সালতামামি ১৯৯১: বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের বছরে ১৫টি হিট
১৯৯১ সালে ঢালিউডে ৬৪টি সিনেমা মুক্তি পায় বলে জানানো হয় জনপ্রিয় সিনে পত্রিকা চিত্রালীর সালতামামিতে। এর মধ্যে একটি ছিল যৌথ প্রযোজনার, ‘লেডি কমান্ডো’। এই বছরে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিলেও যথেষ্ট সংখ্যক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের দুই বছরের তুলনায় ধারাবাহিকভাবে কমে এসেছিল সিনেমা মুক্তি। ১৯৮৯ সাল ও ১৯৯০ সালে মুক্তি পায় যথাক্রমে ৭৮ ও ৭০টি চলচ্চিত্র। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, গত দুই বছরের তুলনায় মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেলেও ইন্ডাস্ট্রির কর্ম-চাঞ্চল্য কমে এসেছে এমনটি বলা যাবে না।
মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা কমে আসার প্রধানতম কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যদিও বিগত বছরের মত রাজনৈতিক অস্থিরতা ততটা ছিলনা। কিন্তু এপ্রিল-মে ও অক্টোবর মাসের জলোচ্ছাস এবং বন্যা চলচ্চিত্র ব্যবসায় দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। উল্লেখিত দুর্যোগ সময়ে অনেক নির্মাতা প্রস্তুতি নিয়েও ছবি মুক্তি দিতে পারেননি।
আরো বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট থাকলেও চলচ্চিত্র ব্যবসা বিগত বছরের তুলনায় খারাপ হয়নি। মুক্তিপ্রাপ্ত ৬৪টি ছবির মধ্যে ১৫টি ছবি হিট পর্যায়ের ওপরে ব্যবসা করেছে। এর মধ্যে ‘চাঁদনী’ বিগত সময়ের ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র ব্যবসার রেকর্ড ভাঙতে না পারলেও উল্লেখ করার মতো ব্যবসা করেছে। তার চেয়ে বড় কথা, একেবারে নতুনদের নিয়ে তৈরি করা ছবিটি চলচ্চিত্রশিল্পে তারকানির্ভরশীলতার ওপর আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে। চাঁদনীর পর এখন অনেকেই নতুনদের নিয়ে ছবি করছেন অথবা তেমন ছবি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এই বছরের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যবসাসফল ছবিগুলোর মধ্যে অধিকাংশই সোশ্যাল অথবা সোশ্যাল অ্যাকশান ছবি। দুটি লোক ছবি ভালো ব্যবসা করলেও আলোচিত বিষয়ে রূপান্তরিত হতে পারেনি। হিট পর্যায়ের ওপরে ১৫টি ছবি বাদ দিলেও অধিকাংশ ছবি অ্যাভারেজ ব্যবসা করতে সক্ষম হয়েছে।
সিনে ব্যবসার মূল্যায়নে চিত্রালী প্রতিবেদক বলেন, চলচ্চিত্রশিল্পের ব্যবসা গড় পর্যায়ে হওয়াতে একটা জিনিস প্রমাণিত হয়েছে, এ বছর ভিডিও সংকট নির্মাতারা অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।
একই বছর ইংরেজি সিনেমা ভালো করেছে, এমনকি মফস্বলে ছড়িয়ে পড়ে বলেও জানানো হয় সারতামামিতে। বলা হয়, তুলনামূলকভাবে গত বছর ইংরেজি ছবির ব্যবসা অনেক ভালো হয়েছে। আগে যেখানে জেলা শহরগুলো, বাইরে ইংরেজি ছবি চলতোই না গত বছরে দেখা গেছে উপজেলা ছাড়িয়েও ইংরেজি ছবি চলেছে। মফস্বলের দর্শকরাও এখন স্থানীয় ছবির মতো আগ্রহ নিয়েই বিদেশী ছবি দেখছেন।
বছর শুরু হয়েছিল নবাগত পরিচালক শাহাদাত খানের ‘অকৃতজ্ঞ’ মুক্তির মাধ্যমে। এছাড়া আরো আট চিত্রপরিচালকের আবির্ভাব ঘটেছে। তারা হলেন আয়াত আলী পাটোয়ারী, হোসেইন আনোয়ার, কমল সরকার, বিমল রানা, রানা নাসের, বদরুল আলম বাবুল, মনতাজুর রহমান আকবর ও শফিউল আজম।
নায়কদের মধ্যে সর্বাধিক ছবি মুক্তি পেয়েছে ইলিয়াস কাঞ্চনের। ১৪টি। ছবিগুলো হচ্ছে- অকৃতজ্ঞ, বাদশা ভাই, রঙীন মালকা বানু, শ্বশুর বাড়ী, সম্মান, রাজার মেয়ে বেদেনী, দিলরুবা, আয়না বিবির পালা, ন্যায় যুদ্ধ, অচেনা, লটারি, স্ত্রীর পাওনা, বাপবেটা ৪২০ ও দয়া মায়া। কাঞ্চনের পরেই রয়েছেন আলমগীর ও জসীম। তাদের ১১টি করে ছবি মুক্তি পেয়েছে।
নায়িকাদের মধ্যে সর্বাধিক ছবি মুক্তি পেয়েছে চম্পার। ১২টি। ছবিগুলো হচ্ছে- বাদশা ভাই, গর্জন, সন্দেহ, রঙীন মালকা বানু, কাশেম মালার প্রেম, দিন মজুর, অচেনা, লটারি, টপ রংবাজ, বাসনা, বাপবেটা ৪২০ ও পদ্মা মেঘনা যমুনা।
*চিত্রালীর প্রতিবেদনটি সংগ্রহ করা হয়েছে চলচ্চিত্র বিষয়ক একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে।