Select Page

প্রিয়তমা : মিক্সড প্রেজেন্টেশন

প্রিয়তমা : মিক্সড প্রেজেন্টেশন

হিমেল আশরাফের প্রথম ছবি ছিল ‘সুলতানা বিবিয়ানা’। সঙ্গত কারণেই যেকোনো পরিচালক তার প্রথম ছবির তুলনায় দ্বিতীয় ছবি বেটার করতে চায়। দ্বিতীয় ছবি ‘প্রিয়তমা’ প্রেজেন্টেশনের দিক থেকে বেটার হয়েছে।

শাকিব খানকে তার ফ্যানবেজ পরিবর্তনশীল ইমেজে কতটুকু দেখতে চায় তা নিয়ে জিজ্ঞাসা থাকতে পারে তবে নিরপেক্ষ দৃষ্টির দর্শকরা চায় শাকিব পরিবর্তন হোক। লম্বা ক্যারিয়ারে পুরনো দিনের শাকিবকেই অনেক দর্শক বেশি প্রশংসিত করে রাখে তার ডেডিকেটেড পারফরম্যান্সের জন্য। ‘প্রিয়তমা’ ছবির অশীতিপর লুকের পোস্টারে শাকিব ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এটা ভীষণ দরকার ছিল। ডিজিটাল সময়ের শাকিব খান লুকের দিক থেকে যৌথ প্রযোজনার ‘শিকারী’র মতো ছবির পর ‘প্রিয়তমা’য় গুণগত এ পরিবর্তন ছিল। ছবির হাইপ মুক্তির আগ পর্যন্ত ভালো ছিল এই কারণেই।

পরিচালক হিমেল আশরাফ ‘প্রিয়তমা’ ছবিকে মিক্সড প্রেজেন্টেশনে দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন। ছবির নাম শুনে অনেকেই রোমান্টিক ছবি ভেবে নেবে স্বাভাবিকভাবেই কিন্তু এর মধ্যে থ্রিলার ও ট্র্যাজেডির আবহ এনে ছবিটিকে মিক্সড ক্যাটাগরির বানানো হয়েছে। সাইকোলজিক্যাল একটা গেম ছবির শেষের দিকে বেশ ভিন্নতা এনেছে। পরিচালক তার প্রথম ছবির থেকে ‘প্রিয়তমা’ এদিক থেকে এগিয়ে।

স্টোরিলাইন ভালো ছবির। শাকিব খান তার পরিবার নিয়ে ভালো ছিল। হঠাৎ তাদের পারিবারিক ব্যবসাকেন্দ্রিক জটিলতায় পরিবারের ওপর দুর্যোগ নেমে আসে। শাকিব সমাধানের জন্য স্থান বদল করে। তার জীবনে প্রেম ও রহস্যজনক একটি মোড় আসতে থাকে। ছবির ক্লাইমেক্স বাকি ছবির অবস্থান থেকে এগিয়ে থাকবে। 

এই স্টোরিলাইনকে দাঁড় করানোর জন্য যে প্রেজেন্টেশন দরকার সেখানে ছবির প্রথমার্ধ স্লো হলেও গল্পকে দাঁড় করানোর জন্য সেটি কিছুটা ভূমিকা রেখেছে। দ্বিতীয়ার্ধে ছবি গতি ভালোই পেয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধের একসময় ছবিটা সম্পূর্ণ অন্যদিকে টার্ন করেছে।

শাকিব খান নিঃসন্দেহে এ ছবির সেরা পারফর্মার। এন্ট্রি ছিল দুর্দান্ত। তার অভিনয়ের দিকটা ছিল ব্যালেন্সড। সিচুয়েশন ডিমান্ডে ন্যাচারাল অভিনয় করেছে। ছবিতে তার চরিত্রটি বিশ্লেষণের দাবি রাখে পুরো ছবির একাধিক লুক। প্রথমদিকের ঝাঁকড়া চুলের লুক, দ্বিতীয়ার্ধে প্রয়োজনমাফিক কিছুটা পরিবর্তিত লুক এবং শেষের অশীতিপর লুক শাকিবকে ভিন্নভাবে ছবিতে তুলে ধরেছে। অ্যাকশন দৃশ্যে তার দখল বরাবরের মতোই ভালো।

নায়িকা ইধিকা পালকে গানে ন্যাচারাল লাগলেও ছবির প্রথমার্ধে ততটা লাগেনি, তার এন্ট্রিটা ভালো ছিল না তবে চরিত্রের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে তার অভিনয় ভালো হয়েছে। প্রথম ছবি হিসেবে অবশ্য মানা যায়, কাজ করতে করতে ঠিক হয়ে যাবে।

নায়ক-নায়িকার পর ছবিতে শহীদুজ্জামান সেলিমের গুরুত্ব ছিল। তার আঞ্চলিক অ্যাকসেন্টে কথা বলা এবং ভিলেন চরিত্রে শক্তিশালী ব্যাপার ছিল। শিবা সানু, এলিনা শাম্মী, কাজী হায়াতের চরিত্রগুলো প্রয়োজনমাফিক।

গানের মধ্যে প্রিন্স মাহমুদের ‘ঈশ্বর’ ছবির সেরা গান। টাইটেল ট্র্যাক সিম্পল ওয়েতে করা ভালো গান। বাকিগুলো মোটামুটি। বিজিএম ভালো ছিল, সমুদ্রের লোকেশন ছবিতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। ছবিতে কমেডি খুবই দুর্বল ছিল, ক্ষেত্রবিশেষে এটা না হলেও চলত। ওভারঅল প্রেজেন্টেশন আরো ভালো হবার দরকার ছিল।

‘প্রিয়তমা’ হিমেল আশরাফের দ্বিতীয় ছবি হিসেবে যতটা না ভালো হিসেবে থাকবে তার থেকে ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ নায়ক শাকিব খানকে পরিবর্তন করানোর একটা নমুনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে তার ক্যারিয়ারে।

রেটিং: ৭.৫/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন