‘সাদা সাদা কালা কালা’ ও আরবান ফোক নিয়ে দুই-এক কথা
‘হাওয়া’ সিনেমার ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটার সুরে একটা সহজ ব্যাপার আছে, আনমনে ঠোঁটের ডগায় চলে আসে। ‘আমি যেন কী?’ এই লাইনটাও। যদিও আমি ‘আরবান ফোকের’ ভক্ত নয়, এমনকি ‘ফোক ফিউশনের’ও না। ‘বাংলা’ ব্যান্ডের রমরমা সময়েও তাদের গানগুলো হাস্যকর লাগতো। ফোক বললেও ফিউশন আলাদা করে বলতে হয় না বলে, আমার পূর্বানুমান।
আরবান ফোকের এ ব্যাপারটা হইলো, কমন দু-একটা কথা-সুরের কাঠামো অনুসরণ করে। যেটা ভোক্তাদের খুবই পরিচিত ঠেকে (যেমন; যাও পাখি বলো তারে)। বাট, অরিজিনাল গানগুলা যে জীবন বোধ থেকে আসে, এখানে তেমনটা আসে না। ভাসা ভাসা একটা ঘটনা ঘটে, গানগুলো ভাসা ভাসা। ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই’, ‘ও কালাচান গলার মালা পেট পুড়ের যে তোঁয়ার লাই’ বা ‘গেন্দা ফুল’- জাতীয় গান যেন একটা জীবনই না একটা সমাজকে, সময়কে রিপ্রেজেন্ট করে; আরবান ফোক এখানে একটা ছদ্মবেশের আশ্রয় নেয়। আর ফোক ফিউশনের ক্ষেত্রে পুরো গানের ইতিহাসটা ‘প্রায়’ নাই করে দেওয়া হয়।
বাস্তবতা হলো, এ সব গান ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। নানা ক্লাসে। এটা এ সব গানের গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা। এর একটা কারণ থাকতে পারে, একটা ক্লাসে এটা মর্যাদা উল্লফন আকারে থাকে, আরেকটা ক্ষেত্রে ‘ফোক ফিউশনের’ চটুল জায়গার মর্যাদা পায়, এর কথাগুলো ’ফিউশন’ ভোক্তাদের শ্রেণিগত রুচির। কিন্তু এ সব গান মূলত অর্থহীন, জিজ্ঞাসাহীন ইভেন আর্তিহীন কথার ছড়াছড়ি। পুরোটাই ফেইক। গান শেষে একটা হাসাহাসি হইলেও গানের মর্যাদার কোনো হানি ঘটে না। বা ভাবের বিলয় ঘটে না। এ কারণে ‘বকুল ফুল বকুল ফুল’ জাতীয় গানও ততটা মনে ধরে না। এখানে একটা কিন্তু আছে বলে মনে হয়। এ সবের গানের সুরে এমন একটা ব্যাপার আছে, যেটা মানুষের অন্তর্হিত সুরের কোনো এক জায়গায় টোকা দেয়। শুরুতে যেটারে ‘সহজ’ বলছিলাম। কিন্তু শুধু এটুকু, এর বাইরে যাইতে পারে না। মানে মানুষের স্মৃতি ও অবচেতনকে জাগ্রত করার ক্ষেত্রে তারা অকেজো।
‘সাদা সাদা কালা কালা’র তুলনায় মেজবাউর রহমান সুমনের সিনেমাটাকে ট্রিবিউট করা মেঘদলের ‘এ হাওয়া’ গানটা পছন্দ হইছে। এর গায়ক আবার সুমন নিজেও, আছেন শিবু কুমার শীল। এ গান ‘হাওয়া’ নির্মাণ ও নির্মাতাদের নন্দনকে রিপ্রেজেন্ট করে বলে মনে হয়। তাদের জিজ্ঞাসাগুলোও। গানটা আমার ভালো লাগছে, টানা কয়েকবার শুনছি।
‘হাওয়া’ মুক্তি পাইতেছে ২৯ জুলাই। এর আগে একটা সিনেমার গান ম্যাসিভ হিট এটা বড় ব্যাপার। অনেকদিন বাংলা সিনেমায় এমনটা ঘটে নাই। এক সময় বাংলা সিনেমাকে গান দারুণভাবে টেনে নিয়ে গেছে; এমন অজস্র উদাহরণ ছিল। তাই ছুঁৎমার্গ না রেখে সিনেমায় দরকার মতো গান ব্যবহার করুন।
জাজ মাল্টিমিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশের দেড় হপ্তা হওয়ার আগেই কোটিবারের কাছাকাছি চলে গেছে ‘সাদা সাদা কালা কালা’। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া যুগে একটা গানের জনপ্রিয়তার ভালো নির্ধারক হচ্ছে, কতবার গানটা রিপ্রডিউস বা কাভার হয়ে হাজির হচ্ছে, কারা কারা শেয়ার ও মন্তব্য করছে। সে দিক থেকে ‘সাদা সাদা কালা কালা’ ম্যাসিভ হিটি। বল হয়, ‘সাদা সাদা কালা কালা’ হয়ে ‘হাওয়া’ উড়ুক। হ্যাঁ, ‘হাওয়া’ তো উড়ারই জিনিস; মানে অনেক কিছু উড়ায়াও রাখে।