Select Page

সামাজিক বাস্তবতার সত্যে ‘ভয়াল’

সামাজিক বাস্তবতার সত্যে ‘ভয়াল’

বর্তমান সমাজটাই ভয়াল হয়ে উঠেছে। যে সত্যকে আমরা ভয় পাই জানতে সেই সত্যই দিনশেষে ভয়াল সত্য হয়ে সামনে দাঁড়ায়। সেই সত্যের ছবি ‘ভয়াল’।

বিপ্লব হায়দার নামটি পরিচালনায় প্রথম। প্রথম কাজ সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং হয়। দর্শক কিভাবে নেবে এটাই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে বিপ্লব হায়দার পাশমার্কই পাবেন।

ছবির গল্প সহজ। পাহাড়ি জনপদের এক মেয়ে তার স্বাভাবিক জীবন থেকে হঠাৎ সামাজিক বাস্তবতার শিকার হয় এবং এর জন্য দায়ী কে সেই প্রশ্ন খোঁজাই ছবির গল্প। বাস্তবতাটি কি সেটি দর্শক ছবি দেখে জেনে নেবে।

এখনকার বেশিরভাগ ছবির ক্ষেত্রেই ফার্স্ট হাফ স্লো দেখা যায় কিন্তু এ ছবির ক্ষেত্রে সেকেন্ড হাফ স্লো ছিল। ছবির যে গল্প এটিকে তুলে ধরতে বেশি সময় লাগার কথা না। পরিচালক ছবির দৈর্ঘ্যে হয়তো পূর্ণদৈর্ঘ্যেই রাখতে চেয়েছেন কিন্তু তাতে কিছু অপ্রয়োজনীয় সিকোয়েন্স তৈরি হয়েছে যেগুলো ছবিতে অতটা দরকার ছিল না। সিচুয়েশন বা ইমোশন তৈরি করতে কিছু পারফেক্ট সিকোয়েন্সই যথেষ্ট। স্টোরি টেলিং-এ সময়টা লম্বা হয়েছে কিংবা ক্লাইমেক্সে সত্যিকার দায়ী ব্যক্তি পর্যন্ত যেতে দর্শককে বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে।

তবে ছবির কারিগরি দিক বেশ স্ট্রং ছিল। বিশেষ করে সিনেমাটোগ্রাফি চোখে লেগে থাকার মতো। মৌলভীবাজারের সীমান্ত অঞ্চলের চোখ জুড়ানো পাহাড়ি লোকেশন ছবিটিকে সৌন্দর্য দিয়েছে। বিজিএমও সিচুয়েশন অনুযায়ী পারফেক্ট। কোথায় কোন শট কিভাবে নিলে দর্শকের ভালো লাগবে পরিচালকের সে দক্ষতা ফুটে উঠেছে। বাণিজ্যিক ছবির ভাষা সম্পর্কে তার ধারণা ভালো আছে। তবে পরের ছবিতে অবশ্যই ছবির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী যথাযথভাবে গল্প বলার জন্য তাঁর প্রতি আহবান থাকবে।

অভিনয়ে ইরফান সাজ্জাদ কোমল ও কঠোর দুই ভূমিকাতেই সমানভাবে স্বচ্ছন্দ। আইশা খান ‘আহত ফুলের গল্প’-র মতো এ ছবিতেও ন্যাচারাল পারফর্মার। গোলাম ফরিদা ছন্দা মায়ের চরিত্রে বেশ ভালো তবে আইশার বাবার চরিত্রের অভিনেতার চিৎকারসর্বস্ব অভিনয় ছিল। নেগেটিভ রোলে বরাবরের মতোই লুৎফর রহমান জর্জ দুর্দান্ত, তাঁর চোখ কথা বলে।

গানের মধ্যে মাহতিম সাকিবের ‘তোমার প্রেমে পড়ে’ সুন্দর সংযোজন।

‘ভয়াল’ সামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরা এবং সচেতনতা তৈরির জন্য একটি ভালো প্রচেষ্টার ছবি হয়ে উঠেছে। এটাই এর প্রাপ্তি।

আলোচনার ইতি টানতে টানতে যে সংলাপটি সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেটা বলি :

বকুল, জীবনে দুটো জিনিস কখনো মিস করতে নেই। এক, বাড়ি ফেরার শেষ ট্রেনটা দুই, যে তোমাকে ভালোবাসে তাকে।

রেটিং – ৬.৫/১০


About The Author

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

Leave a reply