাপি’ সিরিজের। তৃতীয় কিস্তিতে গল্পটি বিদেশকেন্দ্রিক হয়ে যায়। এটিতে মৌসুমী ছিল নামভূমিকায়। অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিল শাবনূর।

বাংলার বউ: ফোক গল্পের আরেকটি ছবি। গ্রাম-বাংলার চিরন্তন গল্পে উপভোগ্য একটি ছবি। গাঁয়ের বধূর উপর পারিবারিক নির্যাতন এবং তার প্রতিবাদী হয়ে ওঠার গল্প ছিল। মৌসুমীর প্রতিবাদী চরিত্র অনেক ছিল তার মধ্যে এটি অন্যতম।

এ ছবিগুলো বাদে আরো উল্লেখযোগ্য আছে ‘মোল্লাবাড়ির বউ, মেঘলা আকাশ, দেবদাস’ ছবি তিনটি। ‘মোল্লাবাড়ির বউ’ ছবিতে দুই প্রধান চরিত্রের মধ্যে মৌসুমী একটি অন্যটিতে শাবনূর। মৌসুমী তার চরিত্রে অসাধারণ ছিল। ‘মেঘলা আকাশ’ ছবিতে মৌসুমীকে ঘিরেই ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে তাই অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র তবে বিপরীতে আইয়ু্ব খানও গুরুত্বপূর্ণ তাই সরাসরি কেন্দ্রীয় না মৌসুমী। ‘দেবদাস’ ছবিতে মৌসুমী চন্দ্রমুখী চরিত্রে ছিল যেটি উপন্যাস অনুযায়ী ছবির তৃতীয় প্রধান চরিত্র।

এভাবে মৌসুমীকেন্দ্রিক ছবিগুলোতে মৌসুমীর বৈচিত্র্যময় অভিনয় দর্শক দেখেছে। এ ছবিগুলোই প্রমাণ হয়ে থাকে মৌসুমী দেশের চলচ্চিত্রে অবধারিত একটি অধ্যায়।


মন্তব্য করুন