Select Page

সনদ ছাড়া হিন্দি ছবি প্রদর্শন/ ‘অনন্য মামুনসহ আমদানির সঙ্গে জড়িতদের ধমক দিয়েছি’

সনদ ছাড়া হিন্দি ছবি প্রদর্শন/ ‘অনন্য মামুনসহ আমদানির সঙ্গে জড়িতদের ধমক দিয়েছি’

সেন্সর সনদ হাতে পাওয়ার আগে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হলো বলিউড থেকে আমদানি করা সিনেমা ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস মাহি’। জানা গেছে, সেন্সর সনদ ছাড়াই গত ৩১ মে একাধিক মাল্টিপ্লেক্সসহ ১৪টি হলে মুক্তি পায় ছবিটি।

গত ৩০ মে সেন্সর বোর্ড ছবিটি দেখণে ওই দিন সেন্সর সনদ দেয়নি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্টতে। পরবর্তী সময়ে ২ জুন সেন্সর সনদ দেওয়া হয়।

অথচ এর আগেই ৩১ মে ব্লকবাস্টার, লায়ন সিনেমাস, শ্যামলী সিনেপ্লেক্সসহ দেশের ১৪টি হলে মুক্তি দেওয়া হয় ছবিটি। তবে সেন্সর সনদ হাতে না পাওয়ায় স্টার সিনেপ্লেক্সসহ অনেক হল ওই দিন ছবিটি প্রদর্শন করেনি। এর দুদিন পর সেন্সর সনদ হাতে পেয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সসহ আরও ১০টি হল প্রদর্শন শুরু করে ছবিটির।

২০২৩ সালের সংশোধিত চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনের ১৩ ধারার একাংশে বলা আছে—যদি কোনো ব্যক্তি সার্টিফিকেশন ছাড়া বা বোর্ডের দেওয়া মূল্যায়ন প্রতীক পরিদৃষ্ট হয় না, এমন কোনো চলচ্চিত্র কোনো স্থানে প্রদর্শন করেন বা প্রদর্শনে প্ররোচনা বা সহায়তা দেন, তাহলে এটি হবে একটি অপরাধ এবং এ জন্য তিনি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

সেন্সর সনদ ছাড়া এভাবে ছবি মুক্তির নিয়ম নেই বলে জানান সাবেক প্রযোজক নেতা ও সেন্সর বোর্ডের সদস্য খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘৩০ মে ছবিটি আমরা দেখি। ছবিতে কোনো সমস্যা ছিল না। সেন্সর শেষ হওয়ার পর আমি চলে আসি। পরে শুনেছি, ওই দিন সেন্সর সনদ দেওয়া হয়নি। কিন্তু পরদিন শুক্রবার ছবিটি সনদ ছাড়াই কিছু হলে মুক্তি দেওয়া হয়। এটি চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনের মধ্যে পড়ে না, বেআইনি।’

এ ব্যাপারে যমুনা গ্রুপের (ব্লকবাস্টার সিনেমাস) ডিজিএম জাহিদ হোসেন চৌধুরীও মনে করেন, সনদ ছাড়া এটি মুক্তি দেওয়া ঠিক হয়নি। তবে তিনি বলেন, ‘এখানকার প্রযোজকদের ও পরিচালক অনন্য মামুনের নিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে এটি চালানো হয়েছে। এটি ঠিক হয়নি। তা ছাড়া আমরা প্রথম দিন ওভাবে চালাইনি। প্রথমটি টেকনিক্যাল শো ছিল। আর টেকনিক্যাল শোতে সেন্সর সনদ লাগে না। তবে এরপর কিছু দর্শকের চাহিদার কারণে ওই দিন আরও দুটি শো চালিয়েছি। এযাবৎকালে আমাদের এখানে এমন ঘটনা ঘটেনি। আমি মনে করি, এর দায় প্রযোজক ও আমদানিকারকদের।’

তবে এই কর্মকর্তা মনে করেন, এ বিষয়টি সেন্সর বোর্ডেরও খেয়াল রাখা দরকার। যখন মুক্তির আগের দিন সেন্সর বোর্ড ছবি দেখে, তখন কোনো সমস্যা না থাকলে ওই দিনই সেন্সর সনদ দিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে সেন্সর সনদ নিয়ে পরের দিন ছবি মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা বেগম বলেন, ‘নিয়ম হলো, সেন্সর সার্টিফিকেট পাওয়ার পর ছবি মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু আমদানির এই ছবিটির মুক্তির বেলায় ঠিক হয়নি। যদিও ছবিটিতে কোনো সমস্যা পায়নি সেন্সর বোর্ড। তারপরও সেন্সর সার্টিফিকেট ছাড়া ছবি মুক্তি দিতে হবে কেন? এ কাজটি করার জন্য পরিচালক অনন্য মামুনসহ এই ছবির আমদানির সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, সবাইকে ধমক দিয়েছি আমি। এ কাজ যেন আর কখনোই না হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবারে সিনেমাটি প্রদর্শনীর জন্য সিনেপ্লেক্স থেকে সেন্সর সার্টিফিকেটের ব্যাপারে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। তখনো সনদ তৈরি হয়নি, সেটি আমি তখন বলেছিলাম। যথাসময় সার্টিফিকেট না পাওয়ায় শুক্রবার সিনেপ্লেক্স সিনেমাটি মুক্তি দেয়নি। তারা নিয়মটি মেনেছে।’

তবে ছবিটির আমদানিকারক অনন্য মামুনের উল্টো কথা। তিনি এখন কলকাতা আছেন। ৪ জুন সন্ধ্যা সাতটার দিকে হোয়াটসঅ্যাপে মামুন বলেন, ‘না, সার্টিফিকেট নিয়েই আমরা ছবিটি মুক্তি দিয়েছি।’ কিন্তু ছবি মুক্তি পেল ৩১ মে, সনদ দেখা গেল ২ জুনের। ঘটনা কী? জানতে চাইলে ওই পরিচালক বলেন, ‘না, না, সনদের তারিখ লেখাটি ভুল ছিল। পরে ঠিক করে দিয়েছে সেন্সর বোর্ড।’

কিন্তু তা না হয় হলো, ৩১ মে ছবিটি যাঁরা মুক্তি দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, কোনো সেন্সর সনদ হাতে না পেয়ে আপনার মৌখিক নিশ্চয়তায় নাকি তাঁরা ছবিটি হলে প্রদর্শন করেছেন, এমন প্রশ্নে তখন অনন্য মামুন বলেন, ‘আমি তো দেশের বাইরে এসেছি। একটা কাজে ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলব।’ বলেই দ্রুত ফোন রেখে দেন তিনি। খবর প্রথম আলো


মন্তব্য করুন